এখনও কি বলবেন, চুপ কেউ শুনে ফেলবে?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ০৬ ২০১৯, ২৩:০২

আতাউর রহমান খসরু:

সম্প্রতি ১২ শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন মাদরাসা পরিচালক গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমের সামনে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন এবং নিজের ফাঁসি হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন। তিনি দোষ স্বীকার করলেও কোনো কোনো মাদরাসা-পড়ুয়া এই ঘটনাকে ষড়যন্ত্র প্রমাণের চেষ্টা করছেন। মাদরাসায় শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়টি মোটেও নতুন নয়। যখন শুধু ছেলে মাদরাসা ছিলো তখন ছেলে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হতো আর এখন মেয়ে শিশুরাও শিক্ষকের যৌন-লালসার শিকার হচ্ছে। আমি আজ থেকে ১০ বছর আগেই মিরপুরের এক মহিলা মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও বড় একটি মাদরাসার মুহাদ্দিস সম্পর্কে শুনেছিলাম তিনি বাসায় ছাত্রী নিয়ে যান। তখন বক্তা আমাকে সাবধান করে বলেছিলো, চুপ কেউ শুনে ফেলবে।

গত দশ বছরে এমন অসংখ্য ঘটনা আমরা গোপন করেছি, জেনেও হজম করে ফেলেছি কিন্তু তাতে কী আমাদের ভেতরের পঁচনটা থামানো গেছে? ভেতরের পঁচন থামানোর চেষ্টা না করলে এক সময় দুর্গন্ধ বেরিয়ে আসবেই। আমার ভয় হয়, (আল্লাহ না করুন) আগামী এক বছরে হয়তো মাথা নিচু করে দেওয়া এমন আরো ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পাবে। আর মানুষ আমাদের শুনিয়ে শুনিয়ে বলবে, এখন হুজুররাও সেঞ্চুরি করবার চায়!

আমার মনে হয়, মাদরাসাসংশ্লিষ্টদের কোনো দোষ বেরিয়ে পড়লে তার ব্যাখ্যা দাঁড় করানো, স্কুল-কলেজের সাথে তুলনা করে অভিযোগকারীর সাথে তর্কে জড়ানো অর্থহীন। নৈতিকতা ও অনৈতিকতার প্রশ্নে স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির সঙ্গে মাদরাসার তুলনাটাই ভুল। যে শিক্ষার ভিত্তি খোদাভীতি ও নৈতিকতা এবং যার লক্ষ্য পরকালীন মুক্তি তার সঙ্গে জাগতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনা কেন হবে? বরং মাদরাসার ভেতরে শেকড় গাড়া ব্যধিগুলো কিভাবে নিরাময় করা যায় সে চেষ্টাটুকুই আমাদের করা উচিত। অপরাধীকে আড়াল না করে তাকে ঘরে-বাইরে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, যারা তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলা। বরং মাদরাসাগুলোয় শুদ্ধি অভিযান চালানো উচিত।

বিশেষত আলেম সমাজের উচিত আত্মশুদ্ধির প্রতি মনোযোগ দেওয়া। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও কিতাবি ইলম যে মানুষের আত্মশুদ্ধির জন্য যথেষ্ট নয় তা মনে হয় প্রমাণের বাকি নেই। মাদরাসাগুলোকে খানকায় পরিণত করা, সম্মিলিত চেষ্টা, চোখের পানি ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া এই ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। আমিন।