করোনা ভীতি আল্লাহ তা’আলাকে ভয়ের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ২০ ২০২০, ১৮:০৭

আব্দুল কাদির আল মাহদি;

ভয় হচ্ছে মানুষের স্বভাবগত একটি গুণ। ভয়ের ভিবিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন- অভাবের ভয়, মৃত্যুর ভয়, ভবিষ্যতের ভয়, অসুস্থতার ভয় ইত্যাদি।

করোনা ভাইরাসের সাধারন ও বিশেষ অবস্থা আছে। এই ভাইরাস সবাইকে ভয় দেখিয়েছে। সবাই ভীত অবস্থায় জীবনযাপন করছে এবং এর থেকে বাঁচার উপায় খুঁজছে। এটা অবশ্যই ভালো লক্ষন। এরকম সংক্রামিত ভাইরাস বা মাহামারী থেকে সচেতন থাকা জরুরী।

এই ভাইরাস মানুষের ইচ্ছার বাহিরে পৃথীবিতে এসেছে। মুমিনদের জন্য আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে পরিক্ষা। হয়ত এর ভিতরে অনেক ভালো দিক রয়েছে।

এরকম রোগ মুমিনের জন্য ভালো যদি রোগ প্রতিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের পরও আক্রান্ত হয়ে যায়। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা) একদিন উম্মুস সায়িব কিংবা উম্মুল মুসায়্যিব (রা) এর ঘরে প্রবেশ করলেন। তিনি তাকে বললেন, “তোমার কি হয়েছে হে উম্মুস সায়িব অথবা উম্মুল মুসায়্যিব! এতো নড়াচড়া করছ কেন? (অর্থাৎ তুমি কাঁদছ কেন?)” তিনি বললেন, ভীষণ জ্বর। একে আল্লাহ ধ্বংস করুন। তখন রাসুল (সা) বললেন, “তুমি জ্বরকে গালি দিয়ো না। কেননা জ্বর আদম সন্তানের গুনাহসমূহ এমনভাবে মোচন করে দেয়, যেভাবে কামারের হাঁপর লোহার মরিচা দূর করে দেয়।” (মুসলিম)

আমরা কেন করোনা ভাইরাসকে ভয় করবো? এটি তো আমাদের ঐচ্ছিক কোন কিছু না! যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার উপর এর প্রতিক্রিয়া আসিয়া পড়ে। এরকারনে আমার গুনাহ মাফ হবে এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট আমার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।

আমরা কি করোনা ভাইরাসকে ভয় করছি? যদি জবাবে আসে,হ্যাঁ!

তাহলে আল্লাহ তা’আলার এসব ঘোষণা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, যেখানে আল্লাহ তা’আলা আমাদের ভয় দেখাচ্ছোন।

أَتَخْشَوْنَهُمْ ۚ فَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَوْهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ

তোমরা কি তাদের ভয় কর? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহ, যদি তোমরা মুমিন হও। (আল কোরআন ৯/১৩)

আমাদের আশপাশ প্রতিনিয়ত অসংখ্য-অগনিত অন্যায় হত্যাযজ্ঞ হচ্ছে, সেগুলোকে কেন ভয় পাচ্ছি না? অথচ অন্যায়ভাবে হত্যাকে করোনা থেকে আরও বেশি ভয় পাওয়ার কথা। কেননা আল্লাহ তা’আলার ঘোষণা-

وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا

যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (আল কোরআন ৪/৯৩)

মানুষ সুদে ভরপুর সমাজে বসবাস করছে। ভয় যদি করতে হয় তাহলে সুদের কুফলকে করোনা থেকে বেশি ভয় করার কথা। অথচ মানুষ নির্ভয়ে জীবনযাপন করছে। যেখানে আল্লাহ তা’আলার ঘোষণা করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ. فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ

হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। (আল কোরআন ২/ ২৭৮,২৭৯)

মানুষ করোনাকে ভয় পাচ্ছে। অথচ ইয়াতিম অসহায়দের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে ভক্ষণ ও আত্মসাত করছে। যে গুণ করোনা থেকে ভয়ঙ্কর। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার ঘোষণা-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ ۚ وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا

হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (আল কোরআন ৪/২৯)

করোনা থেকে আরও ভয়ঙ্কর হচ্ছে চুরি, ডাকাতি। অথচ এগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজে স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে। এগুলোকে কি ভয় করা উচিত নয়? এসবের ব্যাপারে সতর্কতা কি জরুরী নয়?

রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। যখন ডাকাত এভাবে ডাকাতি করে যে, যখন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে তখন তার ঈমান থাকে না। (সহিহ মুসলিম)

অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে করোনা থেকে বেশি ভয় করার দরকার ছিল। মানুষ কি এগুলোকে ভয় করছে? অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা আজ স্বাভাবিক হয়েগেছে। অথচ আল্লাহ তা’আলা বার বার সতর্ক করে যাচ্ছেন । আল্লাহ তা’আলার বানী-

وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا

يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا

যারা ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। (আল কোরআন ২৫/৬৮,৬৯)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, যিনাকারী যখন যিনা করে তখন আর সে ঈমানদার থাকে না।

করোনাকে যেভাবে ভয় করছি, জুলুম-অত্যাচারকে কি সেভাবে ভয় করছি? সমাজটা আজ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জুলুম-অত্যাচারে ভরে গেছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন-

وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ ۚ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصَارُ

مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ ۖ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاء

জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না তাদেরকে তো ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে।

তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত-বিহবল চিত্তে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না এবং তাদের অন্তর উড়ে যাবে। (আল কোরআন ১৪/৪২)

করোনাকে যেভাবে ভয় করছি, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ বন্ধ করার ভায়াবহতাকে সেভাবে ভয় করতে হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন-

لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ

كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ

বনী-ইসলাঈলের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে দাউদ ও মরিয়মতনয় ঈসার মুখে অভিসম্পাত করা হয়েছে। এটা একারণে যে, তারা অবাধ্যতা করত এবং সীমা লংঘন করত।

তারা পরস্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না, যা তারা করত। তারা যা করত তা অবশ্যই মন্দ ছিল। (আল কোরআন ৫/৭৮,৭৯)

আমাদের সমাজে ফেতনা ফাসাদ বেড়েই চলছে। করোনার ভায়াবহতা অনুভব করা চেয়ে ফেতনাময় এ সমাজের ভয়াবহতা বেশি অনুভব করা দরকার। আল্লাহ তা’আলা বলেন-

‎وَفِرْعَوْنَ ذِي الْأَوْتَادِ (10) الَّذِينَ طَغَوْا فِي الْبِلَادِ (11) فَأَكْثَرُوا فِيهَا الْفَسَادَ (12) فَصَبَّ عَلَيْهِمْ رَبُّكَ سَوْطَ عَذَابٍ (13)

বহু কীলকের অধিপতি ফেরাউনের সাথে যারা দেশে সীমালঙ্ঘন করেছিল অতঃপর সেখানে বিস্তর অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। অতঃপর আপনার পালনকর্তা তাদেরকে শাস্তির কশাঘাত করলেন। (আল কোরআন ৮৯/ ১০,১১,১২,১৩)

উপরোক্ত স্বভাবগুলো আমরা স্বাভাবিকভাবে মেনেই চলছি। এগুলো হচ্ছে পরোক্ষ ভাইরাস বা পরোক্ষ রোগ ব্যাধি। কিন্তু একটিবারও কি চিন্তা করছি, এর কুফল, এর ভয়াবহতা নিয়ে? করোনা এসে আমাদের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে যে আমরা পরোক্ষ ভাইরাস ব্যপারে যেন সব সময় সচেতন থাকি। আল্লাহ তা’আলার ভীতি যেন আমাদের দিলে রাখি।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে যেন আল্লাহ ভীতি জীবন দান করেন। আমিন

দারুল কোরআন ইসলামিক সেন্টার বার্সেলোনা থেকে আব্দুল কাদির আল মাহদি প্রদত্ত খুতবা