ওসমানীনগরে গবাদি পশুর ভ্যাকসিনে নেয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ১৩ ২০২১, ১৯:০৪

আহমদ মালিক, ওসমানীনগর প্রতিনিধি: ওসমানীনগর উপজেলায় গবাদি পশুর ভ্যাকসিনে ইচ্ছেমত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন পশুর মালিকরা। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেনারী ফিল্ড এসিস্ট্যান্ট (বিএফএ) কামরুল ইসলাম তড়কা ও ক্ষুরা রোগের টিকা প্রয়োগ করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পশুর মালিকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এনিয়ে গবাদি পশুর মালিক ও খামারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, তড়কা রোগের ১০০ মিলি ১০০ মাত্রার টিকার মূল্য ৫০টাকা। প্রতি মাত্রার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ পয়সা। যা ১ মিলি করে ১শ টি গরুকে প্রয়োগ করা যায়। ক্ষুরা রোগের বাইভ্যালেন্ট ১০০মিলির ১৬ মাত্রার টিকার মূল্য ৯৬টাকা ও ট্রাইভ্যালেন্ট ১০০ মিলির ১৬ মাত্রার টিকার মূল্য ১৬০টাকা। প্রতি মাত্রার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬টাকা। তবে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বলছেন প্রতি মাত্রার মূল্য ১০টাকা। যেটি ১ মিলি করে ২০টি গরুকে প্রয়োগ করা যায়। পশু মালিকদের কাছ থেকে টিকার মাত্রা প্রতি এই ফি নিয়ে টিকা প্রয়োগ করে প্রতিটি টিকার বিপরীতে সরকারি কোষাগারে ১৬০টাকা জমা প্রদানের নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু ওসমানীনগর উপজেলার পশু মালিকদের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে এসব টিকায় অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে গবাদি পশুর মালিকদের কাছে তড়কা ও ক্ষুরারোগের এই টিকা বিক্রি করা হলে অনুরুপভাবে সরকারি কোষাগারে টিকা প্রতি ১৬০ টাকা করে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে।

উপজেলার কোনো এলাকায় গিয়ে তড়কা বা ক্ষুরা রোগের টিকা প্রয়োগ করার আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিকে লিখিতভাবে অবহিত করে জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষর নিয়ে এলাকায় প্রচারণা করে টিকা প্রয়োগের নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের কর্মকর্তাসহ ভেটেনারী ফিল্ড এসিস্ট্যান্ট (বিএফএ) কামরুল ইসলাম সেই নির্দেশ মানছেন না বলে জনপ্রতিনিধি ও পশু মালিকরা অভিযোগ করেছেন। এবিষয়ে উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সৈয়দ মাসুদ আলী বলেন, ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়ে আমাকে অবহিত করা হয়নি।

ভ্যাকসিনে বাড়তি টাকা আদায়ের বিষয়ে উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের সৈয়দ মান্দারুকা গ্রামের সুমন আহমদ সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট মৌখিক অভিযোগও করেছেন। এবিষয়ে উমরপুর ইউনিয়নের সৈয়দ মান্দারুকা গ্রামের মোস্তাক আহমদ, নিজ মান্দারুকা গ্রামের শাহজান আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক, মাধবপুর গ্রামের আবিদ আলী ও নোয়াগাঁও গ্রামের রাসেল আহমদসহ আরো অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, তড়কা, ক্ষুরারোগ ও গলা ফুলা রোগের ভেকসিন প্রয়োগে ৩০টাকা থেকে ১শ টাকা করে আদায় করছেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের কামরুল ইসলাম। গরু বাঁচানোর জন্য নিরুপায় হয়ে আমরা টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছি।

এদিকে লাম্পি স্কিন ডিজিজে গবাদি পশু মারা যাওয়ার কারণে উপজেলার একাধিক পশুর মালিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সরকারি প্রণোদনার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ পশু মালিকদের নামের তালিকা প্রেরণ করা হয়নি। এছাড়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসে পশু নিয়ে যাওয়ার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও প্রজননকর্মী (এফআই) নূরুল আমীনকে অফিসে পাওয়া যায় না বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

ভ্যাকসিনে বাড়তি টাকা আদায়ের বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেনারী ফিল্ড এসিস্ট্যান্ট (বিএফএ) কামরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও কল রিসিভ হয়নি। এবিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: রফিকুল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিন সংগ্রহে যাতায়াত ব্যয় এবং দূরবর্তী এলাকায় গিয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগে যাতায়াত ব্যয় অনুপাতে পশু মালিকদের একাধিক গরু থাকলেও তাদের কাছ থেকে ১০টাকা করে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বাড়তি টাকা আদায়ের বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। স্থানীয় প্রাইভেট পশু চিকিৎসকরা সুবিধা নিতে না পারায় তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে এই বিষয়টি নিয়ে প্রপ্রাগান্ডা ছড়াচ্ছে। প্রথম ধাপে প্রণোদনার তালিকা প্রেরণের পর দ্বিতীয় ধাপের তালিক প্রস্তুতির কাজ চলছে। প্রজননের ভ্যাকসিন ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হয় অনেকেই এ বিষয়টা বুঝেন না।