জালালাবাদ প্রবাসী কল্যান পরিষদ ইউকে’র উদ্যোগে ৩০ ডিসেম্বর এনআরবি ডে পালনের ঘোষণা ।

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ০৫ ২০১৮, ২৩:১৫

একুশে জার্নাল লন্ডন: জালালাবাদ প্রবাসী কল্যান পরিষদ ইউকে আগামী ৩০ ডিসেম্বর লন্ডনে দ্বিতীয় বারের মত এনআরবি দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছে। এনআরবি দিবসকে সফল করতে এবং কমিউনিটির সম্পৃক্ততা বাড়াতে সকলের সহযোগিতা চেয়ে ৩ জুলাই মঙ্গলবার টাওয়ার ব্রিজের ইন্ডিয়ান ফিউশন রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি আসিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মইন উদ্দিন আনসারের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে আনআরবি দিবস পালনের কারন ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রেস সেক্রেটারী মো: আনিসুর রহমান, । এসময় উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাহ মুনিম, ভাইস চেয়ার কাউন্সিলার আয়শা চৌধুরী, কমিটির সদস্য মানিকুর রহমান গনি, ফয়জুর রহমান, জাকির হোসেন, আব্দুল হালিম চৌধুরী, দিনা হোসেন, কয়নাল খান, ড. মালেক চৌধুরী, মারফত মিয়া, আমিন মিয়া, ওসমান গনি, আব্দুল হাবিব, আলম শেখ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয় প্রবাসীরা মহান মুক্তিযুদ্ধসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, অবকাঠামোর উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখছেন। তাই প্রবাসীদের অবদানকে তুলে ধরতে প্রতি বছর ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় এনআরবি ডে ঘোষণার দাবী জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
এছাড়া প্রবাসীদেরকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, সরকারের সংশ্লিস্ট দফতরগুলোতে প্রবাসীদের দাবী দাওয়াকে গণদাবী হিসেবে গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের বিগত দিনের কার্যক্রম ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

“মাননীয় সভাপতি,
কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক বন্ধুগণ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা অবহেলিত প্রবাসীদের পক্ষ থেকে কিছু কথা আপনাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের নিকট তুলে ধরা ও আগামী ৩০ ডিসেম্বর ইউকেতে এনরআবি দিবস উদযাপন করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলন। আমি শুরুতেই আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করায় এবং আপনাদের শত ব্যস্ততার মধ্যেও মূল্যবান সময় ব্যয় করে উপস্থিত হওয়ায় জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ ইউকের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সাংবাদিক বন্ধুগণ!
মূল বক্তব্যে যাওয়ার পূর্বে সর্বপ্রথম আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ সম্পর্কে দু’টি কথা বলতে চাই।

একথা আমরা সকলেই জানি যে, বৃটেনে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে প্রবাসী সিলেটবাসীর সংখ্যা ৯০% এর উপরে। তাই আমাদের সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য প্রবাসে বসবাসরত সকল নাগরিকের কল্যাণ এবং উন্নয়নে কাজ করা হলেও আমরা সংগঠনের নাম জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ রেখেছি। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে নিরলসভাবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করে আসছে।

সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুগণ!
যারা প্রবাসে বসবাস করেন তাদের চাকুরী, পেনশন ও আয় রোজগারের মূল লক্ষ্যই থাকে নিজ দেশে পরিবার, পরিজন, আত্মীয় স্বজনের সূর্য ও জীবন চলার পথকে সুগম রাখা। এবং সামাগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসায়, বাণিজ্য শিল্প, কৃষি ও শিক্ষাখাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। প্রসঙ্গক্রমে আমি এখানে ২০১৫ সালে প্রকাশিত দৈনিক ইনকিলাবের একটি রিপোর্টের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

জাতির বিবেক সাংবাদিক ভাইয়েরা
প্রবাসীরা নিজের আরাম আয়েশ ত্যাগ করে। নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেশের অর্থনৈতিক ও শিল্প উন্নয়নেই শুধু ভূমিকা রাখছেন তা নয় বরং দেশের যে কোন দূর্যোগ দুর্দিনে প্রবাসীরা যে ভূমিকা রাখেন তা আজ বিশ্বের অন্যান্য জাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে সপ্রশংস আলোচনার পরিণত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা মসজিদ মাদ্রাসা স্থাপন, দুস্তদের সেবা ও সহায়তা ভেঙ্গে পড়া বাড়ীঘর রাস্তা, কালভার্ট ও ব্রীজ নির্মাণের প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসীম। এমনকি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বিশেষ করে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের ভূমিকা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা রয়েছে। জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এই বৃটেনে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথম লন্ডনে আসেন এবং প্রথম সাংবাদিকের সামনে নতুন বাংলাদেশ কিভাবে তিনি চালাবেন সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। এর দ্বারা আপন মাতৃভূমির প্রতি বৃটেন প্রবাসীদের অবদান ও ভূমিকা সহজেই অনুমেয়।

সাংবাদিক ভাইরেয়া
একথা আজ বলতে দ্বিধা নেই। এতো কিছুর পরও প্রবাসীরা আজ নির্মমভাবে আপন মাতৃভূমিতে অবহেলিত। আপনারা পেশায় সাংবাদিক হলেও নিজেরাও প্রবাসী। তাই প্রবাসীদের অবদান এরং তাদের নানান সমস্যা এবং বঞ্চনার কথা আপনারাও সম্যক জানেন এবং আপনারাও এর ভূক্তভোগী। প্রবাসীদের ভোটাধিকার, লন্ডন টু সিলেট সরাসরি ফ্লাইট চালু। এয়ারপোর্ট ও সরকারী বিভিন্ন দফতদের অযাচিত হয়রাণী, ক্ষমতাবাদনের কর্তৃক বাড়ী, জমি ও সম্পত্তি দখল, বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার থেকে উপযুক্ত সহায়তা না পাওয়া শিল্প ও ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা রকম আইনী জটিলতা, সুরত মিয়া হত্যার বিচার সহ নানা বিষয়ে প্রবাসীদের দীর্ঘ দিনের দাবী দাওয়ার বিষয়ে বৃটেনে বিভিন্ন সময়ে সফরে আসা মন্ত্রী এবং সরকারের পদস্ত কর্মকর্তা আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বিন্দুমাত্র কার্যকরী প্রতিফলন দেখা যায়নি।

প্রিয় ভাইয়েরা!
বাংলাদেশে যারা জন্মগ্রহণ করেছে সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সংবিধান ও আইনের দৃষ্টিতে সবার নাগরিক অধিকার সমান। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে প্রবাসীদের নাম আজ অবধি দুঃখ বঞ্চনা এবং অবহেলার খাতায় লিখা রয়েছে।
তাই জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ প্রবাসীদের সমস্যা এবং দাবী দাওয়াকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ন্যায়সংগত সমাধানের জনমত তৈরীর জন্য বৎসরের মধ্যে ১টি দিনকে প্রবাসী দিবস হিসেবে জাতীয়ভাবে ঘোষণার জন্য কাজ করে আসছে।

সাংবাদিক বন্ধুগণ!
আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করতে চাই বাংলাদেশের কিছু গুণীজন বিশেষত জেপিকেপি’র পেট্রোন ড. এ কে আবদুল মোমেন এর উদ্যোগে গত বৎসর থেকে বাংলাদেশে এন আর বি অর্থাৎ Non Resident Bangladeshi দিবস পালনের ব্যাপক ক্যাম্পেইন তারা শুরু করেছেন।

জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ যুগপথভাবে বৃটেনে এই দিবসের ক্যাম্পেইন গত বৎসর থেকে শুরু করেছে। এই দিবসের লক্ষ্য হচ্ছেÑ
১। প্রবীসাদেরকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সজাগ ও শিক্ষিত করে তোলা।
২। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে প্রবসীদের দাবী দাওয়াকে গণদাবী হিসেবে এর গুরুত্ব তুলে ধরা।
৩। একটি বিশেষ দিনকে ঘজই উধু বা প্রবাসী দিবস ঘোষণা দেয়ার জন্য সরকারের বিবেচনার জন্য এর গুরুত্ব তুলে ধরা

সাংবাদিক ভাইয়েরা
উপরোক্ত লক্ষ্যকে সামনে রেখে জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ গত বৎসর ৩০ শে ডিসেম্বরকে NRB Day হিসেবে উদযাপন করে। এবং এ উপলক্ষ্যে লন্ডনের এমপ্রেসন হলে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এর ধারাবাহিকতায় এবারও ৩০শে ডিসেম্বর লন্ডনের ইমপ্রেস হলে NRB Day বা Non Resident Bangladeshi Day হিসেবে উদযাপন করতে যাচ্ছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
এই আন্দোলনে আমরা আপনাদেরকেও সহযোদ্ধা হিসেবে পেতে চাই এবং এই দাবীর প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় আনপাদের সর্বত্মক সহযোগিতা কামনা করি।

পরিশেষে আবারো আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং আগত অতিথিগণকে মোবারকবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করছি।
আল্লাহ হাফেজ।

মো: আনিসুর রহমান
প্রেস ও মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক “