উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে শাবি শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠি

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ১৮ ২০২২, ১৩:০১

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদকে অপসারণের দাবিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বরাবর খোলা চিঠি পাঠ করেছেন শিক্ষার্থীরা। চিঠির জবাবের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে আরও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।

এদিকে, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। সংঘর্ষে আহত হ‌ওয়ায় এবং টানা আন্দোলনে অসুস্থ-ক্লান্ত হওয়ায় অনেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ছাড়া হলে খাবারের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় বাইরে অবস্থানের কারণে ঘোষিত সময়ের পরে আন্দোলন শুরু করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বহনের ঘোষণা দেয়। এ ছাড়া এক বিবৃতির মাধ্যমে শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সমস্যা সমাধানে কার্যত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তিনিও কথা বলবেন বলে আশ্বাস দেন।

গত রোববার বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট প্রত্যাহার, অব্যবস্থাপনা দূরসহ তিন দফা দাবিতে চলা আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে ধাওয়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে উপাচার্যকে উদ্ধারে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে আন্দোলনকারীদের। এ সময় গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের আহত করার ঘটনা ঘটে। পরে রাতে আবারও আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় আজ‌ মঙ্গলবারও আন্দোলন চলছে।

এদিকে, পুরো ঘটনা তদন্তে গণিত বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারকে প্রধান করে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ।

একুশে জার্নালের পাঠকদের সুবিধার্থে  শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠি হুবহু নিম্নে তুলে ধরা হলো—

 

“বরাবর,

মহামান্য রাষ্ট্রপতি,

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

 

আমরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ বীরাঙ্গনার ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের বিধি মোতাবেক আপনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আপনি সাংবিধানিক বিধি মোতাবেক আপনার প্রতিনিধিস্বরূপ উপাচার্য নিয়োগ করে থাকেন।

আমরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের কল্যাণে নিজেদের প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে অধ্যয়নে নিবেদিত আছি। গতকাল(১৬ই জানুয়ারি, রবিবার) শাবিপ্রবির ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনের সামনে নিরাপদ আবাসন পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ৩ দফা দাবিতে আন্দোলনরত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরস্থ বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের আবাসিক ছাত্রী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা উসকানিতে সুপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশের নিষ্ঠুর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এ সময় বাংলাদেশের জনগণের টাকায় ক্রয়কৃত আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের স্বীকার হয় নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা। এতে গুরুতর আহত হয়েছে অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ২০ এর বেশি। এর মধ্যে কারও মাথা ফেটেছে, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড জখম হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছে অনেকে । ছাত্রীদের ওপর অসম্ভব নিষ্ঠুর ভাবে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা মুহুর্মুহু লাঠি চার্জ করেছে। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক পুলিশ ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের ওপর এমন নৃশংস হামলার ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। দাবি না মেনে উল্টো পুলিশি হামলায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলার ঘটনায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য যেভাবে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছেন তা সরাসরি সংবিধান বিরোধী এবং আপনার কর্তৃক জনাব ফরিদ উদ্দিন আহমদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের সরাসরি বরখেলাপ। এ ঘটনায় শাবিপ্রবির সাবেক বর্তমান সকল শিক্ষার্থী হতবাক এবং সংক্ষুব্ধ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, আমাদের মহামান্য আচার্য তার জীবন অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বুঝতে পারেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ, দশ ও নিজেদের ভালোমন্দ অনুধাবন করার সক্ষমতা রাখি। আজ এটা দিনের মতো পরিষ্কার যে আপনার প্রতিনিধি হিসেবে জনাব ফরিদ উদ্দিন আহমদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের সকল নৈতিক, যৌক্তিক ও সাংবিধানিক যোগ্যতা হারিয়েছেন।

এ ঘটনা আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছে এই অথর্ব, অযোগ্য ও স্বৈরাচারী ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী ক্ষমতায় বহাল রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলমন্ত্রের পরিপন্থী। বর্তমানে কোনো শিক্ষার্থীই এই উপাচার্যের দায়িত্বে থাকাকালে ক্যাম্পাসে নিরাপদ বোধ করছে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গতদিনের হামলার পর আজ সারা দিন ক্যাম্পাসে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে জলকামান ও রায়ট কার সহ পুলিশের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা আমাদের মহামান্য আচার্যর কাছে আবেদন করছি অবিলম্বে ক্যাম্পাসে মোতায়েনকৃত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বিধান করুন।

এ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদ থেকে গতকালের হামলার মূল মদদদাতা জনাব ফরিদ উদ্দিন আহমদের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করে তাকে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে মহামান্য আচার্যের কাছে আমাদের আবেদন, আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের পদত্যাগ নিশ্চিত করে, একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে অতিসত্বর নিয়োগ দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে উদ্যোগ নিন।

 

নিবেদক

শাবিপ্রবির সকল শিক্ষার্থীবৃন্দ।”