করোনাকালে ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ পাননি ৬৯ ভাগ ব্যবসায়ী

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ১৭ ২০২১, ১২:৩১

করোনাকালে ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ পাননি ৬৯ ভাগ ব্যবসায়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাকালে প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পেয়েছেন ২২ শতাংশ ব্যবসায়ী। ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন তারা প্রণোদনা প্যাকেজ পাননি এবং ৯ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন তারা প্যাকেজ সম্পর্কে জানেন না। জরিপকৃত বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ ৪৬ শতাংশ, মাঝারি ২৮ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও ছোট প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা পেয়েছে।

করোনা মহামারির সময়ে ব্যবসায় আস্থা-সংক্রান্ত তৃতীয় পর্যায়ের জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে। মঙ্গলবার জরিপের ফল প্রকাশ করে সানেম ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন। জরিপে উঠে আসে ২০২০ সালের এপ্রিল-জুনে প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্সের (পিবিএসআই) মান ছিল ২৯.৪৮, ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে মান ছিল ৪৭. ৯৬ এবং ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে মান ছিল ৪৮.৮৩। এর অর্থ ২০২০ সালের এপ্রিল-জুনের তুলনায় অক্টোবর-ডিসেম্বরে ব্যবসার পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এপ্রিল-জুনের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে যে গতিতে ব্যবসার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর-ডিসেম্বরে ব্যবসার পরিস্থিতি সে গতিতে উন্নতি হয়নি। ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে মুনাফা, কর্মসংস্থান এবং মজুরি সূচকের মান কিছু উন্নতি হয়েছে, তবে ব্যবসার খরচ সূচকের মানের অবনতি ঘটেছে।

বিভিন্ন খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতির মাঝে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। ফার্মাসিউটিক্যাল, আর্থিক খাত ও টেক্সটাইলে দ্রুতগতির পুনরুদ্ধার দেখা যাচ্ছে। ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তুলনামূলকভাবে কিছু বেশি আস্থা পেয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকৃত  ৭১ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে। যার মধ্যে ১৫ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন, এই পুনরুদ্ধার হচ্ছে দুর্বল মানের, ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হচ্ছে মাঝারি মানের, ১৬ শতাংশ মনে করছেন এই পুনরুদ্ধার হচ্ছে শক্তিশালী। জরিপে পাওয়া তথ্যাবলি থেকে ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে ‘এনাবলিং বিজনেস এনভায়রনমেন্ট ইনডেক্স (ইবিআই)’ তৈরি করা হয়েছে। সূচকগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ, পরিবহন, দক্ষ শ্রমিক, প্রোপার্টি রেজিস্ট্রেশন, অর্থায়নের সুবিধা, কর ব্যবস্থা, লজিস্টিকস, দুর্নীতি, সরকারি নীতি সহায়তা এবং করোনাভাইরাস মহামারির ব্যবস্থাপনা। ইন্ডেক্সটির মানদন্ড ০ থেকে ১০০-এর মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ইন্ডেক্সের মান বাড়ার অর্থ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার পরিবেশ আগের তুলনায় ভালো হয়েছে, কমার অর্থ ব্যবসার পরিবেশ আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে।

২০২০ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ইবিআই ছিল ৪৫.১৯। সেটি ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরের প্রান্তিকে কমে হয়েছিল ৪৪.৬১ এবং ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের আরেক দফা কমে হয়েছে ৪৩.৩৯। রেস্টুরেন্ট, রিয়েল এস্টেট, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে ইবিআই সূচকের মান সবচেয়ে কম ছিল। অন্যদিকে আর্থিক খাত, ফার্মাসিউটিক্যাল, তৈরি পোশাক খাত এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে তুলনামূলক ইবিআই সূচকের মান বেশি পাওয়া গেছে। বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের ইবিআই সূচকের মান মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পেয়েছেন, তাদের ইবিআই সূচকের মান যারা প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পায়নি তাদের তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে। জরিপের ফলের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, ইবিআই সূচকের সঙ্গে প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্সের (পিবিএসআই) ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। এটি নির্দেশ করে যে ব্যবসার সামগ্রিক পরিস্থিতি উত্তরণে ইবিআই সূচকে উন্নয়ন আবশ্যক।

ওয়েবিনারে জরিপের ফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। আলোচক হিসেবে ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন এ কে খান টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম খান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার ফারজানা খান, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট আরশাদ জামাল দিপু।

জরিপের ফল উপস্থাপনে ড. সেলিম রায়হান তৃতীয় পর্যায়ের জরিপ সম্পর্কে ধারণা দেন। বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের ৩৬টি জেলার মোট ৫০২টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫২টি উৎপাদন খাতের এবং ২৫০টি সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন খাতের তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা প্রকৌশল ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেবা খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশন, আর্থিক খাত ও রিয়েল এস্টেট খাত জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারির ৫ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদাধিকারীদের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

ড. সেলিম রায়হান চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল, পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন, তৈরি পোশাক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রিয়েল এস্টেট খাতে অগ্রাধিকার প্রদানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। এই খাতগুলোতে দীর্ঘ সময়ের জন্য সুদ হার কমানো, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠনের কথা তিনি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে এসএমই খাতে ঋণ ও প্রণোদনা প্রাপ্তি বাড়ানোর ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।

জরিপের উত্তরের ওপর ভিত্তি করে সানেম তিনটি সূচকের মাধ্যমে তাদের গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেছে প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্স বা পিবিএসআই (বার্ষিক), প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্স বা পিবিএসআই (ত্রৈমাসিক) এবং বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স (পরবর্তী তিন মাস)। এর মধ্যে পিবিএসআইয়ের (বার্ষিক) মাধ্যমে ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের সঙ্গে ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের ব্যবসার অবস্থার তুলনা করা হয়েছে।

পিবিএসআই (ত্রৈমাসিক) ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের সঙ্গে ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরের ব্যবসার অবস্থার তুলনা করা হয়েছে। অন্যদিকে বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স বা বিসিআই ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চের ব্যবসায় আস্থা তুলনা করা হয়েছে। প্রতিটি সূচকই ০-১০০র মধ্যে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৫০-এর বেশি মানে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, ৫০-এর নিচে মানে অবস্থার অবনতি হচ্ছে।