ট্রাম্প দ্যা ব্ল্যাক ডগ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ১১ ২০২০, ০০:১৭

-বাশিরুল আমিন

করোনা উপলক্ষ্যে হারিছ এখন প্রায় প্রতিদিনই গ্রামের বাজারে যায়। সময় বিশেষ কয়েকবার যায়। করোনায় এই আবদ্ধ সময় ঘরে বসে কী-ই আর করা যায়। তো বাজারে গিয়ে সে যেসব কাজ করে তার মধ্যে অন্যতম হলো রেস্টুরেন্টে বসে খবর শুনা। স্বাভাবিক অবস্থা হলে সে খালি খালি রেস্টুরেন্টে বসতে পারতো না। এখন রেস্টুরেন্ট কিছুটা ফাঁকা থাকে আর বসলে তেমন কিছু না খাইলেও চলে। করোনায় কোথায় কেমন মরলো? কে কোথায় চালচুরি ডালচুরি করলো ইত্যাদি খুব মনযোগ দিয়ে শুনে। পরিসংখ্যনটা মনে না থাকলেও চুরিদারির বিষয়টা বাড়ি গিয়ে বউ বাচ্ছাকে বেশ আরাম করে শুনায়। তো এসব খবরের মধ্যে হঠাৎ দেখলো, কোথায় যেন লোকজন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটং করতেছে? হারিছের তো মাথা খারাপ তাদের ট্রাম্প আবার কী করলো? তাদের গ্রামের ছোট্ট ট্রাম্প টিভিতেই বা গেল কিভাবে! বাহ! ট্রাম্পের নাম গ্রাম ছাড়িয়ে এখন টিভিতেও। তো শিক্ষিত একজনকে জিজ্ঞেস করলো- ট্রাম্পে করছেটা কী? কামড়াইছে কাউরে?

নারে হারিচ্চা ট্রাম্পে কালো মানুষদের বিরুদ্ধে কথা কয়? হারিছের খুব মন খারাপ হলো, তাঁর গায়ের রঙও তো কালো। কুচকুচে কালো। যাকে বলে তেল কাইস্টা। বাজার থেকে সোজা চলে গেল খাইস্যাবাড়ি, ট্রাম্পের মালিকি আলমগীরের বাড়িতে। কিরে আলমগীর তোর ট্রাম্পে নাকি কালো মানুষ দেখতে পারে না। আমরা তো তারে এতো আদর যত্ন করি, আর সে পছন্দ করে না। পুরো গ্রামের মানুষ তারে মায়া করে। বিদেশী জানোয়ার বলে কথা। অহনে সে বুঝি আমাদের কাইল্যাদের দেখতে পারে না? দিলের চোটে এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো হারিছ। আলমগীর বলে- কই ট্রাম্প তো কালো-সাদা সবার সাথে একই আচরণ করে। তার নিজের গায়ের রঙওতো কালো! তো তোমারে এই কথা কইছে কে? উত্তরা হারিছ ভ্যাটকি দিয় বলে, টিভিতে খবর দিছে! শুনছ নাই!

হাসতে হাসতে আলমগীরের দশা কাহিল। আরে হারিছ মামু, অইটা আমাদের ট্রাম্প না। অই হালায় হইলো ডোনাল্ড ড্রাম্প, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। হালায় তো হইলদা কুত্তা। সে কালোদের দেখতে পারে না। আমাদের ট্রাম্প তো আর অইরকম খারাপ না যে কালোদের দেখতে পারবে না। তার কাছে সবাই সমান। সবাই মানুষ।

হারিছ আলি স্বস্তি পেল। যাক, আমাদের ট্রাম্প তাইলে খারাপ হইয়া যায় নাই। তয় যে এতো খারাপ, মানুষ হইয়া মানুষ দেখতে পারে না এমন লোকের নাম ট্রাম্প রাখছে ক্যান। এতে কইরা আমাদের ছোট্ট ট্রাম্পের তো অসম্মান হইতেছে!

কে এই ট্রাম্প?

ঢাকার উত্তরাস্থ একটি নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ট্রাম্পের জন্ম। তার বাবা জার্মান শেফার্ড গোত্রের বিশালদেহী পাহলোয়ন ‘ম্যাক্স’ আর মা হলো ডোবারম্যান গোত্রের বিচক্ষণ মাদী কুকুর ‘টমি’। ৭ ভাই বোনের মধ্যে ট্রাম্প কততম তা আমাদের জানা নেই। পুরুষ লিঙ্গের এই সারমেয় শাবকটি ছোটকাল থেকেই বন্ধুবৎসল। মেধাবী আর ভোজন রসিক। আচার-আচরণে রাগী মনে হলেও আদতে সে খুব হৃদয়বান। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাকে দত্ত্বক নেন কবি আলমগীর দাস।

ট্রাম্প বর্তমানে আলমগীর দাসের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজারস্থ ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রাম বাঁশতলায় বসবাস করছে। দিনের বেলা বাড়ীতে থাকে। রাতে সে গ্রামে ও সীমান্তে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। সীমান্তের এপার-ওপার দুপারেই বেশ জনপ্রিয়। গ্রামে শিশু-কিশোররা ট্রাম্পকে খাওয়াতে পছন্দ করে আর ট্রাম্প বাচ্ছাদের সাথে ফুটবল নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসে। ট্রাম্পের কারণে সীমান্তের চোরাচালনিরা ভীত থাকে ফলে বিজিবি আর বিএসএফরাও ট্রাম্পকে আলাদাভাবে খাতির করে।

গ্রামের মানুষ ট্রাম্প বলতে ৬ মাস বয়সী এই কালো কুকুর ছানাটিকেই চেনে। তারা হলুদ কুকুর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুব একটা জানে না। যে ট্রাম্প কালোদের দেখতে পারে না তারা সেই ট্রাম্পকে চেনে না। তারা চেনে কালো-সাদা উভয়কে সমান চোখে দেখতে পারা ছোট্ট কালো ট্রাম্পকে।