ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; একটি আশার আলো

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ১৬ ২০২২, ১৭:০৮

ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্য চিকিৎসার একমাত্র ঠিকানা। দোয়ারা উপজেলার, ছাতকের অন্তর্গত কয়েকটি ইউনিয়ন- নরসিংপুর,দোহালিয়া, বাংলাবাজারের লোকেরাও সেখানে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন।

৫০ শয্যা’র এই হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারিসহ বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা অনেকটা ভালোভাবে চললেও রোগীর অবস্থা কদাচিৎ কিছু হলেই ডাক্তাররা রেফার করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটার প্রভাব প্রসূতি রোগিদের ওপর পড়ে থাকে।অনাগত বাচ্চার পজিশন কিছুটা ব্যতিক্রম বুঝলেই আর নরমাল ডেলিভারি করতে সাহস করেন না।তাছাড়াও সামান্য থেকে সামান্য কোন সমস্যা দেখা দিলেই এরকম অনিহা প্রকাশ করে থাকেন।

ক্ষেত্রবিশেষ রোগীর জরায়ুর মুখ না খুলা,শরীরে এখনো পানি ভাঙেনি,বাচ্চার পজিশন উল্টো, প্রসবকালীন পেইন সহ্য করতে পারবে না— এমন অনেক উদাহরণ পেশ করে সিজারের পথ দেখিয়ে ওসমানী মেডিকেলসহ সিলেটের অন্যান্য হাসপাতালে রেফার করতে দেখা যায়— যা রোগী এবং রোগীর পরিবারের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। আবার কখনো আশঙ্কাজনক কোনো গর্ভবতী রোগী সিলেটে পৌঁছতে পৌঁছতে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে যায়,নিমিষেই শেষ হয়ে যায় পরিবারের রঙিন স্বপ্ন।কেউ হারায় তার জীবনসঙ্গিনী কেউ হারায় তার নব্য জন্ম হওয়া সন্তান,বলাই বাহুল্য যে, কেউ আবার উভয়কেই হারায়।এভাবে মুকুলেই ঝড়ে পড়ে অসংখ্য কোমলমতি মা ও শিশু।

ছাতক হাসপাতালে সিজার পদ্ধতির ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ বিশেষ দিবসে দেশবরেণ্য মনীষীরা নানান চটকদার তথ্য, স্বপ্ন, ও পথের আলো দেখালেও সেই স্বপ্ন এবং পথের আলো আমাদের হাতের নাগালে ধরা দেয় না,হয়ত এর পেছনে খামখেয়ালিপনা ও অবহেলার কিছু থাকতেই পারে। তবে হাতের নাগালে ধরা না দেওয়ার কতকগুলো যৌক্তিক কারণ ও আছে বটে, যা ছিল সবচে চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার।যেমন: জরুরি ঔষধ ব্যবস্থা,জরুরি রক্ত সরবরাহ,আই সি ইউ সাপোর্ট ইত্যাদি আনুষাঙ্গিক অনেক বিষয়াদি।

সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে সম্প্রতি আমাদের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু হয়েছে নরমাল ডেলিভারির পাশাপাশি বাচ্চা জন্মের আধুনিক মাধ্যম সিজার ব্যবস্থা কার্যক্রম,কোনো প্রকার বিঘ্নতা ছাড়াই এ পর্যন্ত তিনটি শিশু সফলভাবে জন্মগ্রহণ করেছে– যা আমাদের জন্য এতদিনের অতি-প্রয়োজনীয় এবং কাঙ্ক্ষিত ব্যবস্থা ছিল।

দেশের এই মহা দুর্যোগ ও ক্লান্তিলগ্নে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্য ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রকৃতার্থেই আজ মানুষের জন্য আলো ও আশার স্থানে পরিপূর্ণ হলো।

ব্যয়বহুল অর্থ ও সু-চিকিৎসার অভাবে ছাতক উপজেলার কোনো মানুষের আর জীবন-সঙ্গিনী ও স্বপ্নের নবজাতক হারাতে হবে না। আকাশসম দুঃখকষ্ট নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে নিরবে-নিভৃতে হাসপাতালের বারান্দায় বসে-বসে আর কাঁদতে হবে না। উক্ত ব্যবস্থা সবসময় অব্যাহত থাকুক এটাই কামনা।

চতুর্দিকে সংকটাপন্ন অবস্থা ও ঘনঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগের এই ক্ষণে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে,ঠিক তখন ছাতক উপজেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন মহৎ, সময়োপযোগী,।সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ ব্যবস্থা সত্যিই অনেক প্রশংসার দাবী রাখে।উপজেলাবাসীর সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ উল্লেখিত সেবা নির্বিঘ্নে গ্রহণ করতে পারবেন।

সু-চিকিৎসা প্রত্যেক মানুষকে পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বাঁচিয়ে রাখার অন্যতম মাধ্যম।এমন সেবামূলক,প্রয়োজনীয় মহৎ উদ্যোগে যে-বা যারা অবদান রেখেছেন সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। স্থানীয় সরকার,হাসপাতাল কতৃপক্ষ ,উপজেলা হেল্‌থ অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ছাতকবাসী আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।

আমরা চাই ছাতকের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরো উন্নতি ও অগ্রগতি লাভ করুক। মানুষের জন্য নিষ্কলুষভাবে কাজ করে দেশের মানচিত্রে ছাতকের স্বাস্থ্য-সেবা মাথা উঁচু করে রাখুক।