তথাকথিত উদারতা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ০৬ ২০১৯, ০২:০৬

আবদুল্লাহ আল ফারুক:

দারুল উলূম দেওবন্দে দাওরায়ে হাদিসের পর অনেকগুলো তাখাসসুস (অনুষদ) রয়েছে। উলুমুল হাদিস, ইফতা, তাখাসসুস ফিল ইফতা, আরবি সাহিত্য, তাফসির, ইংরেজি, কম্পিউটার, সাংবাদিকতা ইত্যাদি।
আপনি পৃথিবীর যত বড় ইসলামিক ইউনিভার্সিটি কিংবা জামিয়া থেকে পড়াশুনা করে আসুন না কেন, কখনই সেসব অনুষদে সরাসরি ভর্তি হতে পারবেন না। তার আগে আপনাকে অবশ্যই দারুল উলূম দেওবন্দের দাওরায়ে হাদিসে ভর্তি হয়ে পুরো বছর নিয়মিত ছাত্র হিসেবে সবগুলো ক্লাস করে, বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রতিটি অনুষদের আবশ্যক ভর্তিযোগ্য নম্বর সংগ্রহ করতে হবে।
২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষে আমি যখন দারুল উলূম দেওবন্দে পড়ি তখন উসতাযে মুহতারাম মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরি হাফিযাহুল্লাহ আমাদেরকে তিরমিযি শরিফ প্রথম খণ্ড পড়াতেন।
একদিন তিনি আলোচনার একপর্যায়ে বলেছিলেন, “কেন দারুল উলূম দেওবন্দে কোনো তাখাসসুসে পড়তে হলে সবার আগে দাওরায়ে হাদিস যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে?
হযরত বলেন, ‘দারুল উলূম দেওবন্দ একটি মাসলাক ও মাশরাবের নাম (বিশেষ চিন্তাচেতনা ও মতাদর্শের বাহক)। দারুল উলুম দেওবন্দের স্নাতক হতে হলে তাকে অবশ্যই সেই চিন্তাচেতনা ও মতাদর্শের অধিকারী হতে হবে। দাওরায়ে হাদিসে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে হাদিসের আলোকে সেই মাসলাক ও মাশরাবের শিক্ষা দেওয়া হয়। কাজেই তা ধারণ না করে কোনো শিক্ষার্থীর তাখাসসুসাতে পড়ার সুযোগ নেই।”

শুধু এতটুকুই নয়; যে কেউ হুট করে এসে দারুল উলূম দেওবন্দের দাওরায়ে হাদিসেও ভর্তি হতে পারে না।
তার জন্যে তাকে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর ১. হাদিস ২. ফেকাহ ৩. আকাইদ ৪. উসুলে তাফসিরের ওপর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এরপর ৫ম স্তরে এসে কুরআন কারিমের ৩০তম পারা মুখস্থ থাকার পাশাপাশি তাজভিদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে হবে।
শুধু এতটুকুই নয়, তার চুল, দাড়ি, পোশাক শতভাগ দারুল উলূম দেওবন্দের ঐতিহ্যের অনুগামী হতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সে ভর্তির ফরম নেওয়ারই যোগ্য বিবেচিত হবে না।
এর বাইরে আরো অনেকগুলো শর্ত রয়েছে। পুরোটা বলার সুযোগ এখানে নেই। আমি লিংকে দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি হওয়ার ৩২ পাতার উরদু বইয়ের পিডিএফ দিচ্ছি। সেটা পড়লে সব তথ্য জলবৎ সহজ হয়ে বুঝে আসবে।

এখন যারা আমাদেরকে হাইয়াতুল উলইয়ার পরীক্ষায় যদু-মধু-কদুকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন, এবং এর প্রতিবাদ করলে উদারতার ইয়া লম্বা সবক শেখাচ্ছেন, তারা কি সত্যিকার অর্থে কওমি মাদরাসার নীতিবোধ থেকে নসিহাহ উপুড় করে ঢালছেন?
তাদের এসব বস্তাপঁচা লেকচার কি দেওবন্দিয়্যাতের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়?
তারা জেনে বলুক, বা অজ্ঞাতে বলুক, তারা কি পরোক্ষভাবে কওমি মাদরাসাকে আলিয়ার আত্মপরিচয়হীন পথে ঠেলে দিচ্ছেন না?

শুধু এতটুকু নয়, যোগ্য নেগরানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় জামিয়াগুলোকে আলাদা করে রেখে, এর বাইরের অসংখ্য দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন জামিয়া, তাখাসসুসাত কেন্দ্রিক মারকায-বুহুস ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদরাসাগুলোকে দারুল উলূম দেওবন্দের উক্ত মানদণ্ডের আলোকে যাচাই করে দেখুন, তারা কি ভর্তির ক্ষেত্রে উপরের শর্তগুলো অনুসরণ করে?
দারুল উলূম দেওবন্দের শত বছরের অর্জন, আত্মত্যাগ, ও জাতীয় ভূমিকার ইমেজ কাজে লাগিয়ে আজ সারা দেশে যেসব কওমি মাদরাসা গড়ে ওঠেছে, তারা দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতি ও আদর্শ কতটুকু অনুসরণ করছে?
সেগুলোর ভেতরের পরিবেশ, নৈতিকতার অনুসরণ, দেওবন্দিয়্যাতের ঐতিহ্যের অনুগমনের বিষয়গুলো যাচাই করা কি আল হাইয়াতুল উলইয়ার দায়িত্ব নয়?

আপনি যদি এ প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনই না খোঁজেন তাহলে বলুন, আর কত বিব্রতকর শিরোনামের বিষয়বস্তু হওয়ার পর আপনি সচেতন হবেন?