চোখ বেঁধে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ওরা আমাকে গাড়ির ফ্লোরে শুইয়ে রাখে
একুশে জার্নাল
জুন ১৮ ২০২১, ১১:৩৮
মিহনা-৩
(গত পর্বের পর থেকে)
আমাদেরকে খোঁজা বাদ দিয়ে ঘটনা অন্যদিকে ঘুরানোর চেষ্টা করে পুলিশ। এতে করে আমার শ্বশুরের পরিবার আর ড্রাইভার পরিবারের মধ্যে ভুল-বুঝাবুঝি শুরু হয়। একপর্যায়ে এটা বাক-বিতণ্ডায় রূপ নেয়। একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকে আর মধ্যখানে পুলিশ মজা নিতে থাকে। পুলিশ চাচ্ছিল আমাদের পরিবার যেন নুসরাতকে অভিযুক্ত করে কোনো মামলা করে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায়, আমাদের অভিভাবকদের বিচক্ষণতায় এদের এই চক্রান্ত সফল হয়নি৷ এমন তেলেসমাতি করতে করতে প্রায় দুপুর হয়ে যায়। এরপরে নুসরাত ও আমার শ্বশুরকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর পুলিশ আমার শ্বশুর, নুসরাত এবং দুই চাচা শ্বশুরকে নিয়ে গ্যাস পাম্পে গিয়ে সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেখায়। এরপরে তারা দুপুরের খাবার রেষ্টুরেন্টে খান। তখন প্রায় বেলা ২টা হয়ে যায়।এদিকে হামলায় আক্রান্ত ভাঙ্গা গাড়ীকে থানা নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সবাই যার যার বাড়ীতে যান। নুসরাতকে নিয়ে আমার শ্বশুর তাঁর গ্রামের বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে চলে যান। আপাতত নুসরাতকে উদ্ধার করতে পেরে দেশে-বিদেশে সবার মধ্যে একধরনের স্বস্তি ফিরে আসে। প্রায় ১৬ ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সমাপ্তি হয়।
তারা আমাকে মাইক্রো গাড়ীতে উঠিয়েই ড্রাইভারের পিছনের সিটের লম্বা সারির পা রাখার স্থানে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে শুইয়ে রাখে, চোখে গামছাও বেঁধে নেয়। এরপরে তারা ড্রাইভারকে নিয়ে আসে। তাকে মনে হয় আমার বরাবর পিছনের সিটের সারিতে রাখে। কণ্ঠ শুনে প্রথমে তা ধারণা করি, চোখ বাঁধা থাকায় সঠিকভাবে বলা যাচ্ছিল না। পরে অবশ্য নিশ্চিত হয়েছি যে তাকে ওই জায়গায়ই রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর সব কিডন্যাপাররা গাড়ীতে উঠলো। তারা সম্ভবতঃ পাঁচজন হবে। ঘটনাগুলো এত দ্রুত ঘটছিলো যে সবকিছু ভালোভাবে খেয়াল করতে পারিনি। এদের অনেকের গায়ে রেডিমেইড পাঞ্জাবি, থুতনিতে দাঁড়ি। তারা গাড়ীতে উঠার পর আমাকে সিটে বসায়, এরপরে গাড়ী আউশকান্দি থেকে ঢাকা অভিমুখে রওনা দেয়, তখনও তারা গামছাটা ভালোভাবে বাঁধেনি, তাই চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পাচ্ছি। প্রথমে দেখলাম তারা ঢাকার দিকে যাচ্ছে। এরপরে তাদের দলনেতা গাড়ীটি ঘুরাতে বলে। তখন গাড়ীটি ঘুরে আবার ঢাকার রাস্তা বাদ দিয়ে সিলেটের রাস্তার দিকে রওনা হয়। এরপরে শেরপুর হয়ে মৌলভীবাজারের দিকে গাড়ী যায়। মৌলভীবাজারে জুগিডর পর্যন্ত আমি বুঝতে পারি। এরপরে তারা বুঝতে পারে আমার চোখ অনেকটা খোলা। এ জন্যে চোখের খোলা অংশ ভালোভাবে ঢেকে দেয়। এরপর আর কোথায় নিয়ে যায় বলতে পারি নাই।
গাড়ীতে উঠানোর সময় আমাকে যেভাবে টেনে হেঁচড়ে লাঞ্ছিত করেছিলো এইটুকুই ছিলো আমার প্রতি তাদের সর্বোচ্চ শারীরিক নির্যাতন। এরপরে আর কোনো শারীরিক নির্যাতন করেনি। যদিও কথা বলতো মারাত্মকভাবে। দু/একবার তুই তুকারি করে সম্বোধন করলেও পরে তুমি সম্বোধন করে, এক সময় আপনি/ভাই বলে সম্বোধন করে। তারা গাড়িতে উঠার পর পা রাখার স্থান থেকে আমাকে সিটে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে আমার গরম লাগছে কিনা, আমি ‘হ্যাঁ’ বলি, তখন তারা এসির গতি বাড়িয়ে দেয়। এরপরে তারা বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। এর সবগুলো প্রকাশের সময় এখনো আসেনি। কখনো আসবে কিনা আল্লাহ ভালো জানেন।
যাইহোক, আমি তাদের কথাবার্তায় বুঝতে পারি তারা নুসরাতের মোবাইল নিয়ে এসেছে এবং আমার মোবাইল গাড়ীতে রেখে এসেছে। কিন্তু তারা যে নুসরাতের ভ্যানেটি ব্যাগ নিয়ে নিছে এটা আমি বুঝতে পারিনি। এমনকি বন্দি থাকাকালের দীর্ঘ একুশ মাসেও জানতে পারিনি। জেল থেকে বের হওয়ার পর তা জানতে পারি।
একপর্যায়ে তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি তাদের কাছে কী চাই? আমি বলি, প্রথমতঃ আমার স্ত্রীকে নিরাপদে বাড়ীতে পৌঁছে দিতে হবে। দ্বিতীয়তঃ আমার স্ত্রীর মোবাইল তদন্তের পর ফেরত দিতে হবে এবং তৃতীয়তঃ ড্রাইভারকে ছেড়ে দিতে হবে।
তারা বলে আমার সব দাবি পূরণ করবে। এরপর প্রায় ঘন্টাখানেক পর বলে যে, আমার স্ত্রী নিরাপদে বাড়ীতে পৌঁছে গেছে। আমি তাদের কথা পুরোটা বিশ্বাস না করলেও অনেকটা আশ্বস্ত হই। কারণ আমি ভাংচুরের সময় আমার শ্বশুর সাহেবকে অবগত করি। আমার ধারণা এতক্ষণে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছেন। তাই নুসরাত বাড়িতে না পৌঁছলেও অন্তত পরিবারের লোক তার সাহায্যে এসে গেছে। তখন আমি ড্রাইভার আর মোবাইলের ব্যাপারে বলি, জবাবে তারা ‘ছেড়ে দেব, ছেড়ে দেব’ বলে, কিন্তু ছাড়েনি। ওই সময় থেকে ড্রাইভার আব্দুর রহীম আমার সাথে ছিলো। দীর্ঘ একুশ মাসে আমি তিন মামলা আর সে দুই মামলায় জামিন পেয়ে এক সাথে বের হই। আর মোবাইলের খোঁজ আজ পর্যন্ত পাইনি।
এভাবে বিভিন্ন আলাপের মধ্য দিয়ে গাড়ী চলতে থাকে, কোন দিকে যাচ্ছি তা বলতে পারি না। এভাবে পাঁচ/ছয় ঘন্টা গাড়ি চলতে থাকে। গাড়ীর মধ্যে তাদের দলনেতা প্রশ্ন করতে থাকে। এগুলোর উত্তর দিতে থাকি। রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। আমাদের এশার নামায পড়া হয়নি। তাদেরকে ইশার নামাযের ব্যবস্থা করে দিতে বলি। তারা ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেয়। তারা আমার চোখটা গামছা দিয়ে বাঁধে আর ড্রাইভারের চোখ বাঁধে আমার কাফলীন দিয়ে। কাফলীন ছিলো বড় সিল্ক সুতার। সুয়েটারের কাপড়ের, এজন্যে ড্রাইভারের কষ্ট হয়। সে বার বার এ কষ্ট দূর করার জন্যে অভিযোগ করে। মনে হয় তাদের একটিই গামছা ছিলো। নইলে ড্রাইভারকে গামছা দিয়েই বাঁধত। হয়তো তাদের লক্ষ্য ছিলো একমাত্র আমাকেই ধরা, এজন্য একটি গামছা নিয়ে আসে।
চলন্ত গাড়ীতে এক সময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদও থেমে যায়। তারা ঘুমে ঢলতে থাকে। আমাদেরও ঘুম আসে। সবাই নিরব নিস্তব্ধ। চলন্ত মাইক্রোতে শুধু এসির শো শো শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রচন্ড শীতেও গরম লাগছিলো। এভাবে চলতে চলতে এক সময় গাড়ী থেমে যায়। মনে হয় গন্তব্যে পৌঁছে গেছে।
আমাকে আর ড্রাইভারকে ধরে তারা একটি রুমে নিয়ে যায়। প্রথমে তারা আমাকে একটি ওয়াশরূমে নিয়ে যায়। সেখানে চোখ খুলে দেয়। চোখ খুলে বাথরুম দেখলাম। মনে হলো কোনো থ্রি স্টার হোটেলের বাথরুমে ঢুকেছি। হাই-কমোড, উন্নত বেসিং এবং উন্নত শাওয়ার দেখা গেলো। সেখানে ইস্তেঞ্জা সেরে অজু করি। একটু ফ্রেশ হই। এরপর তারা চোখ আবার বেঁধে একটি রুমে নিয়ে যায়। পরে ড্রাইভারকেও বাথরুমে নিয়ে যায়।
রুমে প্রবেশ করার পর দেখি, ৫ হাত লম্বা এবং সোয়া তিন হাত চওড়া একটি কক্ষ। মনে হয় এটি বেলকনি ছিলো, পরে রুম বানানো হয়েছে। এসি আছে, একটি লাইট সর্বদা জ্বালানো থাকে। আছে সিসি ক্যামেরা। নিচে টাইলস আর দরোজা হিসেবে আছে কলাপসিবল গেইট৷ তাদের আসা-যাওয়ার সময় ছাড়া এটি সর্বদা তালা লাগানো থাকে।
সেখানে শোয়ার জন্যে একটি বালিশ ও দুই হাত/তিন হাতের কার্পেট আছে। আমার হাত হ্যান্ডক্যাপ লাগানো, ওই অবস্থায় ইশার নামায পড়ি। রাত কয়টা হবে জানি না। শীতের রাত, লম্বা রাত, ইশার সময় থাকবে আশা করি। পরে ড্রাইভারও ইশার নামায পড়ে নেয়। এরপরে তারা রাতের খাবার দেয়, গরু গোস্তের খিচুড়ি। কিন্তু রাতে রেষ্টুরেন্টে আমি আর নুসরাত খাবার খাওয়ার দরুণ খাবারের আগ্রহ নেই, তাই খাইনি। টেনশানের সময় খাবার খেতেও মনে চায় না। আমাদেরকে যেখানে রাখা হয় সেখান থেকে বাহিরের কোনো শব্দ শোনা যায় না। বাহিরের কোনো আলো-বাতাসও ঢুকে না। এজন্যে আযানের শব্দ শোনা এবং নামাযের ওয়াক্ত নির্ণয় করা কঠিন। ভেতরে নেই কোনো ঘড়ি, যা দেখে নামাযের সময় জানবো। দিন না রাত বোঝার উপায় নেই। নামাযের সময় জানার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে উপস্থিত দায়িত্বরত ব্যক্তিদেরকে জিজ্ঞেস করা।
যারা আমাদেরকে অপহরণ করেছিলো তারা চলে যায় এবং কিছুক্ষণ পর দায়িত্বরত ব্যক্তিরা বলে যে, ফজরের সময় হয়েছে। আমরা ফজরের নামায পড়ি। তারপর দীর্ঘ সজাগ থাকা রাত শেষ করে হ্যান্ডক্যাপ লাগানো অবস্থায়ই লাইট জ্বালানো প্রজ্জ্বলিত ঘরে শুয়ে পড়ি। ড্রাইভারও শুয়ে পড়ে। আমার মনে তখনো তেমন টেনশান আসেনি। আমার টেনশানের কারণ একমাত্র নুসরাত, তারা বলেছে, নুসরাত নিরাপদে পৌঁছে গেছে। সে হিসেবে টেনশান না হওয়া স্বাভাবিক। একমাত্র বালিশ ড্রাইভারকে দিই আর আমি সে-অবস্থায়ই বালিশ ছাড়া ঘুমিয়ে পড়ি।
অনেক সময় ঘুমাই, কত সময় ঘুমাই তা বলতে পারবো না, কারণ সেখানে ঘড়ি-মোবাইল কিছুই নেই। একটা সময় ঘুম থেকে উঠি, সম্ভবত সকাল নয়টা বা দশটা হবে। তখন দেখি ড্রাইভার আব্দুর রহীম বসে আছে। মনে হল সে ঘুমায়নি। প্রচন্ড টেনশানে তার ঘুম হয়নি। তাকে স্বাভাবিক হাল-পুরছি জিজ্ঞেস করলাম সে কোনো জবাব দেয়নি। আমি ভাবলাম, হয়তো মনে মনে আমার উপর রেগে আছে। কিন্তু না, আমার ধারণা ভুল ছিলো, সে আমার মিহনা জীবন তথা গুম-জেল-রিমান্ডের ২১ মাসে কোনো দিন কোনো কথা বা আচরণে আমার প্রতি সামান্য পরিমাণ বিরক্তি প্রকাশ করেনি।
আমি ঘুম থেকে উঠার পর দেখলাম এক ব্যক্তি আসলো। দেখে মনে হলো ভালো ফ্যামেলির হবে। কথাবার্তা মার্জিত ও সুন্দর৷ সম্ভবত সে তাদের একজন দলনেতা। প্রথমে জিজ্ঞেস করলো আমার ঘুম-টুম হলো কিনা, না হলে ঘুমানোর সুযোগ দিবে। ওই সময় আমার মাথায় লম্বা চুল ছিলো, শীতের মধ্যে একদিন গোসল না করায়, চুল না ধোয়ায় তেল দেওয়া হয়নি। এতে আমার চুল রুক্ষ হয়ে যায়। রুক্ষ লম্বা চুল যখন এলোমেলো হয়ে যায় তখন দেখলেও বিদঘুটে মনে হয়। তখন সে জিজ্ঞেস করে চুল লম্বা কেনো? পরক্ষণে সেই জবাব দেয় যে, লম্বা চুল রাখা সুন্নত। আমার চুল বেশি এলোমেলো দেখানোর কারণ অন্যটি। তা হলো, আমার চুল ঘন এবং গাঢ়। তাই সর্বদা তেল দিয়ে আঁচরিয়ে না রাখলে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর সে কাগজ নিয়ে আসলো এবং আমার পূর্ণ বায়োডাটা লেখা শুরু করলো। প্রথমে আমার নাম জিজ্ঞেস করলো। আমি শান্তমতো জবাব দিলাম। এরপরে আমার বাবা-মায়ের নাম জিজ্ঞেস করলো। এরও জবাব দিলাম। এরপর জিজ্ঞেস করলো আমার স্ত্রীর নাম কী? এ কথা বলতেই, আমার চোখের সামনে আপন স্ত্রীর শেষ করুণ অবস্থার কথা স্মরণ হলো। গাড়ীতে এটাকিংয়ের সময় যখন সে আমার হাত ধরে কান্না করছিলো তখনকার কথা। সাথে সাথেই আমার মন বিষিয়ে উঠলো। তার অসহায় চাহনীর পরে আমার অসহায় অবস্থা স্মরণ হলো। মনে মনে ভাবলাম, হায় না জানি এখন সে কোথায়? গভীর রাতে তাকে রাস্তায় রেখে এসেছি। সে কি নিরাপদে বাড়ী পৌঁছেছে? না কোনো সমস্যায় পড়লো। তাদের পক্ষ থেকে বলা স্ত্রী নিরাপদ থাকার কথাও ভুলে গেলাম। শুধু তার অসহায়ত্বের কথাই স্মরণ হলো, তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে পারিনি। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো। স্বাভাবিক পানি নয়, অঝোর অশ্রু। এমন কান্না শুরু হলো যে, আমি তার নামটাও ভালোভাবে বলতে পারলাম না। কয়েকবারে তার নাম বললাম। এতে ওই দলনেতা হাসি শুরু করলো, প্রচন্ড হাসি। সে বললো, বাবা-মায়ের নাম বলায় কান্না করোনি, কিন্তু স্ত্রীর নাম বলতেই এতো কান্না করছো! আমি বললাম, বাবা-মা নিরাপদ জায়গায় আছেন এটা জানি, কিন্তু স্ত্রীকে অনিরাপদ জায়গায় রেখে এসেছি, জানি না সে এখন কোথায়? একটা মানুষের দায়িত্ব ছিলো আমার উপর, তাও ভালোভাবে পালন করতে পারিনি’।
একথা বলে লজ্জা-শরম ভুলে আরও কান্না করলাম। নুসরাতকে ভালবাসি ঠিকই, কিন্তু হঠাৎ করেই যে ভালবাসার এ বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার এভাবে অনিয়ন্ত্রিত হবে তা ভাবিনি।
সে তখন বলে, তুমি কি তোমার ওয়াইফকে অনেক ভালোবাসো? আমি তাকে পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আপনার ওয়াইফকে ভালোবাসেন না? আমার মতো যদি আপনার ওয়াইফকে অন্ধকার রাতে রাস্তায় একা রেখে আসতেন তখন আপনি কী করতেন? এতে সে আটকে যায়, পরক্ষণে সে বলে আসলে তুমি এক রোমান্টিক হুজুর। দোয়া করি, আল্লাহ যেন স্ত্রীর প্রতি তোমার মহব্বত আরো বাড়িয়ে দেন। আমি নিঃশব্দে ‘আমীন’ বলি। যাক, এরপর সে উঠে যায় আর জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, পরে আসবে বলে চলে যায়।
সে রোমান্টিক হুজুর বলায় আমার একটি ঘটনা মনে হলো, আমাদের বিয়ের প্রথম রাত। স্ত্রীর সাথে কীভাবে ফ্রি হবো, এ নিয়ে আমি চিন্তা করতে থাকি। মনে মনে ভাবি, আমি প্রথম রাতে এমনভাবে কথা বলবো যে, সে যেন প্রথম রাতেই একেবারে ফ্রি হয়ে যায়। তাই আমি করি কি, আমার জানামতে যা হাসির গল্প-কৌতুক আছে, আমি ওই রাতে একটু পরেই সেগুলো বলা শুরু করি। এই গল্পগুলো এমন যে, এগুলো একটা শোনার পর হয়তো কষ্ট করে হাসি আটকানো যাবে, কিন্তু যদি তসবিহের দানার মতো একের পর এক গল্প-কৌতুক বলতে থাকি তখন কি আর হাসি আটকানো যায়? সেভাবে নুসরাতও হাসি আটকাতে পারেনি। বিয়ের রাত, তাই প্রথমে হাসে নিঃশব্দে, একটু পরে মুখ টিপে, কিছুক্ষণ পর একটু শব্দ করে, একপর্যায়ে সে খিলখিল করে হাসা শুরু করে। ওই হাসিরত অবস্থায়ই সে বলে, বিয়ের আগে আমি শুনেছিলাম আপনি একজন মুহাদ্দিস, মুফতি এবং আদীব(আরবি সাহিত্যিক), তাই ভাবছিলাম না জানি আপনার সাথে কীভাবে চলা লাগবে। হয়তো খুব কায়দা-কানুন মেনে খুব সতর্ক হয়ে চলতে হবে। এখন দেখি আপনি ‘রোমান্টিক’!
(বাকি অংশ আগামী পর্বে)