জগলুল হায়দারের সমকালীন ছড়া ‘ঝেড়ে কাশেন’

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ১০ ২০২১, ২২:৫৫

 

ধর্ষণে আজ দেশ ভরেছে পেপার ভরে গোটা
দেশের বুকে রক্তক্ষরণ অশ্রু ফোঁটা ফোঁটা।
হচ্ছে কতো নুতুন আইন- ধর্ষণে স্রেফ ফাঁসি
কিন্তু তাতে হচ্ছে কি কাজ? আসেন ঝেড়ে কাশি-

মানুষ থাকে সমাজে সে, তাই সামাজিক নিত্য
সমাজবোধেই হয় যে গড়া তার ভাবনার চিত্ত।
চাইলেই কি বদলানো যায় সব সনাতন দিশ্য
পাল্টানো যায় সোসাইটি বা বিদ্যমান এ বিশ্ব।

ফলে তাকে বদলাতে হয় তার সমাজের সঙ্গে
রাঙাইতে হয় কমবেশি তো প্রতিপাশের রঙ্গে।
সমাজ চলে যে মরালে সেটাই সবার মান্য
ধানকে যতোই পলিশ করো যায় না ডাকা ধান্য।

সকলদেশের সব সমাজেই এই কথাটা সত্য
নয় এ নয়া আবিস্কার বা নয়রে নুতুন তথ্য।
ছেলেমেয়ে সমান তবে বাংলাদেশের কৃষ্টি-
মেয়ের দিকে বাড়তি কেয়ার একটু বেশি দৃষ্টি।

কলেজগামি ভাই ও বোনের ফারাক আছে থাকবে
ভাইয়ের যদি দুইখানা ড্রেস বোনের পাঁচটা লাগবে।
বোনের মেকাপ যা লাগে তার সব ফ্যামিলি দিচ্ছে
ভাই কি তাতে ‘সাম্য’ বলে সমান ভাগা নিচ্ছে?

ভাই চলে যায় হেঁটে ক্লাসে রিকশা বোনের জন্য
এটাই আমগো সভ্যতা এর উল্টা হলেই বন্য।
ভাইয়ের বন্ধু বাসায় এলে চা করে বোন লক্ষি
বোনের বান্ধবীরা এলে ভাইটা উড়াল পক্ষী।

এই চলে যায় পাড়ার মোড়ে আনতে এটা সেটা
এই না গেলে বাবা-মায়ে বলবে ওকে পেটা।
কিম্বা তাদের বিদায়কালে গলির মাথায় ছুইটা
ভাইটা আনে রিকশা ডেকে লাগলে একটা-দুইটা।

এসব নিয়া সব পরিবার করতো যদি সাম্য
সেইটা কি খুব শোভন হতো, হইত তোমার কাম্য?
আমগো সমাজ আমগো মতো ইনসাফে তাই পুষ্ট
ভাইবোন আর বাপ মা এতে কেউ না মোটে রুষ্ট।

ছেলেমেয়ে সমান সমান বেসিকে তো ঠিক
কিন্তু আছে এর তো আরো নানান দিশা দিক।
সেসব যে জন মানবে না সে বিজ্ঞানে খোদ ধরা
তার তো উচিত নেচার এবং সোসোলজি পড়া।

এই সমাজে একটা যাত্রা যায় চলে দুই ফলে
ছাত্র হলে কেউ কাঁদে না কান্না ছাত্রী হলে।
দুজন তো খুব সাম্য নিয়াই একটা প্রেমে ছিল
সেই প্রেমটা ভাঙায় কেন দুইটা রেজাল্ট দিলো?

ছাত্রী ঝোলে ওড়না বেঁধে পোলার কি হয় কিচ্ছু?
এসব কথা বললে আবার ভাববে আমায় বিচ্ছু।
ছেলের চাইতে মেয়ে নিয়া সবার টেনশন বেশি
সব ফ্যামিলির কনসার্ন তাই মেয়ের মেশামেশি।

কই যায় সে, বন্ধু কারা? বাপ মা সেসব ভাবে
এতো নিউজ দেখেও তাতে বাগড়া দিতে যাবে?
ফিরতে বাড়ি দেরি হলে ইভেন কোচিং করে
দেরি করে বাড়িফেরা ভাই ফাপরে মরে।

মাঝেমাঝেই এমন নিউজ পত্রিকাতে আসে
বন্ধুর হাতে সব হারিয়ে ছাত্রী খুনে ভাসে।
এখন যদি বাপ মা অবাধ মেশায় করে মানা
আপনি চেলে প্রগতি দান দিবেন তাতে হানা?

কিন্তু মশাই আপনি জানেন সব সামাজিক ঝুঁকি
প্রগতি ছাপ ঠিক রাখতেই দেন না তাতে উঁকি।
যার গেছে সে ঠিকই বুঝে তোমার মেয়ে হলে
কনজারভেটিভ হইবা তখন তুমিও তলে তলে।

এই মেয়েটার দোষ না তবু ভুলের মিছিল ধরে
পচা বন্ধুর সঙ্গ নিয়ে আতকা গেলো ঝরে।
তাই সচেতন হতেই পারে অভিভাবক সবাই
ভুল প্রগতির ইচ্ছাগুলা দিতেই পারে জবাই।

জানতে হবে মানতে হবে আপন সমাজ রুচি
গড়তে হবে সেই আকিদায় সাংস্কৃতিক সূচি।
ও লেভেল আর এ লেভেলে যে লেভেলেই থাকো
আপন সমাজ মূল্যবোধে আপনাকে সব রাখো।