ঢাবি নিয়ে আমার স্মৃতি 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ০১ ২০২১, ১৯:০০

মাহবুবুর রহমান তালুকদার: ২০০২-০৩ সেশনে ঢাবিতে খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দেই। মেধাতালিকায় ৬৪ হয়েছিলাম। ইচ্ছা ছিল ইংরেজি পড়ব, কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইংরেজিতে ২০০ নম্বর না থাকলে ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হওয়া যাবে না— এ উদ্ভট পলিসির কারণে তারা আমাকে ইংরেজি দেন নি। দ্বিতীয় চয়েস ছিল অর্থনীতি। আলিমে অতিরিক্ত বিষয় ছিল অর্থনীতি। এবং ২০০ নম্বর ছিল তাতে। একারণে আমাকে অর্থনীতিতে ভর্তির সুযোগ দেয়া হল।

আমার হল এটাচম্যান্ট ছিল হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হল। আমি তখন সিলেটে দরগাহ মাদরাসায় পড়াই। এদিকে ইংরেজি না পাওয়ায় মন খারাপ। শাবিতে তখনো এডমিশন টেস্ট হয় নি। বছরের শেষদিকে সম্ভবত নভেম্বরের দিকে শাবিতে এডমিশন টেস্ট দিলাম। দু’দিন পর জানলাম আমি খ ইউনিট মানবিকে ২য় হয়েছি। সেখানে ইংরেজিতে পড়ার সুযোগ পাওয়ার পর আর ঢাবিতে কন্টিনিউ করি নি।

আমি জানতাম না, ভর্তি হতে গিয়ে হল কেন্দ্রিক অনেক কাজও নাকি করতে হয়। আমার প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল ইংরেজি যখন হয় নি, তখন পরের বছর ঘ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে আইনে ভর্তি হব। দু’তিন মাস পর যখন গেলাম, আমার নাম দেখলাম নোটিশ বোর্ডে, আমার কী না কী যেন করতে হবে। অর্থনীতি বিভাগের অফিসে লাবু ভাই একজন ভাই কাজ করতেন। তিনি অর্থনীতি নিয়ে পড়া কন্টিনিউ করার উৎসার দিলেন। তিনি জানালেন, ভাল রেজাল্ট করলে ডিপার্টমেন্ট থেকেই বড় স্কলারশীপ দেয়া হয়। বাইরেও স্কলারশীপে পড়তে যাওয়া যায়।

হাজী মুহামমদ মুহসীন হলে গেলাম। তখন হল ছাত্রদলের শাখা/ না কোন শাখার দায়িত্বশীল ছিলেন হবিগঞ্জের দুলাল ভাই নামে একজন। তার সাথে যোগাযোগ কপলে তিনি হল অফিসে নিয়ে গিয়ে বাকী কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ বাতলে দিলেন।

বাই দিস টাইম, দু’বার ভর্তি সংক্রান্ত কাজে সিলেট থেকে ঢাবি গিয়েছি। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, দু’বারই আমি মুহসিন হলে দুই ভিন্ন রুমে যাদের গেস্ট হয়ে থেকেছি, তাদের উভয়ের নামই মাহবুব। কী কাকতালীয় মিল। এক মাহবুব ভাই পড়তেন সমাজকর্মে। শিবির/ ফুলকুঁড়িতে কাজ করতেন। শিল্পী ছিলেন সম্ভবত। খুউব আন্তরিক ও বিনয়ী ছিলেন। আমাকে কাঁটাবন মসজিদে জুমআয় নিয়ে গিয়েছিলেন।

আরেক মাহবুব ভাই পড়তেন সমাজবিজ্ঞানে। দেখতাম তিনি ফটোস্ট্যাট করা নানান নোটস পড়ছেন। সামনে নাকি তার ফাইনাল পরীক্ষা। তিনি তাবলীগ করতেন।

পরিচয় হয় গালিব ভাই নামে একজনের সাথে। জানালেন, তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজের সাবেক ছাত্র। তিনি আমাকে বারবার বললেন, মাওলানা, আপনি ঢাবি টাবি ছেড়ে মাদরাসায় খেদমত করতে থাকেন। আর আপনি মাদরাসা পড়ে অর্থনীতি পড়তে এসেছেন— তা আপনার জন্য খুব কষ্টকর হবে। মনে আছে, তিনি বলেছিলেন, চোখের পানি নাকের নাকি এক হয়ে যাবে। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম।

এখানেই আমার ঢাবি জীবনের ইতি ঘটল!