চামড়া নিয়ে উদাসীনতা আর মানা যায় না

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ১৩ ২০১৯, ১৮:১৯

হুসাইন আহমদ বাহুবলী

বড় বড় গরুর চামড়া দুই-তিনশো টাকায় এবং ছাগলের চামড়া ফ্রী। এমনকি চামড়ার মূল্যহ্রাসে হতবিহ্বল হয়ে বহু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চামড়া কালেকশনে অমনোযোগী হয়ে পড়েন। বিকালের দিকে বিভিন্ন দিক থেকে ফোন করে মানুষজন বলছিল যে, আমাদের বাড়িতে চামড়া রাখা। নেয়ার জন্য কেউ আসেননি। আমরাও বলে দিয়েছি আপনারা আগে দেননি। এখন আমরাও নিচ্ছি না। এই ছিল মোটামুটি আজকের রোজনামচা।

আজ মনে হচ্ছে, চামড়া নিয়ে কওমী কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ গোটা দেশ থেকে সদস্যদেরকে একত্রিত করে লক্ষ লক্ষ টাকা বাজেটের প্রোগ্রাম করতে পারলে, চামড়া নিয়ে একটা সেমিনার করা কঠিন কোন বিষয় ছিল না।
কিন্তু কি কারণে তারা সেদিকে মনোনিবেশ করছেন না তা আজও অজানা রয়ে গেল। বহু বিতর্কিত, কম প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় বৈঠক বেফাকের হয়েছে। কিন্তু এদেশের লক্ষাধিক ছাত্রের কুরবানী করা ঈদ আনন্দের সাথে উপহাস যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তরুণ আলেমদের আর্তচিৎকার কবে যে কর্ণধারদের কর্ণকুহরে পৌঁছাবে তা জানা নেই।

তবে এটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, চামড়া নিয়ে কওমী কর্তৃপক্ষ সিরিয়াসলি কোন প্রোগ্রাম করতে যত দেরি হবে কওমি অঙ্গনের অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার সাথে সাথে গোটা ছাত্রসমাজ এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে অবহেলা কারীদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হতে থাকবে, যেটা আমরা কখনোই চাই না।

আজ চামড়া নিয়ে ক্বওমী কর্তৃপক্ষ যে হয়রানির ও লোকসানের স্বীকার হয়েছে তা দূরীকরণে বেশি কিছু করার প্রয়োজন ছিল না।

বেফাকের অধীনে একটা ট্যানারি প্রতিষ্ঠা করলে-
১} সিন্ডিকেটররা মূল্যে ধ্বস নামাতে পারত না।
২} চামড়া কালেকশনের ক্লান্তি দূরীকরণের আগেই বিক্রি করার ক্লান্তি জেঁকে বসত না।
৩} হাজার-হাজার লোকের কর্মসংস্থান হত ।
৪} ঈদের বন্ধের সুবাদে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার আদলে ক্বওমী ঘরনার যথেষ্ট জনবল কম পারিশ্রমিকে নিয়োগ দেওয়া যেত।
৫} বোর্ড থেকে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার পরীক্ষক প্রস্তাবনার আদলে ট্যানারি শ্রমিক প্রস্তাবনা আসতে পারত।
৬} ট্যানারিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ জনবল নিখুঁত চামড়া সংগ্রহে ভূমিকা রাখতে পারত।
৭} ক্বওমী কর্তৃপক্ষ অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারত।
৮} আলেমদের ব্যবসায় আসার অঘোষিত লজ্জা দূরীভূত হত।
৯} “ক্বওমীরা শুধু হাত পাতে, উৎপাদন করতে পারে না” এই অভিশাপের অপনোদন ঘটত।
১০} চামড়া শিল্পের নীতি নির্ধারকদের ফোরামে ক্বওমীর বিদগ্ধ প্রতিনিধি ক্বওমী স্বার্থ রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হত।

আশা করি, খুব দ্রুতই কওমী কর্তৃপক্ষের বোধোদয় ঘটবে এবং তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন ৷