জগলুল হায়দারের ঐতিহাসিক ছড়া- শিকড়

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ১৯ ২০২০, ২১:৩১

৫.

কগ্রেসি সব মুসলিমেরা পড়লো নুতুন চিন্তাতে
ব্রিটিশ গেলেই পালটাবে কি মুসলমানের দিন তাতে?
কংগ্রেসে তো ভারত আছে তয় সে ভারত গোটা না
কি হবে আর কি হবে না মুসলমানের দোটানা।

সেই প্রশ্নে কায়েদে আজম বাধ্য হয়ে অতঃপর
বাইনেশনে বুঝিয়ে দিলেন কংগ্রেসিরা কতো পর।
মুসলমানো জাগলো তাতে নুতুন খাবের আলোকে
লীগ ছাড়া আর ভারতজুড়ে চায় বা তাদের ভালো কে?

হিন্দু মানস উঠলো জেগে ছুটলো তারা স্বরাজে
মুসলমান তো আগেই দ্রোহী, ব্রিটিশ এবার ধরা যে।
পয়তিরিশে আসলো শলা ভারত শাসন আইনে
মুসলিমদের পৃথক ভোটে বললো আসন স্থায়ী নে।

এমন জোড়াতালির মাঝে বামাল বিশ্ব সমরে
ইংরেজ তো চ্যাপ্টা ভীষণ! টেনশন নয় কম ওরে।
কংগ্রেস এবং লীগ দুটোকেই লাগবে এ ঘোর বিপদে
সমর্থনে ভাবছে তাদের, কাদের দেবে কি পদে?

লীগের লাহোর সম্মেলনে শেরে বাংলার আওয়াজে
নুতুন দিশা লাহোর প্রস্তাব হঠাৎ করেই পাওয়া যে।
ভারতজুড়ে সব মুসলিম সেই দাবিতে এক সারে-
হিন্দু তাতে ক্ষেপলো ভীষণ ইংরেজও হয় একশা রে।

ঘাড়ের উপর শ্বাস ফেলে তার অগ্রসেনা জাপানি
বড়লাটের* নেই রুচি আর বন্ধ যেন চা পানি।
পাশাপাশি আজাদ হিন্দে হুংকার দেন নেতাজী
রক্ত দিয়ে করবো আবাদ স্বাধীনতার ক্ষেত আজি।

১৯৪০ সালের নিখিল ভারত মুসলিমলীগের লাহোর অধিবেশনকালীন এক মুহূর্তে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও কায়েদে আজম জিন্নাসহ লীগের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। এই অধিবেশনেই অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে ১৯৪৬ সালে মুসলিম আইন প্রণেণেতাদের দিল্লী অধিবেশনে বাংলার আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উত্থাপিত সংশোধনীতে এর নাম ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ করা হয়।

 

 

 

 

‘ভারত ছাড়’ এর আন্দোলনে ডাক দিয়ে যান গান্ধিও
তয় আজাদির প্রশ্নে সবাই ব্রিটিশরে কয়- আন্ধি ও।
তেতাল্লিশের হাভাতে ফের বাংলা মরে খুন্নিতে
মরণ খিদায় পান্তা ফুরায় একটুখানি নুন নিতে।

কলকাতাতে লাশের মিছিল আঁকে জয়নুল আবেদিন
হিন্দু মুসলিম এক হাহাকার- এমনি করেই যাবে দিন?
এক ঝলকের ঐক্য হঠাৎ রশিদ আলী দিবসে
উথালপাতাল ইঙ্গ শাসক আসবে এবার কি বশে?

ভারত ছাড়ে কংগ্রেস আর পাকিস্তানে লীগ ওতে
আপন ভালোমন্দে আবার দাঁড়ায় পথে ইগোতে।
কগ্রেসিরা ক্ষমতা চায়, চায় তো সবই অখণ্ড
লীগের দাবি, কেউ জানে না ভারত হবে ক খণ্ড!

তাই ঘোষণা ডাইরেক্ট অ্যাকশন জিন্না দিলেন আচমকায়
কলকাতা আর বিহারজুড়ে দৃশ্য দেখে গা চমকায়।
সরোয়ার্দী সজাগ হলেন নামলো মুজিব রাস্তাতে
লুটের শহর খুনের শহর নেই সে স্মৃতি আজ তাতে।

মুসলমানে গোর ভরে যায় হিন্দুও যায় চিতাতে
ডিভাইড এন্ড রুল রেজিমের যায় আসে আর কি তাতে?
বিহার ফেলে চট জলদি নোয়াখালীতে মহাত্মা
মুসলমানের কানে বাজে- নির্বিচারে হ হত্যা।

ইংরেজ তাই বুঝলো শেষে দুইটা জাতি ভারতে
অখণ্ডতার একগুঁয়েমি? থাকলো না ভাই আর ওতে।
বড় যদি উদার হতো ভাগ হতো না ছোটরা
পারলে করেন ভাগের দায়ে ওদের নিয়েই দুটো রা।

১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের পর ১৯৪৬ এর মহাদাঙ্গা কবলিত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ কলকাতা শহর।