কারাগারে অমিত মুহুরী হত্যা পরিকল্পিত কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ৩১ ২০১৯, ১০:২৮

 

আবির আবরার: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি সিআরবির জোড়া খুনের আসামি যুবলীগ নেতা অমিত মুহুরীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩২ নম্বর সেলের ছয় নম্বর কক্ষে ইটের টুকরো দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করা হয় এক সময়ের যুবলীগ কর্মী অমিতকে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

রিপন নাথ নামের ২৮ বছর বয়সী যে হাজতিকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে, তাকে বুধবার বিকালে ওই কক্ষে নেওয়া হয়। একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত এপ্রিল থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

বিকালে এসে রাতেই অপর একজন বন্দিকে কেন তিনি মাথায় আঘাত করলেন, কারা কক্ষে তিনি কীভাবে ইটের টুকরো হাতে পেলেন- এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত অমিতের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে রেলের দরপত্র নিয়ে জোড়া খুনসহ অন্তত ১৩টি মামলা আছে। হত্যা, পুলিশের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আগেও তিনি একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

সর্বশেষ নিজের বন্ধু ইমরানুল করিম ইমনকে হত্যার অভিযোগে ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ গ্রেপ্তার করে অমিতকে। তারপর থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন।

ওই বছর ৯ অগাস্ট নন্দনকানের হরিশ দত্ত লেইনে অমিতের বাসায় ইমনকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ ড্রামে ভরে সিমেন্ট ঢালাই করে ফেলে দেওয়া হয় এনায়েত বাজারের রানীর দিঘীতে।

এক মাসের মাথায় কুমিল্লার একটি মাদক নিয়াময় কেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অমিত বলেছিলেন, তার স্ত্রীকে ‘প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন’ ইমন। এ কারণেই তাকে হত্যা করেন তিনি।

সেই অমিতকে বুধবার রাতে হঠাৎ করেই গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ২৬টি সেলাই দিয়ে মাথার ক্ষত বন্ধ করলেও আঘাত গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নাশির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ৩২ নম্বর সেলের ছয় নম্বর কক্ষে রিপন নাথ নামে এক হাজতির সঙ্গে অমিতের মারামারি হয়। অমিতকে কারারক্ষীরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনায় রিপনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন জেলার নাশির আহমেদ। সেখানে বলা হয়েছে, একই কারাকক্ষে থাকা রিপন নাথ (২৮) ইট দিয়ে অমিতের মাথায় আঘাত করেন।

সীতাকুণ্ড উপজেলার মৃত নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে রিপন এক সময় পাহাড়তলীর সাগরিকা এলাকার অর্গানিক জিন্স নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। অশোভন আচরণের জন্য তাকে ওই কারখানা থেকে ছাঁটাই করা হয়।

পরে ছুরি হাতে ওই কারখানায় ঢুকে বেশ কিছু কর্মীকে জিম্মি করার অভিযোগে গত ৯ এপ্রিল রিপনকে গ্রেপ্তার করে পাহাড়তলী থানা পুলিশ।

বুধবার রাতে ওই কারা কক্ষে কী ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মাশহুদুল কবীরকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াছ হোসেন। এক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে মাশহুদুল কবীরকে।
দায়িত্ব পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার কারাগারের ওই কক্ষ ঘুরে দেখেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মশহুদুল। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন।

তিনি জানান, ৩২ নম্বর সেলের ছয় নম্বর কক্ষে আগে থেকে ছিলেন অমিত মুহুরী আর বেলাল নামের এক হাজতি। রিপন নাথ ছিলেন অন্য সেলে। বুধবার বিকাল ৪টার দিকে তাকে ছয় নম্বর কক্ষে স্থানান্তর করা হয়।

“রাতে তারা ভাত খেয়ে ঘুমাতে যায়। বেলাল ছিলেন মাঝখানে, রিপন ও অমিত তার দুই পাশে। বেলাল বলেছেন, তিনি হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান রিপন ইট দিয়ে অমিতকে মারছে।

“তখন বেলাল বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করেন এবং তার চিৎকারে কারারক্ষীরা এসে অমিতকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।”

তবে অমিতের সঙ্গে রিপনের কোনো বিষয়ে তর্কাতর্কি বা মারামারি হয়েছিল- এমন কথা বেলাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেননি।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মশহুদুল বলেন, কারাগারে সেলের ভেতরে ইট কীভাবে গেল, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ শুধু রিপনকে আসামি করে মামলা করেছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

“রিপন একা করেছে নাকি তার সাথে আর কেউ ছিল, সবকিছু মাথায় রেখে তদন্ত করা হবে। ঘটনাটি পরিকল্পিত কিনা তা আমরা দেখব।”