ছাত্রলীগের গোলাম রব্বানী, অন্তর ও সাদ্দামের ফোনালাপ ফাঁস: পরিকল্পিত ফাঁসের অভিযোগ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ১৬ ২০১৯, ১২:৪৩

ইলিয়াস সারোয়ার: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ন সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও সহ-সভাপতি হামজা রহমান অন্তরের সাথে সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর একটি ফোনালাপের খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমগুলোতে। সেই ফোনালাপের একটি রেকর্ড আমাদের হাতে এসেছে। এই আলাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতির বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ এবং তাতে উপাচার্য ও উপাচার্যের পরিবারের সংশ্লিষ্টতার ঘটনা উঠে এসেছে।

ফোনালাপের শুরুতে গোলাম রাব্বানীকে বলতে শোনা যায়: হ্যাঁ অন্তর, কোথায় আছো। টাকা নেওয়ার সময় ছিল কে কে?

এ সময় হামজা রহমান অন্তর বলেন: জুয়েল ভাই, চঞ্চল ভাই ও সাদ্দাম ভাই ছিল আরকি।

রাব্বানী: টাকাটা দিছে কোথায়?

অন্তর: ভাই, ম্যামের বাসায়, সাদ্দাম ভাইয়ের সাথে একটু কথা বলেন। আমার পাশেই আছে।

রাব্বানী: আচ্ছা দাও দাও!

সাদ্দাম হোসাইন: ভাই স্লামুআলাইকুম।

রাব্বানী: ওয়ালাইকুম সালাম, সাদ্দাম কি খবর ভাই।

সাদ্দাম: ভাই খবর তো আপনাকে জানাইছি ভাই, খবর তো ভাল না, বেশি একটা। আমি আপনাকে বলছিলাম না ভাই- আমি, তাজ, জুয়েল চঞ্চল আমরা চারজন ছিলাম ওই মিটিংয়ের সময়। আজকে কিছুক্ষণ আগে জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ দিছে আপনাদের বিপক্ষে।

রাব্বানী: সেটা তো দেখলাম।

হোসাইন: বিষয়টা হচ্ছে ভাই, বামের সাথে সেটিংয়ে গেছে। বৈঠক হইছে বামের সাথে। তারপর বৈঠকে বিচার বিভাগীয় তদন্তবাদে বাকিগুলা বামের সাথে মেনে নিছে। আর বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যাপারে মানবে কিনা আগামী বুধবার পর্যন্ত ভাই। তিনদিন সময় দিছে।

রাব্বানী: আন্দোলন নিয়া?

হোসাইন: হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ।

রাব্বানী: ম্যাম তো বলছে যে আন্দোলনেও নাকি আমরা করাচ্ছি। সামথিং লাইক ও রকম কিছু। আন্দোলন কারা করতেছে ওটাও তো আমরা জানি না। আমাদের এটা তো আমরা জানি না।

সাদ্দাম: ভাই বিষয়টা হচ্ছে উনি ছাত্রলীগের উপর দিয়ে সবকিছু করে নিজের ফ্যামিলিকে সেইভ করতে চাচ্ছে আরকি। উনি বাঁচতে চাচ্ছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্স দিয়ে অনেকগুলা কথা বলছে আপনার বিপক্ষে, মানে সেন্ট্রাল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এবং যুগান্তরে ভাই, নিউজটা কি দেখছেন…

রাব্বানী: ওটা দেখছি, আচ্ছা টাকা যখন দিছিলো তখন তুই ছিলি না!

সাদ্দাম: ছিলাম ভাই আমি আর তাজ ছিলাম। এখন আপনি ভাই বলেন। কি করতে হবে আমরা করতেছি। সমস্যা নাই।

রাব্বানী: তুই আর কে?

সাদ্দাম: আমি আর তাজ, আমার বন্ধু ভাই।

রাব্বানী: অহ তাজ তাজ, সহ-সভাপতি! তুই হলি জয়েন্ট সেক্রেটারি। টাকাটা কিভাবে! ম্যাডাম দিছিলো নাকি অন্য কেউ ছিলো?

সাদ্দাম: ওইখানে আর কেউ ছিলো না। ব্যাপারটা হচ্ছে ম্যাডাম আমাদের সাথে ডিলিংটা করছে। টাকাটা আমাদের হলে পৌঁছায় দিছে।

রাব্বানী: ওহ হলে পৌছাই দিছে টাকা!

সাদ্দাম: হ্যাঁ হ্যাঁ। কথা তো হইছেই। আমি আর জুয়েলসহ তিনজনের সাথেই কথা হইছে।

রাব্বানী: কয় টাকা দিছে?

সাদ্দাম: আমাদেরকে বলছে হচ্ছে এক কোটি। আমরা বাকিটা জানি না। জুয়েল-চঞ্চলের সাথে আলাদা ডিল হইতে পারে। বাট আমাদের সাথে বসে মিমাংসা…

রাব্বানী: আমি শুনলাম যে ১ কোটি ৬০ লাখ…..

সাদ্দাম: ব্যাপারটা হচ্ছে ভাই ৬০ এর টা আমরা জানি না। ওখানে বসে ভাগ করে দিছে ৫০ হচ্ছে জুয়েলের, ২৫ আমাদের আর ২৫ চঞ্চলের।

রাব্বানী: ওহ ম্যাডাম ওভাবে ভাগ করে দিছে! জুয়েল ভাল ছেলে ওই জন্য ৫০ আর চঞ্চল ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে ওইজন্য ২৫…..

সাদ্দাম: চঞ্চল তো ভাই ওই ঝামেলায় আমাদের বাদ দিতে পারে নাই।

রাব্বানী: ও সেক্রেটারির টাকাই তোদেরকে দিছে।

সাদ্দাম: আমরা বলছি আমাদের ২৫% দিতে হবে। চঞ্চলকে ২৫% দিতে হবে। আমাদেরকে না জানাইয়া ওদের আলাদা ৬০ লাখ টাকা দিছে। এটা হতে পারে। আমরা ওটা জানি না। আমরা ১ কোটির হিসাব জানি।

রাব্বানী: কিন্তু তোমার ম্যাডাম যে এখানে আমাদের নাম জড়াইলো, আমার তো কোন আইডিয়াই নাই।

সাদ্দাম: ভাই উনি খুব নোংরামী করতেছে ভাই। আপনারা ভাই সিদ্ধান্ত নেন। আমাদের কি করা লাগবে আমরা করতেছি।

রাব্বানী: তোমাদের কিছু করা লাগবে না। তোমরা সাইলেন্ট থাকো। যেহেতু আপার কানে দিয়েছে, আমিও বুঝতেছি সে নিজে সেফ হওয়ার জন্য নিজের ফ্যামিলিকে সেফ করার জন্য। আরেকটি জিনিস, এই ৬টা কাজ ডিল করছে কে বেসিক্যালি?

সাদ্দাম: তার ছেলে, মূলত হচ্ছে তার ছেলে, তার পিএস সানোয়ার ভাই আর হচ্ছে পিডি, আর হচ্ছে তার হাজবেন্ড। এই হচ্ছে চারজন।

রাব্বানী: স্বামী, ছেলে, পিএস সানোয়ার ও পিডি নাসির? আগে থেকে ৬টা কোম্পানি রেডি করে রাখছে না!

সাদ্দাম: শুরু থেকেই তারা সবকিছু করছে ভাই। টেকনিক্যাল কমিটিতে ওরা ছিলো।

রাব্বানী: টেকনিক্যাল কমিটিতে ওরা ছিলো! না না ওরা তো থাকতে পারে না। এটার নিয়ম নেই।

সাদ্দাম: কথা হলো উনিতো সবাইকে ফেরত টেরত পাঠালো না! ছিনাই নিচ্ছিলো। তখন আমরা বললাম সবাইকে ড্রপ করাতে দিতে হবে। তখন সবাইকে ড্রপ করাতে দিলো। কিন্তু কাজ হচ্ছে………………………… হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ওটা নাটক ছিল। শিডিউল বিক্রির টাইমে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ছে ইচ্ছে করে। যেন কেউ যোগাযোগ করতে না পারে।

রাব্বানী: ওহ আচ্ছা আচ্ছা। সিডিউল বিক্রির টাইমে সে হাসপাতালে ভর্তি হইছে ইচ্ছা করে?

সাদ্দাম: হ্যাঁ ভাই।

রাব্বানী: তুই জানলি কেমনে এইটা?

সাদ্দাম: সিডিউল বিক্রির সময় উনি হাসপাতালে ছিলেন। সিডিউল বিক্রি শেষ উনি…

রাব্বানী: আমি তোর সাথে কথা বলবোনি প্রয়োজন হলে। ম্যাম আমাদের সম্পর্কে যা মিথ্যাচার করলো!’

এরপর তারা পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করবে বলে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দেয়।

ফোনালাপের চরিত্র বিশ্লেষণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আহমাদ ওয়াদুদ জানিয়েছেন- “জুয়েল আমাদের প্রেসিডেন্ট। চঞ্চল সেক্রেটারি। সাদ্দাম সেক্রেটারি প্যানেলের লোক এবং প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারির ব্যাচমেট। অন্তর সাদ্দামের লগে ঘুরে। বাট সহ সভপতি। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট প্যানেলের। তবে বাকি তিনজনের থেকে জুনিয়র। অন্তরের লগে রাব্বানীর হালকা যোগাযোগ আছে। সে মে বি রাব্বানীর স্পাই জাতীয় কিছু একটা হবে।

সাদ্দামের স্পেশালিটি হলো, যেই হলের তিনপাশে হল হবার কথা, সাদ্দাম সেই হলের নেতা। ফলে সাদ্দামরে চঞ্চল স্পেশাল মিটিং-এ বাদ দিতে পারে নাই। সাদ্দাম এমনিতে বোকা টাইপ। তবে এরিয়াটা সাদ্দামের হওয়ায় তাকে নিতে বাধ্য হইসে চঞ্চল। ফলে চঞ্চলের ভাগের অর্ধেক ম্যাডাম ওরে দিয়ে দিসে।

আর বিষয় খালি দুর্নীতি না। মূল ভেজালটা লাগছে রবীন্দ্রনাথ হল (৫তলা) ঘিরে তিনটা দশতলা ভবন নির্মাণের প্লান নিয়া। ফলে সাদ্দাম এখানে ইমপর্টেন্ট হয়ে উঠছে।”

তবে এই ফোনালাপ প্ল্যানিং করে করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। “দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর” পেইজ থেকে শেয়ার করা অডিওর নিচে অধিকাংশ মন্তব্যকারীই এমন অভিযোগ করেছেন।

গোলাম ন‌ওমি লিখেছেন-
“ফোন রেকর্ড টা লিক করেছে রাব্বানী এর ফোন থেকে, রাব্বানীর ভয়েজ পরিষ্কার অন্য প্রন্তের টা না। বাই দা ওয়ে এত গুছানো উওর এক মাত্র প্রশ্ন আউট হলেই দেয়া সম্ভব! পরিকল্পিত রেকর্ডিং এটি। আচ্ছা ঐ(রাব্বানী)) যে একটা গাল রেকর্ড করেছে সেটা কি প্রকাশ পাইছে?”

বায়েজিদ রানা লিখেছেন- “অভিনেতারা খুবই দূর্বল এবং তাদের আলোচনায় বোঝা যাবে যায় যে এটা একটা ষড়যন্ত্র ।একটু ভালভাবে শুনুন তাহলেই বুঝতে পারবেন যে এই ফোনালাপটি বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার এর।অভিযোগ তোলার পরই ইচ্ছা করেই কিছু নীতিবিসর্জনকারী নেতাদের বানানো ফোনালাপ ,তা রেকর্ডিংটি শুনলেই বুঝতে পারবেন।নিজেকে বাঁচানোর জন্যই রাব্বানী ভাই এই ফোনালাপ দিয়ে মিথ্যাচার করছেন।আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই জানে অতীতেও অন্তর কি কি সার্কাস তৈরি করেছে?”

তবে গোলাম রব্বানীর পক্ষেও কয়েকজনকে কথা বলতে দেখা গেছে। তারা তার ফোনালাপ প্রকাশের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।

শফিকুল ইসলাম লিখেছেন-
“রেকর্ডটা তো পরের ই হবে, স্বাভাবিক। পরের বলতে যেদিন থেকে ভাইদের(রাব্বানী ভাইদের) ব্লেম করা শুরু করেছিলো…! এটা তার পরের কথোপকথন হয়তো।আর ভাই-ও হয়তো ভিসির কুকীর্তি জানানোর জন্য তার ফোনে রেকর্ডটা করেছেন।এখন কথা হচ্ছে ওই পাশে যারা কথা বলতেছিলো তারা কি মিথ্যা বলতেছিলো কি না…! রব্বানী ভাই চিন্তা করতেই পারে যে আসল কাহিনী টা জানি এবং রেকর্ডও করি। নিজে ভালো হলে সেভ তো সবাই করতেই চাইবে। স্বাভাবিক।”