ড. ইউনূসের দুর্নীতি বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ০৫ ২০১৯, ২০:৩৯

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের (জিটিটি) বিরুদ্ধে উঠা শত কোটি টাকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুদকের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, ২৯ জুলাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের (জিটিটি) বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উল্লেখ করে একটি চিঠি আসে। এ চিঠিটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে সংস্থাটি।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘‘গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ট্রাস্টি। প্রতিষ্ঠানটিতে শত কোটি টাকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম চলেছে। গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের (জিটিটি) সম্পদ ব্যাবস্থাপনা বিভাগের সাবেক বিভাগ প্রধান ব্যারিস্টার ফাইয়াজ বিন হাসান ভূয়া ও সরকারি জমি ক্রয় দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যা ধরা পড়ার পরও রহস্যজনক কারণে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে চলে যেতে দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, জিটিটি’র সিইও আশরাফুল হাসান (যিনি একই সাথে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক) জিটিটির জমি কেনা ও যাবতীয় নির্মাণ সংক্রান্ত কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা। ফাইয়াজ হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে আশরাফুল হাসানের উপস্থিতিতে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়।

এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও দীর্ঘদিনেও সেই তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ‘‘জিটিটির নির্মাণ বাস্তবায়ন বিভাগ প্রধান জহিরুল ইসলাম খান সংস্থার সিইও আশরাফুল হাসানের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তারা যোগসাজশ করে কয়েক হাজার কোটি টাকার নির্মাণ প্রকল্প থেকে ভুয়া বিলের মাধ্যমে বাজার দরের চেয়ে বেশি মূল্য দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। পাশাপাশি আশরাফুল হাসান পুরস্কার হিসেবে জহিরুল ইসলামকে নজিরবিহীনভাবে সহকারী ব্যবস্থাপক পদ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ৪টি পদোন্নতি দিয়ে উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে বসিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিয়ম বহির্ভূতভাবে তাকে ৪৫ লাখ টাকার একটি নতুন গাড়িও দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ পদোন্নতির সাথে সাথে তাকে আরও একটি নতুন গাড়ি দেয়া হয় যার মূল্য ৭০ লাখ টাকা। তাদের এমন কাজের প্রতিবাদ করায় বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। প্রকৌশলী আসাদ এসব বিষয়ে অবগত যিনি জহিরুল ইসলামের ডানহাত বলে চিঠিতে অবহিত করা হয়।’’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘‘জিটিটি সরকারের কয়েক শত কোটি টাকার ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে। যা বিচারাধীন এবং এনবিআরে ঘুষের মাধ্যমে তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। এছাড়া সামাজিক কনভেনশন সেন্টার নামে একটি কনভেনশন হলে ওয়াইফাই সংযোগ স্থাপনের জন্য ৮০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর দায়িত্বে ছিলেন প্রশাসন বিভাগ প্রধান মনজুর আহমেদ। এছাড়া গাড়ি মেরামত ও জিনিসপত্র ক্রয়ের নামে মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়ে চলেছেন তিনি।

সম্প্রতি আইটি বিভাগ প্রধান ফরহাদ শহীদকে বিনা নোটিশে বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ তিনি জিটিটির নতুন নির্মাণাধীন ভবনে প্রায় কোটি টাকার আইটি সংক্রান্ত কাজের জন্য অযোগ্য ঠিকাদার নিয়োগে সিইও আশরাফুল হাসানের বিরোধিতা করেছিলেন। এই আশরাফুল হাসানকেও ড. ইউনূসের ‘অত্যন্ত পছন্দের মানুষ’ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে সামাজিক ব্যবসার নামে ১০টি এনজিও এবং ২ জন ব্যক্তিকে কয়েক কোটি টাকা দেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে আত্মীয়করণের ছড়াছড়ি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের দুর্নীতির অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান গত ২৭ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন তথ্য চেয়েছেন। চিঠি পাওয়ার ১৫ কার্যদিবসের মধ্য দুদকে প্রতিবেদন দেয়ার জন্যও বলা হয়েছে।

এনবিআরের নির্ভরশীল একটি সূত্র বলছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের বিভিন্ন অনিয়ম ও ট্রাক্স ফাঁকি নিয়ে তারা কাজ করছেন। গ্রামীণ টেলিকমের বিভিন্ন ভ্যাট ফাঁকি রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির অন্য কোনও গলদ আছে কি- না সেগুলোর সকল কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।