কাশ্মীরে চলছে বিদেশি আগ্রাসন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ১০ ২০১৯, ১৭:৪৮

আবুল কাসেম আদিল

এতদিন কাশ্মীর কাগজেকলমে স্বাধীন রাজ্য ছিল। কাজীর গরু কেতাবেই ছিল, গোয়ালে ছিল না। এখন কেতাবেও নেই, গোয়ালেও নেই। স্বাধীন রাজ্য যখন ছিল, কাশ্মীরিদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা কি কম ছিল? কম ছিল না। এখন হয়ত আরেকটু বাড়বে। মূলত হিসাব একই, সামান্য কমবেশ।

কাশ্মীর ভারতভুক্ত হয়েছিল কিছু অঙ্গীকারের আলোকে। সেই অঙ্গীকারের ভিত্তিতেই কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদাসহ সাংবিধানিকভাবে ভারতের স্বাধীন রাজ্য হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। সংবিধানের সেই ধারাটি বাতিল হওয়ার মাধ্যমে আইনগতভাবে কাশ্মীর ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হলো। কারণ সংবিধানে সেই ধারাটি যুক্ত হওয়ার আগে কাশ্মীর বিচ্ছিন্ন ছিল। সংবিধানের যে ধারাটির কারণে কাশ্মীর ভারতভুক্ত হয়েছে, সেটি বাতিল হওয়ার মাধ্যমে কাশ্মীর ভারত থেকে আবারো বিচ্ছিন্ন হলো। স্বাভাবিকভাবে দেখলে এটাই সত্য।

কাশ্মীরকে আইনগতভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের পুরোপুরি অধীনস্ত করার পথে বাধা ছিল সংবিধান। সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারাটি বাতিল করলে (আইনগতভাবে) কাশ্মীর পরিপূর্ণ স্বাধীন হয়ে যায়; না করলে বিশেষ মর্যাদা থাকে, যার কারণে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। মোদির চাই মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা। সাংবিধানিকভাবে তা সম্ভব নয়। সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা রেখেও সম্ভব নয়, না রেখেও সম্ভব নয়। মোদির সরকার প্রথমে সংবিধান থেকে ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করল, এরপর অসাংবিধানিক পন্থায় সেনা আগ্রাসনের মাধ্যমে কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিল। অর্থাৎ কাশ্মীরে ভারত-সরকার যা করছে, অসাংবিধানিক পন্থায় করছে। মজার ব্যাপার হলো, অসাংবিধানিক কাজগুলো করার জন্য সরকারকে সাংবিধানিক কিছু রীতি অনুসরণ করতে হলো।

যেহেতু সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা উৎপাটিত হওয়ার মাধ্যমে কাশ্মীর ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, সেহেতু এখন হিসাব অনুযায়ী কাশ্মীর দিল্লীর অধীনতামুক্ত স্বতন্ত্র একটি রাষ্ট্র। স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও কাশ্মীরে ভারতের সেনা উপস্থিতি বিদেশি আগ্রাসন বলে গণ্য।

বিষয়টা একদিক থেকে ইতিবাচক, কাশ্মীরের স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পথে আর ‘আইনগত’ বাধা থাকল না। আরেকদিক থেকে বিষয়টা নেতিবাচক, পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভারতের সেনা-আগ্রাসনের মাত্রা বাড়বে; ব্যাপক রক্তপাত ঘটবে। রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে নিরীহ জনগণের সংগ্রাম সফল হওয়ার নজির নিকট-অতীতে নেই, যদি না অন্য কোনো রাষ্ট্র পূর্ণ সামরিক শক্তি সহযোগে জনগণের পাশে দাঁড়ায়। দীর্ঘ মেয়াদি যুদ্ধের আশঙ্কা প্রবল। দুশ্চিন্তার বিষয়।

মিছিল-মিটিং একটি আইনানুগ ব্যাপার, আইন মেনে অন্যায়ের প্রতিবাদের একটি পন্থা। মুক্তিসংগ্রাম আইনানুগভাবে হয় না। মুক্তিসংগ্রাম যেহেতু দেশ থেকে মুক্তির জন্য হয়, ফলত মুক্তিকামীদের দেশের আইনের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে না। দেশ থেকে মুক্তি দেশের আইন রক্ষা করে চাওয়া যায় না। কাশ্মীরের যারা ভারতের সাম্প্রতিক সংসদীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মিছিল-মিটিং করছেন, তাদের কার্যক্রমের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি— তারা মুক্তিযোদ্ধা নয়; তারা গণতান্ত্রিক প্রতিবাদী। তারা ভারতকে নিজের রাষ্ট্র ভেবেই সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তবে সত্য হলো, কাশ্মীরিদের মুক্তি এই পথে আসবে না। গণতান্ত্রিক আইনানুগ পন্থায় তাদের মুক্তি আসার সম্ভাবনা থাকলে তা অনেক আগেই আসত। কাশ্মীর থেকে ভারতকে পুরোপুরি বিতাড়িত করতে পারলেই কাশ্মিরিরা যথার্থ স্বাধীনতার স্বাদ পাবে। আর তা অর্জনের একমাত্র উপায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। সেই দিক থেকে দেখলে কাশ্মীরের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক নেতারা কাশ্মীরের স্বাধীনতার পথে প্রধান না হলেও অনেক বড় বাধা।