কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি; দুর্ভোগে তিন লাখ বানভাসি 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ১৪ ২০২০, ১৯:৫৯

কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে বেড়েছে বানভাসীদের দুর্ভোগ। মঙ্গলবার ভোর থেকে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী মহাসড়কের দুটি জায়গার উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে বালুর বস্তা ফেলা হলেও দ্রুত বন্যার পানি নেমে না গেলে মহাসড়কের অবস্থা ঝুকিপূর্ণ হবে বলে স্থানীয়রা আশংকা করছেন।

এদিকে বিকেলে বন্যার পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে ধরলা নদীতে ব্রিজ পয়েন্টে ১০৩ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৯৬ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ৬০ ইউনিয়নের ৫২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব ও নাগেশ্বরীতে মহাসড়কের উপর পানিওঠায় এই উপজেলার হাছনাবাদ, নেওয়াশি, ভিতরবন্দ, পৌরসভা, ফুলবাড়ি উপজেলার ভাঙ্গামোড়, বড়ভিটা, সদরের ভোগডাঙ্গা, ঘোগাদহ, পাঁচগাছীসহ প্রায় ৪৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এই গ্রামগুলোতে পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় দুর্বিষয় কষ্ট নিয়ে লোকজন রাস্তায় চলে এসেছে। বাড়িঘরের ভিতর আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র পানিতে ভিজে গেছে। অনেকে ধান-চালও সড়াতে পারেনি। প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র বাঁচাতে ভেসে গেছে হাসঁ-মুরগী। দোকানঘরে পানি ওঠায় জিনিষপত্র ভিজে লোকসান গুণতে হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরর।

নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় লোকজন পরিবার নিয়ে বাঁধের রাস্তা ও মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে। প্রথমদফায় যারা আক্রান্ত হয়েছিল, তারা ১৮দিন ধরে রাস্তার ধারে পলিথিন দিয়ে শেড করে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। রাতভর মুসলধারে বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে বানভাসীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রাত কাটিয়েছে।

কুড়িগ্রাম সদরের পাটেশ্বরী মহাসড়কের দু’পাশে প্রায় ৫শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে শহিদুল, মেরিনা ও আনোয়ারা অভিযোগ করেন, বন্যার কারণে কাজকাম বন্ধ। সরকার থেকে এখনো তারা কিছুই পাননি। শুধুমাত্র সেনাবাহিনী থেকে ত্রাণ পাওয়া ছাড়া আরকোন ত্রাণ পাননি বলে অভিযো করেছেন।

সদরের ধরলা ব্রিজ সংলগ্ন মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। এরমধ্যে স্কোয়ার সেমি বাঁধে প্রায় ৫৫টি পরিবারের জন্য একটি নলকূপ ও একটি লেট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। নারীদের জন্য রাখা হয়নি আলাদা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে সারাক্ষণ যানচলাচল অব্যাহত থাকায় সন্তানদের নিয়ে ভীষণ আতংকে রয়েছেন বাবা-মায়েরা।

নাগেশ্বরীর হাছনাবাদ ইউনিয়নের চন্ডিপুর এলাকার মালেক, সোহান ও রহমান জানান, চারদিকে পানি গরু নিয়ে সড়কে এসেছি। জমানো খড় দিয়ে চালাচ্ছি। কিন্তু কতদিন এভাবে কাটবে। গরু-ছাগল নিয়ে ভীষন বিপদে আছি। সদরের ভোডাঙ্গা পাটেশ্বরী এলাকার কৃষক মজিবর, কাচুদ্দি, শমসের ও জয়নাল জানান, উঁচু ভিটায় বীজতলা লাগিয়েছি। পানি ওঠায় সেগুলোও বিনস্টের পথে। এভাবে পানি আটকে থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আলী নুরাইন জানান, কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়কের চন্ডিপুর নামক স্থানে মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাস্তার যাতে ক্ষতি না হয় এজন্য আমরা স্রোতের তীব্রতা ঠেকাতে বস্তা দিয়ে সেগুলো নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করছি।

জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানিয়েছেন, পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৪৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। ৪০০ মে. টন চাল, ১১ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।