ই-কমার্স গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ২৩ ২০২১, ১৭:৪৭

সরকার ই-কমার্স ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফেরাতে রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ গঠন এবং ডিজিটাল কমার্স আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তদারকি করবে বলে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সভা শেষে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ই-কমার্স ব্যবসা বন্ধ করছে না সরকার। ১০-১২টি প্রতিষ্ঠানের কারণে লাখ লাখ ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না। ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফেরাতে রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গঠন করা হবে ডিজিটাল কমার্স আইন। যারা প্রতারণা করেছে তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিবন্ধন ছাড়া কেউ ই-কমার্স ব্যবসা করতে পারবে না। বুধবার (গতকাল) থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।’

তবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত গ্রাহকেরা অর্থ ফেরত পাবেন কিনা, সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি সরকার। ইভ্যালির টাকা সরকার ফেরত দেবে কিনা, সেই প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা সরকার নেয়নি। এটির লাভের ভাগীদারও সরকার না।’ অর্ধেক দামে পণ্য কিনতে অনেকে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করেছে জানিয়ে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মানুষকে লোভ সংবরণ করতে হবে। ই-কমার্স নীতিমালা অনুযায়ী পণ্য না পেয়ে লেনদেন করা যাবে না।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতারণাকারী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় মামলার বিধান রয়েছে। এসব মামলা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মামলা হওয়ার পরেও ডেসটিনি, যুবকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকেরা টাকা ফেরত পায়নি।

ইভ্যালির গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু—সেই প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যুবক, ডেসটিনি অনেক আগের ঘটনা। তাদের অনেক সম্পদ ছিল। ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা কারাগারে আছেন। করোনা মহামারির মধ্যে দেশের লাখ লাখ মানুষ ই-কমার্স ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেছে। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারণে লাখ লাখ ব্যবসার ক্ষতি করার ইচ্ছা সরকারের নেই। যারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এই ব্যবসায় কেউ প্রতারণা করতে না পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

ই-কমার্স ব্যবসা কীভাবে পরিচালনা করা হবে সে বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই লোভের বশবর্তী হয়ে এক টাকার পণ্য বারো আনায় কিনেছেন। অনেকে লোভের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

মন্ত্রী জানান, ইভ্যালির ৫০০ কোটি টাকা দায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞাপনে প্রচুর টাকা ব্যয় করেছে। ইভ্যালির রাসেলের কাছে বর্তমানে ৮০-৯০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন। ইভ্যালির কী পরিমাণ সম্পদ আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পর সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। গ্রাহকদের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে রাসেলের সঙ্গে আইনগত পথ অনুসরণ করে কথা বলতে হবে।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে গ্রাহকেরা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ৪ হাজার ৯৩২টি অভিযোগ দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৮৪ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।