জবিতে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি; নানা অভিযোগ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ১১ ২০২০, ১৮:০২

জবি প্রতিনিধি:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনলাইন প্ল্যাটফরম জুম ক্লাউড মিটিংয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২তম সিন্ডিকেট সভায় এমন বেশ কয়েকটি নিয়ম বহির্ভূত পদোন্নতি দেয় সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান এবং ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রার। বাকি সিন্ডিকেট সদস্যরা অনলাইনে যুক্ত হন। সভায় অনেকে বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বাধা দিলে তাদের কথা বলার সুযোগ না দিতে সংযোগ মিউট করে রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়।

২০১৬ সালে পাসকৃত সরকারি আইনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অধ্যাপক গ্রেড-১ পেতে শর্তাবলি হচ্ছে, অধ্যাপকের মোট চাকরির মেয়াদ ন্যূনতম ২০ বছর এবং দ্বিতীয় গ্রেডের সর্বশেষ সীমায় পৌঁছানোর দুই বছর পর জেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রথম গ্রেড প্রাপ্ত হবেন। তবে এ সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট অধ্যাপকের সংখ্যার ২৫ শতাংশের বেশি হবে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেড-১ পদোন্নতির ক্ষেত্রে তিনটি শর্তই ভঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে। আর এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০৪ জন অধ্যাপক। ১৩ জন অধ্যাপক গ্রেড-১ পদমর্যাদায় ছিলেন। ২৫ শতাংশ অধ্যাপকের সংখ্যার দিক দিয়ে গ্রেড-১ পদমর্যাদায় ১১টি পদ খালি ছিল। কিন্তু ৮২তম সিন্ডিকেট সভায় নির্ধারিত পদের অতিরিক্ত তিন জনসহ ১৪ জন শিক্ষককে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে আবেদন না করেও পদোন্নতি পেয়েছেন ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল মোমেন। এমনকি তার আবেদনপত্রটি ডিনস সভায় উত্থাপিত হয়নি। ২০ বছরের চাকরিকাল পূর্ণ না হওয়ায় তিনি প্রথমে আবেদনই করেননি। অভিযোগ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজে উদ্যোগী হয়ে এ অধ্যাপককে তার আবেদন সরাসরি সিন্ডিকেট মিটিংয়ে পেশ করার জন্য বলেন। সিন্ডিকেট সভায় তার আবেদনটি গৃহীত হয়।

মোট চাকরিকাল ২০ বছরের যে শর্ত তা পূরণ না হওয়ায় অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়ার আবেদন ডিনস কমিটিতে বাতিল করা হয়। তবে তাকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক গ্রেড-২ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও অনিয়ম করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরীর অধ্যাপক পদে চাকরিকাল চার বছর পূর্ণ না হওয়ায় তার আবেদন ডিনস সভা বাতিল করে। কিন্তু সিন্ডিকেট সভা এ শিক্ষককেও পদোন্নতি দেয়।
এ ছাড়াও সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইব্রাহিম খলিল পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য দেশের বাইরে শিক্ষা ছুটিতে আছেন। ছুটিতে থাকাকালীন বোর্ড বসানোর বিধান নেই। তা ছাড়াও সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাছাই বোর্ডে প্রার্থীকে সশরীরে হাজির হতে হয়। কিন্তু ওই শিক্ষক দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তারপরও তিনি সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
একই সিন্ডিকেট সভায় কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে। সিন্ডিকেট সভায় কয়েকজন সদস্য শিক্ষক-কর্মকর্তা পদোন্নতিতে অনিয়মের আশঙ্কা উল্লেখ করলে উপাচার্য বিষয়টিকে মনগড়া উল্লেখ করেন। ওই সিন্ডিকেট সদস্যদের অভিযোগ, অনলাইন সভায় তাদের সংযোগ মিউট করে দেওয়া হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়ার ব্যক্তিগত সহকারী আনোয়ার হোসেন। সেকশন অফিসার গ্রেড-১ পদোন্নতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই কমিটি তাকে সুপারিশ করেনি। কিন্তু বাছাই কমিটির সুপারিশ ছাড়াই তাকে গত শনিবার রাতে ভাইবার কার্ড প্রদান ও ভাইবা নেওয়া হয়েছে। সাবেক ট্রেজারারের এ ব্যক্তিগত সহকারীকে কর্মচারী থেকে সেকশন অফিসার গ্রেড-২ পদোন্নতিতেও অনিয়মের অভিযোগ আছে।
সহকারী রেজিস্ট্রার জিনাত জেরিনা সুলতানাকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও বাছাই কমিটির সুপারিশ ছাড়াই একই দিনে রাতের বেলা ভাইবার কার্ড ইস্যু ও ভাইবা নেওয়া হয়েছে। সহকর্মীদের বারবার মিথ্যা অভিযোগে হয়রানির জন্য তাকে শাস্তিও দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২২ মার্চ থেকে এ কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার সাহার বিরুদ্ধে অধীনস্থ কর্মচারী রতন সরকারকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনার সুরাহা না হতেই তাকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, সিন্ডিকেট সভায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।