তসলিমা নাসরীনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ‘ইসলাম বিদ্বেষ ‘র অভিযোগের মামলায় চার্জশিট

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

অক্টোবর ১৪ ২০২১, ২৩:৫৭

ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশী লেখক তসলিমা নাসরীন-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে ‘ইসলাম বিদ্বেষ ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া’র অভিযোগ করে দায়ের করা একটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিটিটিসি) ইউনিট।

অভিযুক্ত অন্য দু’জন হলেন উইমেনচ্যাপ্টার ওয়েবসাইটের সম্পাদক সুপ্রীতি ধর এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সুচিস্মিতা সিমন্তী।

ওই একই ওয়েবসাইটের উপদেষ্টা লীনা হককে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাজমুল নিশাত গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “তদন্ত করে আমরা তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছি। আর নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় একজনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সেটাই চার্জশিটে বলেছি। এখন আদালত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”

২০১৮ সালের এপ্রিলে মামলাটি করেছিলেন মাসিক আল বাইয়্যেনাত পত্রিকার সম্পাদক মুহম্মদ মাহবুব আলম।

তার আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, ‘ইসলাম বিদ্বেষ ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ’ উত্থাপন করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিলো।

“পুলিশ মামলায় চার্জশিট দিয়েছে, এখন আদালতে অভিযোগ গঠনসহ অন্য প্রক্রিয়া শুরু হবে,” যোগ করেন তিনি।

মামলার অভিযোগে যা বলা হয়েছিলো

মুহম্মদ মাহবুব আলম ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় পিটিশন মামলাটি দায়ের করেছিলেন, যাতে তসলিমা নাসরীন, সুপ্রীতি ধর, সুচিস্মিতা সিমন্তি এবং লীনা হককে আসামি করা হয়েছিলো।

এই মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে “প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা কাহিনী তৈরি করে এসব ব্যক্তিরা ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিপ্রায়ে লিপ্ত আছে”।

অভিযোগে বলা হয়, ফেসবুকে “ধর্ষকের কাছে নারীর কোন ধর্ম নাই” শিরোনামে লেখা একটি পোস্টে তসলিমা নাসরীন পয়গম্বরদের নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন এবং তার লেখাটি উইমেন চ্যাপ্টার নামক ওয়েবসাইটটিতে প্রকাশ করা হয়েছিলো।

“আসামীগণ সকলে এদেশের ধর্মপ্রাণ নারী সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার একই সাধারণ উদ্দেশ্য পূরণ কল্পে তাহাদের ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে ইসলাম বিদ্বেষী এসব পোস্ট করিয়া থাকে। বাদী/সংবাদদাতা একজন ধার্মিক মুসলিম এবং আলেম হওয়ায় এসব ইসলাম বিদ্বেষী পোস্ট পড়িয়া তাহার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে,” অভিযোগে বলা হয়।

এতে আরও বলা হয়, বাদী তাদের শেয়ার বা পোস্ট করা আরও কিছু ইসলাম বিদ্বেষী পোস্ট দেখেছেন।

মামলাটি ট্রাইব্যুনালে দায়েরের পর ট্রাইব্যুনাল ঢাকার শাহজাহানপুর থানাকে মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্তের নির্দেশ দেন।

লেখক তসলিমা নাসরীন – নব্বইয়ের দশকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল – বর্তমান ভারতে বসবাস করছেন। তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আদালতে অভিযোগপত্র দায়েরের পর তার পক্ষ থেকে এখনও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে সুপ্রীতি ধরও বিদেশে বসবাস করেন। আদালতে অভিযোগপত্র দেয়ার পর তিনি তার ফেসবুক পাতায় অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য না করে জানিয়েছেন, “যেহেতু ‘আসামীপক্ষ’ দেশের বাইরে, তাই চার্জশিটে পুলিশ ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে”। সূত্র: বিবিসি