কওমি মাদ্রাসা ইসলাম রক্ষার ক্যান্টনমেন্ট

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ১৭ ২০২০, ১৯:৩৮

।। জুবের আহমদ ।।

বর্তমান বিশ্বে শান্তির ধর্ম ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে শেখা ও শেখানোর একমাত্র জনপ্রিয় মাধ্যম কওমি মাদ্রাসা। ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের জন্য কওমি মাদ্রাসা একটি বলিষ্ঠ ক্যান্টনমেন্ট। যেকোনো ধরনের বাতিল ও পথভ্রষ্ট দলের বিরুদ্ধে কওমি মাদ্রাসা সবসময়ই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতির নিঃস্বার্থ পথপ্রদর্শক এই কওমি মাদ্রাসা।

কওমি মাদ্রাসা মানে জাতীয় শিক্ষালয়। জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে জাতীয় এই শিক্ষালয় পরিচালিত হয় সংশ্লিষ্ট জাতির‌ অর্থ ও সার্বিক সহযোগিতায়। কওমি মাদ্রাসা এতিমদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। কওমি মাদ্রাসায় সবার জন্য সম্পূর্ণ ফ্রিতে থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করে থাকে। পড়ার জন্য কিতাব, বসার জন্য টেবিলের ব্যবস্থা পর্যন্ত ফ্রিতে করা হয়ে থাকে কওমি মাদ্রাসায়। কওমি মাদ্রাসার ভেতর-বাহিরের সব তথ্য তাই সকলেরই জানা। যে কারণে কওমি মাদ্রাসা নিয়ে যে কেউ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করলে তারা নিজেদের দুনিয়া ও আখেরাতকে কেবল ধ্বংস‌ই করবে, এটাই স্বাভাবিক।

কওমি মাদ্রাসা নিয়ে যাদের চুলকানি আছে বা কওমি মাদ্রাসাকে যারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, যারা বলে কওমি মাদ্রাসা যাকাত, কুরবানীর চামড়া কিংবা খয়রাত দিয়ে চলে; তাদেরকে বলছি- আপনি কি জীবনে কওমি মাদ্রাসায় কোন কিছু দান করেছেন কিংবা আপনার পরিবার করেছে? যদি করে থাকেন, তাহলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। কেননা আল্লাহ আপনাকে তওফিক দিয়েছেন দান করার। হয়তো এই দানের উসিলায় কেয়ামতের ময়দানে নাজাত পেয়ে যেতে পারেন। আর যদি দান করার পরও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার আচরণ ছোটলোকি আচরণ বৈ কিছু নয়। কেননা ছোট লোকেরাই দান করার পর নাক সিটকায়, খয়রাতি বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে।

আর যদি আপনি কিংবা আপনার পরিবার জীবনেও কওমি মাদ্রাসায় দান না করে থাকেন, তাহলে আপনাকে কে অধিকার দিয়েছে কওমি মাদ্রাসাকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার! এই যে বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ গরীব মিসকিন অসহায় ছেলেদেরকে লেখাপড়ার সুযোগ কওমি মাদ্রাসা করে দিয়েছে, তাতে তো রাষ্ট্র এবং সমাজ কওমি মাদ্রাসার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার কথা। এই কাজটি তো সমাজ এবং রাষ্ট্রের করার কথা। নাকি আপনি করতেন? এমন কিছু করার কথা কখনও ভেবেছেন আপনি?

আল্লাহ যে আপনাকে দয়া করে টাকা পয়সার মালিক বানিয়ে দিয়েছে, বলেন তো জীবনে কয়জন গরীব মিসকিন কে সাহায্য করেছেন? কয়জন ছেলের আজীবন লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছেন? বলতে পারবেন করেছেন ? তাহলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন কেন?

আপনারা যারা মনে করেন, কওমি মাদ্রাসা স্রেফ কুরবানীর চামড়া আর খয়রাতের টাকায় চলে তারা সম্পূর্ণ ভুলের মধ্যেই আছেন। গত কয়েক বছর ধরেই তো কুরবানির চামড়ার দাম পাওয়া যায় না। বিক্রি করে টাকা পাওয়া তো দূরের কথা, মানুষ দামের কারণে চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলো। চামড়া বিক্রির টাকা না পেয়ে কোন কওমি মাদ্রাসা কি বন্ধ হয়ে গেছে?

কোন অজুহাত পেলেই তো আপনারা ফেইসবুক জুড়ে কওমি মাদ্রাসায় দান বন্ধের আহ্বান জানান। বলেন তো , এই কয় বছরে চামড়া আর দানের অভাবে কতোটা মাদ্রাসা বন্ধ হয়েছে? কওমি মাদ্রাসা দানের কারণে বন্ধ হবে না, যদি হয় তবে তা হবে তাক্বওয়া এবং এখলাছের কারণে।

এই কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে যারা আলিম হয়, তারা হয় দ্বীনের পাহারাদার। তাই চাইলেও কোনো বাতিল দ্বীনের ভিতরে নতুন কোন নিজস্ব মতবাদ চালু করার সুযোগ পায় না। তাই তারা কওমিওয়ালাদের প্রতিপক্ষ ভাবে। গালি আর মুনাফিকের তকমাও অনেকের কপালে জোটে, তবুও তারা পাহারাদারি থেকে পিছ পা হন না। পাহারাদাররা ভালোভাবেই জানে কোনটা দ্বীন আর কোনটা নিজস্ব মতবাদ? সুতরাং সেখানে যোজন কিংবা বিয়োজনের কোন সুযোগ নেই।

পরিশেষে যেসব ভাইয়ের কওমিদের নিয়ে চুলকানি তাদের বলবো- ভাই! পারলে ভালো কাজের সহযোগিতা করুন, কেন শুধু শুধু বিরোধিতা করেন? কেন উলামাদের গালি দেন? কেন তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন? একবারের জন্যও কি চিন্তা করেছেন, আমি তাকে কেনো গালি দিচ্ছি? কেনো তাদের প্রতি বিদ্বেষ পুষে রাখছি?

মনে রাখবেন, উলামাগণ হচ্ছেন নবীদের ওয়ারিশ। তাদের দিকে তো মহব্বতের নজরে তাকানোর কথা, হিংসা কিংবা বিদ্বেষের নয়। যদি বিদ্বেষ রাখি তাহলে রাসূলের বাণীর বিপরীতে আমার অবস্থান হবে। সুতরাং সাবধান ভাই, শুধু শুধু কেন আমাদের আমল বরবাদ করছি! আল্লাহ যেন আমাদের সকলকে সঠিক বুঝার এবং আমল করার তওফিক দান করেন। আমিন।

সম্পাদনা: ইলিয়াস সারোয়ার
নির্বাহী সম্পাদক, একুশে জার্নাল ডটকম