তৃতীয় মত: ওয়াজ ও সমালোচনা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ১৯ ২০২০, ২২:৩১

হুসাইন আহমদ মিসবাহ

দোষে-গুণে মানুষ। নবীগণ ছাড়া কেউ ভুলের উর্ধ্বে নয়। আমরা যাকে ভাল মনে করি, তার মাঝে কিছু খারাপ গুণ থাকে। আবার যাকে খারাপ মনে করি, তার মাঝেও কিছু ভালো গুণ থাকে। যার মাঝে ভালগুণ বেশি তাকে ভালো, আর যার মাঝে খারাপগুণ বেশি তাকে খারাপ বলা স্বভাবজাত। শতভাগ ভালো গুণের অধিকারী একমাত্র আম্বিয়ায়ে কেরাম আর শতভাগ খারাপ গুণের অধিকারী একমাত্র ইবলিস।

কারো মাঝে খারাপ কিছু দেখলে তাকে সাধ্যানুযায়ী যথারীতি শুধরানোর চেষ্টা মহৎগুণ। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, সেটা যেন গিবতের পর্যায়ে না যায়। কারণ গিবতের পর্যায়ে গেলে সেটা মহৎ নয়, বরং হারাম হয়ে যাবে।

চলমান ওয়াজ মাহফিলে একজন বক্তা ঘন্টা, দেড় ঘন্টা বা তার চেয়েও বেশি সময় কথা বলেন। এই দীর্ঘ সময়ের কথায় ‘স্লিপ অব মাউথ’ হতেই পারে। সে ব্যাপারে বক্তাকে যথারীতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা ইসলামের বিধান। কিন্তু তার জন্যে স্থানে অস্থানে আলোচনা বা ওপেন হাউজ কিংবা ওয়াজ মাহফিলে সমালোচনা ঠিক নয়। এই পর্যায়ের আলোচনা-সমালোচনা গিবতের অন্তর্ভুক্ত কি না, সে ফায়সালা দেবেন সম্মানিত উলামায়ে কেরাম। তবে এর মাধ্যমে আম জনতার মাঝে আলেম সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হ্রাস পাচ্ছে। ইসলাম ও আলেম বিদ্ধেষীরা ইস্যু পায়।

মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মাওলানা মিজানুর রহমান আযহারী। আমাদের দৃষ্টিতে এই চারজনই ইসলামের এক একটি পাওয়ার। সবারই আছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। আবার সবার পিছনেই আছে কিছু সমালোচনা। মাওলানা ওলীপুরীর অনেক বক্তব্য  আমাদের চিন্তা-চেতনার সাথে মিলেনা। অনেক সময় তিনি বিতর্ক মাহফিল আর ওয়াজ মাহফিলকে এক করে ফেলেন। যেগুলোকে একটি মহল ফেৎনার ওয়াজ আখ্যায়িত করে। মাওলানা মামুনুল হক সর্বদা বিপ্লবী সূরে কথা বলেন। সর্বদা, সর্বত্র বিপ্লবী সূর গুণীজন পছন্দ করেন না। এমনকি এ ব্যাপারে মামুন সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলে জানান, ” তিনি নিজেও এটা চান না, কিন্তু বয়ানের সময় নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেন না।” সেটা হতেই পারে, সবার তবিয়ততো আর এক নয়। মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, তিনি মোটা অংকের টাকা চুক্তি করে বয়ানে আসেন। অগ্রিম টাকা নেন। যে “চুক্তি” ও বুকিংমানিকে হক্কানী উলামায়ে কেরাম ভালো চুখে দেখেন না। মাওলানা মিজানুর রহমান আযহারী। যার অনেক বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি থেকে আজহারী সাহেব রুজু করেছেন। ক্ষমা চেয়েছেন। রুজু করার পরও সে ব্যাপারে কথা বলা, মাঠ গরম করা উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

মাওলানা ওলীপুরী তাঁর বয়ানে ইঙ্গিতে সিদ্দিকী সাহেবদের সমালোচনা করেছেন। গলাকাটা ইস্যু…..। সিদ্দিকী সাহেবদের পক্ষ্য থেকে বয়ানে জবাবী সমালোচনা করা হয়েছে। আবার সিদ্দিকী সাহেব বয়ানে আজহারীর সমালোচনা করেছেন। আজহারী ভক্তরা তারও জবাবী সমালোচনা করেছেন। তবে চমৎকার জবাব দিয়েছেন মাওলানা আজহারী। তিনি তার প্রতি সিদ্দিকী কঠোর সমালোচনা জবাবে, সিদ্দিকী সাহেবের ব্যাপারে খুবই ভাল মন্তব্য করেছেন, সুন্দর ভাষায় প্রসংশা করেছেন। তাই এই বিষয়ে অবশ্যই আজহারী সাহেব ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সমালোচনা জবাব আলোচনা দিয়ে দেয়টাই নবী সা. এর আদর্শ। একমাত্র আজহারীর মন্তব্য ছাড়া আর কারোর মন্তব্যই কাম্য নয়। এই মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়া আসা উচিৎ। নতুবা ভবিষ্যৎ ভালো নাও হতে পারে।

পরিশেষে একজন আল্লাহর ওলীর ঘটনা বলেই ইতি টানছি। সরকারের কোন কাজের প্রতিবাদের জন্য এই আল্লাহর ওলী সবাইকে মাদরাসা অফিসে জমায়েত করেছিল। বৈঠক শুরুর পূর্বে অফিসে চলছিল সরকারের সমালোচনা। আল্লাহর ওলী ছিলেন নিরব। উনার নিরবতার কারণ জানতে চাইলে তিনি রাগত সূরে আক্ষেপের সাথে বলেছিলেন, “একটি মহৎ উদ্দেশ্যে আমি সবাইকে সমবেত করেছি। আর জমায়েত হয়েই আপনারা সবাই সরকারের গিবত করে যাচ্ছেন?” উপস্থিত সবাই হতভম্ব! হুজুর বলেন কী? আজতো সবাই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য জমায়েতই হয়েছি। অথচ হুজুর এটাকে গিবত বলছেন! তাহলে আমাদেরকে কেন ডেকেছেন? তারপর হুজুর সবার প্রশ্নের জবাবে বলেন, “ঘোষণা দিয়ে রাজপথে সরকারের অনিয়মগুলো তুলে ধরা নাগরিক অধিকার, আর আড়ালে-আবডালে, ঘরে-অফিসে বসে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা গিবতের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! আমরা কি এভাবে গভীরে যেতে পারিনা!?

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।