“আমি কিন্তু গুলি করা মানুষ, রিভলবার নিয়া ব্যাগের মধ্যে হাঁটা মানুষ” ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ২৬ ২০২১, ১৬:৫৯

দেশের অন্যতম শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের (ভিএনএসসি) অধ্যক্ষ কামরুন নাহার (মুকুল) ও এক অভিভাবকের মধ্যকার ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নিয়ে সারাদেশে রীতিমতো তোলপাড় চলছে।

ফোনালাপে অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের একাধিকবার নোংরা ভাষায় গালিগালাজ এবং সরকারি দলের ক্ষমতার দাপট ছিল স্পষ্ট।

৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড ধরে অধ্যক্ষ ও ভিএনএসসির অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর মধ্যে চলা ওই কথোপকথন সরাসরি তুলে ধরা হল—

কামরুন নাহার: লকডাউনের মধ্যে আমি অফিস করি কি না করি কার বাপের কী? কোন শুয়োরের বাচ্চার কিছু যায় আসে?

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু: না …

কামরুন নাহার: কোন শুয়োরের বাচ্চার যায় আসে কিছু? যদি আমি অফিস না করি? আমি জানতে চাই, কোন খানকির পোলার কী যায় আসে?

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু: এইডি তো আপনার জিবির (গভর্নিং বডি) লোক।

কামরুন নাহার: কোন খানকির পোলার কী যায় আসে? আমি রাজনীতি করা মেয়ে আমি কিন্তু ভদ্র না।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু: না…

কামরুন নাহার: আমি বলে দিলাম, আমি শিক্ষক। আমি প্রিন্সিপাল। আমি সেই দিকটায় আলাদা পরিচয়।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : এইডি তো আপনের…

কামরুন নাহার : ওই খানকির পোলা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু তার গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ব।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : না, আপনের বোধহয় ওই যে জিবির মেম্বারে এইগুলা ছড়ায় কি না দেখেন

কামরুন নাহার : কোন মেম্বার আর কোন মার ভাতার আমার দেখার কিন্তু বিষয় না। কোনো শুয়োরের বাচ্চা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব। ওকে দেশছাড়া করব। আমি শুধু ভিকারুন্নিসা না, আমি দেশছাড়া করব।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : ঠিক আছে আপা। এইটা ভালো।

ভাইরাল হওয়া ফোনালাপকে ‘সুপার এডিট’ বললেন ভিকারুন্নেসার অধ্যক্ষ কামরুন নাহার

কামরুন নাহার : এবং আমি অনেক সহ্য করেছি। এই কালকে সচিবের (শিক্ষা সচিব) কাছে বলে এসেছি। সচিব বলেছে মন্ত্রী তোমাকে খুব ভালোবাসে। তুমি এই জায়গায় থাকবা। আমি বলেছি, স্যার আমি বোর্ডেই থাকি। উনি বলছে, তুমি এইখানে থাকবা, তুমি যোগ্য, মন্ত্রী তোমাকে পছন্দ করেছে।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : আইচ্ছা।

কামরুন নাহার : আর কোনো শুয়োরের বাচ্চা যদি আমার পিছনে লাগে আমি কিন্তু দা দিয়ে কোপাবো তারে সোজা কথা।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : (হাসি)

কামরুন নাহার : আমার দল আছে। আমার বাহিনী আছে। আমার ছাত্রলীগ আছে, যুবলীগ আছে, আমার যুব মহিলা লীগ আছে।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : আফনে আবার…

কামরুন নাহার : কিন্তু কিচ্ছু লাগবে না। কাপড় খুইলা রাস্তার মধ্যে পিটাব।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : আফনে আবার আগের চরিত্রে চইলা যাবেন মুকুল আফা। হা হা…

কামরুন নাহার : হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ যাব। যাব। আমি কিন্তু একদম, আমি কিন্তু গুলি করা মানুষ। রিভলবার নিয়া ব্যাগের মধ্যে হাঁটা মানুষ। আমার পিস্তল বালিশের নিচে থাকত। সারারাত পিস্তল আমার বালিশের নিচে থাকত। আমি কিন্তু…

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : আমি নাজমারে ফোন করে কইতাসি মুকুল আফা চেইতা গেসে তুমি থামাও। তোমার জিএস রে (হাসি)।

কামরুন নাহার : হ্যাঁ। নাজমা আমারে বলসে। যে কেউ তরে ডিস্টার্ব করলে আমারে খালি বলিস। আমার নাজমাও লাগবে না। নাজমার গ্রুপের শুধু মেয়ে কালকে আমারে পরশু দিন অফিসে বসছি পরে আমারে বলতেছে আপা। আসবেন আমরা কাপড় খুইলা রাস্তার মধ্যে রাইখা পিটাব তারে। তার এত দুঃসাহস আপনার বিরুদ্ধে কথা বলে, আর আপনাকে ডিস্টার্ব করে। ঘরের থেকে টাইনা বাইর কইরা রাস্তার মধ্যে পিটাইয়া কাপড় খুইলা ফেলাব। আমার সম্পর্কে লেখে, আমার ঢাকা পতেঙ্গা ফেয়ারেল গলিতে চাইনিজ খাবার খাওয়াইসি। আর আমার সম্পর্কে লেখে, প্রিন্সিপাল অফিস করে না। কোন কুত্তার বাচ্চার মায়ের কোনে লিখেছি আমি। আমি আমার অফিস করি সচিবকে বইলা। করোনার মধ্যে, করোনার মধ্যে এই। করোনার মধ্যে আমার বারান্দার অফিসে আমি দরজা খুলে বসে থাকি, আমার চেয়ার টেবিল নিয়ে। আমি অফিসে গিয়ে রাউন্ড দিয়ে চলে আসি কর্মচারীরা ঠিকমতো আছে কি না। করোনার মধ্যে অফিসের নিয়ম নাই। আমাকে নিষেধ করছে সারা বাংলাদেশ যে করোনার মধ্যে তোমরা লকডাউনের মাঝে অফিস খোলা রাখবে না তাহলে করোনা ছড়াবে। কোন কুত্তার বাচ্চার কী যায় আসে? কোন শুয়োরের বাচ্চার কী যায় আসে? আমি অফিসে না গেলে মাগীর বাচ্চারা শুয়োরের বাচ্চারা কি আমার জায়গাটায় মজা পায়? কুত্তার বাচ্চাকে আসতে বলেন। কোন কুত্তার বাচ্চারা চায় যে আমি অফিসে বইসা অফিস করি, তাদের অফ করেন। কুত্তার বাচ্চা।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : ঠিক আছে আপা।

কামরুন নাহার : আমি রাজনীতি করা মেয়ে।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : আমি তো আছি আফনে এত…

কামরুন নাহার : আমি কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারে আসছি বলে কিন্তু…

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : আফনের চাইর নাম্বার গেইটের অপজিটে হইল আমার বাসা। এত চিন্তা করেন ক্যান? আমার দুই মিনিট লাগব যদি বসুন্ধরা…।

কামরুন নাহার : আমি কোনো চিন্তা করি না। কারণ আমি নিজেই শক্তিশালী। কোনো… কথায় আমি চলি না। কোনো খানকির মাগীর কথায় আমি চলি না। কোন শুয়োরের বাচ্চার কথায় আমি চলি না। আমি নিজেই কিন্তু শক্তিশালী। দলটার আমি প্রেসিডেন্ট ছিলাম। মনে রাইখেন এই দলটা এখন সরকারে। যতদিন এই দলটা আছে ততদিন আমার পাওয়ার আছে। আমি কিন্তু শুয়োরের বাচ্চাদের লেংটা করে রাস্তার মইধ্যে পিটাইতে পারব। আমার ছেলে লাগবে না। আমার দলের মেয়েদের ডাকলে দলের ছেলেও লাগব না। মেয়েরাই ওর চুল-দাড়ি ছিঁইড়া প্যান্ট খুলে নামাইয়া দিবে। আমার সম্ভবত তিন সপ্তাহ যেন দাঁড়াতে সাহস না পায়। আমি কিন্তু কোনো অন্যায়ের সাথে বসবাস করি না এইডা মনে রাইখেন।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : তয় নাসির যে…

কামরুন নাহার : আমার নামে যে লেখে কুত্তার বাচ্চারে আমি অনেক সহ্য করছি।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : তয় নাসির যে…

কামরুন নাহার : সচিব স্যারকে বলছি অসভ্যরা আমার পেছনে লাগে, আমারে আপনি ঢাকা বোর্ডে পোস্টিং দিয়ে দেন। স্যার বলছে, মন্ত্রী তোমাকে পছন্দ করে। আমাকে যেহেতু ধরতে গেলে থাকতেই হবে তাহলে কুত্তার বাচ্চাদের সাথে লইড়াই আমি থাকব।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : না… নাসির যে এত চিল্লাচিল্লি করল আপনি নাসিররে কিছু কইলেন না ক্যান?

কামরুন নাহার : কোনো নাসির ফাসিররে আমি চিনি না। নাসিররে কী বলব তা আমি বুঝি। কেউ যেন আমার পেছনে লাগে না আপনি নিষেধ কইরে দিয়েন। আপনার সঙ্গে যারাই বলবে নিষেধ করে দিবেন।

মীর সাহাবুদ্দিন টিপু : না, তা তো বলবই। আফনে রোববারে ইস্কুলে আইলে আমারে একটু ফোন কইরেন।

কামরুন নাহার : স্কুল করব কি না করব তা আমার এখতিয়ার, আমি বসব কি না বসব। আমি সচিবকে বলছি, সচিব স্যার আমি বাসায় বসে অফিস করি। বলে, যে বাসাটা দেয়া হইসে বাসায় বইসা অফিস করবা। যখন সুবিধা অফিসে যাবা এখন করোনার মধ্যে। তুমি এই নিয়া চিন্তা কইরো না। আমরা অফিস করি না মাসে একবার-দুবার আসি জরুরি মিটিং থাকলে। আর শুয়োরের বাচ্চারা সারাক্ষণ কয় আমি অফিসে যাই না, অফিসে যাই না।

উল্লেখ্য, সংলাপে নাজমা সম্বোধনে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তারকে এবং নাসির সম্বোধনে স্কুলের গভর্নিং বডির নবর্বাচিত সদস্য সিদ্দিকী নাসির উদ্দিনকে বোঝানো হয়েছে।