কলম আর মাইক্রোফোন এখন আমাদের হাতেও আছে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ০৫ ২০১৮, ১৪:২৯


ক’বছর আগে ঈদুল আযহাতে এক মন্ত্রী বললেন, আগামী কাল জানাজার নামাজ এতোটার সময়। জানতে ইচ্ছে করে আমাদের দেশের কজন রাজনৈতিক নেতা বলতে পারবেন, ঈদের নামাজ ও জানাজার নামাজের প্রার্থক্য?

আমি বিশ্ববিদ্যালয়েররএক বিভাগীয় চেয়ারম্যান প্রফেসর কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সবাক্ষনিক মুসলমানদের ফরজ আমল কয়টি, তিনি বললেন,৫ওয়াক্ত নামাজ পড়া।

হজ্জে যাচ্ছেন এক বড় নেতা, তাকে বললাম ভাইজান হজ্বের তালকিন কি? তিনি বললেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

আমার এক সাংবাদিক বন্ধু ধর্ম নিয়ে কেবল বকবক বিশ্লেষন করেন, একদিন বললাম ভাই ফজরের নামাজ কয় রাকাত, তিনি বললেন, ৬রাকাত।

একজন কাষ্টম অফিসার আমার এক বন্ধুকে একদিন রাগ করেই বলেছিলাম, দোস্ত ক তো গোসলের ফরজ কয়টি, সে বলল ৫টি।

এসব কিন্তু বানানো গল্প বলছি না, দুনিয়াবি মোহগ্রস্থ জীবন থেকে পবিত্র জীবনে ফিরিয়ে আনতে বছরের পর বছর নির্মোহ দরদের সাথে তাবলীগে নিয়ে গিয়ে মোজাকারাতে বসে এসব চিত্র দেখছি বহুবার।

এসএসসি পরিক্ষা বা এইস এস সি অথবা অর্নাস মাস্টার্স করা ছেলে গুলো তাবলীগে যাবার পর দেখে যায় এরা নবীর নাম বলে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি কিংবা শাহজাজাল রাযিআল্লাহু আনহু।

তাদের নিয়ে আমরা কখনো তামশা করি না বরং সংশোধনের চেষ্টা করি পরম মমতায়। কারন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদেরকে প্রর্যাপ্ত ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয় না, তাই এসব নিয়ে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে তাদেরকে লজ্জাদেয়া কোন সুস্থ বিবেকবোধ সম্পর্ন্ন মানুষের কাজ নয়।

তেমনিভাবে মাদরাসায় ছেলেদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়। জাগতিক শিক্ষা কিছুটা রয়েছে। আরো সংস্কারেরর জন্য আমরা কাজও করছি। প্রযোজন মুক্তিযুদ্ধ ও দেশাত্ববোধক আরো পাঠদানের, এটা সত্য। তবে মাদরাসার শিশুদের নিয়ে আমাদের দেশের কিছু মুন্নিসাহা টাইপের সাংবাদিক ও মিডিয়া মারত্নক হলুদ সাংবাদিকতায় ব্যস্থ।

মাদরাসায় কোমলমতি ছেলেদের, কি শিক্ষা দেয়া হয় বা হয় না, এমন প্রশ্ন করা অবান্তর ও অপ- সাংবাদিকতা। কারন সাংবাদিকতার জ্ঞান আমাদের শিক্ষা দিতে হবে না। ভালই জানা আছে। কিছুদিন সাংবাদিকতার প্রশিক্ষনও করিয়েছি। অবুজ শিশুদের দেশের ইতিহাস নিয়ে এলোপাতাড়ি প্রশ্ন করে তাকে নাজেহাল করা কোন শুদ্ধ সাংবাদিকতার নীতি হতে পারে না। সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতার ২০ বছর পার করছি।

কওমী সিলেবাস নিয়ে কথা বলতে হলে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনদের সাথে আলোচনা করুন। গ্রামের অশিক্ষিত মানুষ আর অবুজ শিশুদের সাথে নয়। বরং তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য শিক্ষা বঞ্চিত এক নিভৃত পাড়া গায়ে শিক্ষার আলো জ্বালানোর চেষ্টা করার জন্য। গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা না করে মাদরাসা কেন করেছেন? এমন প্রশ্ন শিক্ষার আলোহীন এই গ্রামে করা অবান্তর। মাদরাসা হবার আগে তাদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার নিয়ে আপনার ক্যামেরা কোথায় ছিল?

খামাকা শিশুদের সাথে প্যাচাল করে পানি ঘোলাটে করে মাছ শিকারের চেষ্টা করবে না। অনেকদিন এভাবে পানি ঘোলাট করে বলেছিলেন, “কওমী মাদরাসা জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র” আপনাদের সে মিশন ব্যর্থ প্রামান হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাষ্টের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা বলছেন, “জঙ্গি কোন মাদরাসয় তৈরি হয় না। মাদরাসায় আর্দশবান সুনাগরিক তৈরি হয়।”আর সারা দেশের আলেমরা যখন দেশপ্রেমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদের বিরোদ্ধে সংগ্রাম করছেন তখন কিছু মিডিয়া ঠিকই কওমি মাদরাসা নিয়ে নতুন এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমছেন।

কিছু নীতিমালা ভঙ্গ করে কোমলমতি গ্রামের মাদসার শিশুদের প্রশ্নবানে জর্জরিতত করে বলেছেন, হুজুররা তাদের ব্রেইন ওয়াশ করে দিয়েছে।

আসলে ওয়াশ নয় ব্রেন ডিমেজ মুন্নীদেরই। চিকাৎসা প্রযোজন। এরা এক্সিডেন্টে মারত্মক আহত মৃত্যুপথ যাত্রীকে টিভির মাইক্রোফোন মূখে ধরে প্রশ্ন করে বসে ‘আপনার এখন অনুভূতি কেমন? কিভাবে এক্সিডেন্ট হল। এরা কতোটা মানবতাহীন এসব তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। এরা কেবল মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে নেগেটিভ দিকগুলো উপস্থাপন করতেই সবর্দা প্রস্তুত থাকে ভয়ংকরভাবে। মাদরাসার ছাত্রদের দেশপ্রেম নিয়ে তাদের যত মাথাব্যাথা।

কিছুদিন পূর্বে এসএসসিতে জিপিও ৫প্রাপ্ত অসংখ্য ছেলেদের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শোক দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্টপতির নাম জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল একটি টিভি চ্যানেলের সামনে, তাদের কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারেন নি। এই হল বাংলাদেশের মেট্টিক পাশ মেধাবীদের ইতিহাসের জ্ঞানের দৌড়।

তাহলে এসব সাংবাদিকরা, গ্রামের মাদরাসার ক্লাস টুতে পড়া ছোট্ট শিশুটিকে প্রধানমন্ত্রীর নাম জিজ্ঞেসা করে, না পরায় এটাকে হাইলাইট করার কি আছে? নিজেদের চরকায় তেল দিন। কওমী মাদরাসাতে যতেষ্ট তেল আছে। লাগলে নিতেও পারবেন।

স্কুলের মেট্টিক পরিক্ষা দিয়ে ছেলেরা তাবলীগে গিয়ে বাংলা ফাজায়েলে আমল কিতাব রিডিং পড়তে পারেনা । যা কওমী মাদরাসার ৫মশ্রেনীর ছাত্রটি তাদের চেয়ে অনেক ভাল পড়তে পারে। তাদের হাতের লেখা আমাদের নুরানীর শিশুদের চেয়ে খারাপ।

আপনারা যদি এভাবে অপ সাংবাদিকতা করেন কওমীর সহজ সরল গ্রামের ছোট ছোট ছেলেদের নিয়ে। আর তা মিডিয়াতে রং লাগিয়ে হাইলাইট করেন। তা যদি বন্ধ না করা হয়। তাহলে সেদিন বেশি দুরে নয় আমরা নিউজ সাজাব এভাবে…

“৫০বছর ধরে নাপাক অবস্থায় জীবন পার করছেন (এতো…জন) বিশিষ্টজনরা…”

কেবল ফরজ গোসল নিয়ে প্রশ্ন করলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। দেখা যাবে আদমশুমারির মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের ধর্মের দৌড়। আমরা তাদের মতো হলুদ সাংবাদিকতা করতে চাই না। কিন্তু বাধ্য করলে, আমরাও একদিন, আপনাদের মতো এরকম নষ্ট নিউজ তৈরি করতে বাধ্য হব!

ইদানিং কিছু টিভি প্রত্যান্ত গ্রামের ছোট ছোট অবহেলিত কওমী মাদরাসা নিয়ে কিছু নিউজ নাটক তৈরি করেছে। পরে তা টিভিতে প্রচার করে এবং মাদরাসার সাথে সংশ্লীষ্ট খেটে খাওয়া গ্রামের মানুষ ও অবুজ শিশুদের মাদরাসা শিক্ষা, তাদের স্বপ্ন ভবিষৎ পরিকল্পনা নানন প্রশ্নবানে জর্জরিত করে বির্তক তৈরির চেষ্টা করেছে।
সেই গ্রামের সহজ সরল মানুষ আর অবুজ মাদরাসার শিশুদের পক্ষ থেকে মুন্নী শাহাকে কবি হেলাল হাফিজের কবিতাটি উৎসর্গ করলাম।

‘যার যেখানে জায়গা’
– হেলাল হাফিজ
“ভুলায়া ভালায়া আর কথা দিয়া কতোদিন ঠিকাইবেন মানুষ
ভাবছেন অহনো তাদের অয় নাই হুঁশ।
গোছায়া গাছায়া লন বেশিদিন পাইবেন না সময়
আলামত দেখতাছি মানুষের অইবোই জয়।

কলিমুদ্দিনের পোলা চিডি দিয়া জানাইছে, -‘ভাই
আইতাছি টাউন দেখতে একসাথে আমরা সবাই,
নগরের ধাপ্পাবাজ মানুষেরে কইও রেডি অইতে
বেদম মাইরের মুখে কতোক্ষন পারবো দাঁড়াইতে।

টিকেটঘরের ছাদে বিকালে দাঁড়ায়া যখন যা খুশি যারা কন,কোনদিন খোঁজ লইছেন গ্রামের লোকের সোজামন
কী কী চায়, কতখানি চায়
কয়দিন খায় আর কয়বেলা নাখায়া কাটায়।

রাইত অইলে অমুক ভবনে বেশ আনাগোনা, খুব কানাকানি,
আমিও গ্রামের পোলা চুতমারানি গাইল দিতে জানি।”

তাই বাঘের লেজ ধরে খোঁচাবেন না,
কলম আর মাইক্রোফোন এখন আমাদের হাতেও আছে।

সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ
লেখক, উপন্যাসিক,
কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব,আলেম মুক্তিযুদ্ধা প্রজন্ম ফোরাম