গোয়াইনঘাটে দু’গ্রামের বিরোধপূর্ণ দীঘল কুড়ি পরিদর্শন করে জব্দ করলেন ইউএনও

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ১০ ২০২২, ২০:৪৪

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধিঃ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের শিয়ালা হাওর ও লক্ষীহাওর (জলুরমুখ) গ্রামবাসীর মাঝে স্থানীয় দীঘল কুড়ি জলমহাল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই বিরোধের জেরে গোয়াইনঘাট থানায় একটি অপহরণ মামলাও রুজু হয়েছে। উল্লেখিত দুই গ্রামবাসীর বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) বিরোধ পূর্ণ দীঘল কুড়ি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান, গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম নজরুল ইসলাম, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল, সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ শফিকুল ইসলাম খান, সালুটিকর ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বুরহান উদ্দিন, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাব সভাপতি এম এ মতিন, সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের টু-আইসি এসআই জহিরুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সুভাস চন্দ্র পাল ছানা, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ এরশাদ আলী, ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য দশরত সরকার। এছাড়াও উভয় গ্রামের শতাধিক লোকজন। সরেজমিন পরিদর্শন কালে বিরোধপূর্ণ দীঘল কুড়ি জলমহালের বৈধ মালিকানা বিষয়ে

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান ও গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম নজরুল ইসলাম উভয় গ্রামবাসীর কাছে প্রয়োজনীয় কাগজাদী চাইলে কোন পক্ষই স্বপক্ষে মালিকানা দেখাতে পারেনি। ফলে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাহমিলুর রহমান বিরোধপূর্ণ দীঘল কুড়ি জলমহালটি জব্দ করেন। উভয় গ্রামবাসী অবৈধভাবে দীঘল কুড়ি জলমহালে অনাধিকার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাহমিলুর রহমান বলেন, নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের শিয়ালা হাওর ও লক্ষীহাওর (জলুরমুখ) গ্রামবাসীর মাঝে স্থানীয় দীঘল কুড়ি জলমহাল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। উক্ত বিরোধ পূর্ণ দীঘল কুড়ি জলমহালটি সরেজমিন পরিদর্শন করে উভয় গ্রামবাসীর কাছে বৈধ মালিকানার কাগজ পত্র চেয়ে পাওয়া যায়নি। ফলে বিরোধ পূর্ণ দীঘল কুড়ি জলমহালটি সাময়িক জব্দ করা হয়েছে এবং এ কুড়িতে অনাধিকার প্রবেশে উভয় পক্ষকেই নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে। তবে মালিকানা বিষয়ে বৈধ কাজপত্র পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় স্বপন দাস (৩৮) নামের এক ব্যক্তি অপহরণ হয়েছে মর্মে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের লক্ষীহাওর (জলুরমুখ) গ্রামের টিয়া নমশূদ্রের ছেলে রতন দাস (স্বপন দাসের)ভাই বাদী হয়ে নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার রইছ মিয়াকে প্রধান আসামি করে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে গত ১ নভেম্বর গোয়াইনঘাট থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ২, তারিখ ০১/১১/২০২২ইং। থানায় রুজু হওয়া মামলা সূত্রে জানা যায়, শিয়ালা হাওর ও লক্ষীহাওর (জলুরমুখ) উভয় গ্রামের মধ্য স্থানে দীঘল কুড়ি নামে একটি জলমহাল রয়েছে। এই জলমহালটি গত ২৯/১০/২০২২ইং তারিখে পাহারাদার ছিলেন লক্ষীহাওর (জলুরমুখ) গ্রামের টিয়া নমশূদ্রের ছেলে স্বপন দাস, রতন দাস ও বাবুল বিশ্বাসের ছেলে নকুল বিশ্বাস, সুজনের ছেলে কাজল,সনতনের ছেলে কৃষ্ণ এবং রসময়ের ছেলে তীলক দাস। বাদী আরো জানান,২৯ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টায় শিয়ালা হাওর গ্রামবাসী পাহারাদারের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধর করে এবং উল্লেখিত ৬ জন আটক করে শিয়ালা হাওর গ্রামবাসী নিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্বপন দাস ব্যতীত সবাইকে ছেড়ে দেয়। এব্যাপারে স্থানীয় একাধিক বিশস্ত সূত্রে জানা যায়, নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের শিয়ালা হাওর ও লক্ষীহাওর (জলুরমুখ) গ্রামবাসীর মধ্যে শিয়ালা হাওর গ্রামের সন্নিকটের দীঘল কুড়ি জলমহালের মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। প্রায় ৪/৫ বছর ধরে ইউনিয়নের গন্যমান্য মুরব্বি, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিষয়টি শান্তিপূর্ণ ছিল। গত ২৯ অক্টোবর রাত ১০ টার দিকে লক্ষীহাওর (জলুরমুখ) গ্রামের শতাধিক লোকজন স্থানীয় মাছ ধরার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদী নিয়ে বিরোধ পূর্ণ দীঘল কুড়িতে মাছ শিকার করেন। খবর পেয়ে শিয়ালা হাওর গ্রামবাসী দীঘল কুড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে লক্ষীহাওর গ্রামবাসী পালিয়ে যাওয়ার সময় টিয়া নমশূদ্রের ছেলে রতন দাস ও বাবুল বিশ্বাসের ছেলে নকুল বিশ্বাস, সুজনের ছেলে কাজল,সনতনের ছেলে কৃষ্ণ এবং রসময়ের ছেলে তীলক দাসকে আটক করেন এবং দ্রুত সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ শফিকুল ইসলাম খানকে অবগত করেন। এব্যাপারে সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ শফিকুল ইসলাম খান বলেন, শিয়ালা হাওর গ্রামবাসী কতৃক জলুরমুখ গ্রামের ৫ জন লোক আটকের খবর পেয়ে রাত ১২ টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। এসময় আটককৃত ওই ৫ জন লোককে সস্মানে তাদের গ্রামে ফিরিয়ে দেই। কিন্তু পরবর্তীতে টিয়া নমশূদ্রের ছেলে রতন দাস তার আপন ভাই স্বপন দাস অপহরণ হয়েছে দাবী করে গোয়াইনঘাট থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি রুজু হওয়ার পর পুলিশ ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপহরণ হওয়া স্বপন দাসের মোবাইলের সূত্র ধরে মামলার তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি চালাই। আমরা জানতে পারি গত কয়েক মাসের মধ্যে স্বপন দাস লক্ষীহওর (জলুরমুখ) আসেনি। এছাড়াও স্বপন দাসের সর্বাধিক যে ব্যক্তির সাথে কথা হয়েছে তাকেও সনাক্ত করে আটক করি। আটককৃত ব্যক্তির নাম অর্জন দাস সে গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের উত্তর প্রতাপুর গ্রামের অনিল দাসের ছেলে। আজ বুধবার (৯ নভেম্বর) সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্র ১ম আদালতে বিজ্ঞ হাকিম ছগির আহমদ মহোদয়ের কাছে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি প্রদান করে। সে আদালতকে জানায় স্বপন দাস সীমান্তের চোরাকারবারি। সে ৬ মাসেও এলাকায় আসেনা। অপহরণ নাটক করতে স্থানীয় জলুরমুখ গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রচুর টাকা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে স্বপনের বোনের সহযোগিতায় সে ভারতে অবস্থান করছে।