‘ইসলামী আকীদা’ বইয়ের ওপর কিছু পর্যবেক্ষণ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ২৬ ২০২১, ০৫:১০

মীযান হারুন


(আমি আকীদা বিষয়ক আহুত প্রতিযোগিতাকে স্বাগত জানাই, পাশাপাশি এই পর্যবেক্ষণকেও। মনে রাখতে হবে, হাল আমলের কোন বই-ই শতভাগ ত্রুটিমুক্ত নয়।)


ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (র.) কৃত ‘ইসলামী আকীদা’ গ্রন্থটি অত্যন্ত মুবারক ও মুফীদ একটি গ্রন্থ। কিন্তু মানব রচিত কোনো গ্রন্থ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ফলে অসংখ্য উপকারী ও বিশুদ্ধ বক্তব্যের পাশাপাশি উক্ত গ্রন্থে এমন কিছু দিক রয়েছে যা বিশুদ্ধ নয় বা পর্যালোচনাযোগ্য। সাধারণ পাঠক যেন বইটিতে বিদ্যমান ভুলগুলো এড়িয়ে কেবল বিশুদ্ধ বিষয়গুলো গ্রহণ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে অধমের পর্যালোচনাগুলো উল্লেখ করা হচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো, গ্রন্থটি অত্যন্ত বড়। যার শব্দ শব্দ ধরে পর্যালোচনা করা এবং দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে সেগুলো খণ্ডন করা দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। যা এই মুহূর্তে হাতে নেই। ফলে এখানে কেবল মোটাদাগে কিছু বড় বড় আপত্তি এবং সেগুলোর ওপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উল্লেখ করা হবে:

এক. লেখক গ্রন্থের শুরুতে একাধিক জায়গায় সালাফ (তথা সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন) থেকে আকীদা নেয়ার কথা বলেছেন এবং পরবর্তী লোকদের থেকে বিশেষ করে ৭ম শতাব্দীর পরের লোকদের থেকে আকীদা গ্রহণে নিষেধ করেছেন। কারণ- তাঁর মতে- ততদিনে আকীদার মাঝে অনেক বিবর্তন ও বিকৃতি এসে গিয়েছে (১) (২) (৩)।
পর্যবেক্ষণ: লেখক আলোচিত গ্রন্থে উক্ত মূলনীতি নিজে ধরে রাখতে পারেননি। বিভিন্ন জায়গাতে তিনি ৭ম ও ৭ম শতাব্দীর পরবর্তী লোকদের আকীদা ও উদ্ভাবিত মূলনীতি উন্মুক্তভাবে গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া কেবল ৭ম শতাব্দী নয়। আকীদার নামে বিভিন্ন বিচ্যুতিতে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীর মুসলিম দুনিয়াও পূর্ণ ছিল। ফলে তাদের আকীদাও গ্রহণের সুযোগ নেই। তাই সময়ের বিভাজন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, একইসঙ্গে ব্যক্তির আকীদাগত মাসলাকও গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ববর্তী যুগ বলেই যে কারও আকীদা গ্রহণের সুযোগ নেই।

দুই. লেখক একাধিক জায়গায় আকীদার ওপর লিখিত বেশ কিছু প্রাচীন কিতাবের তালিকা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি বিশুদ্ধ আকীদাকে মানদণ্ড হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ফলে অশুদ্ধ আকীদার কিতাবগুলোর নাম উল্লেখ করেননি (৪)।
পর্যবেক্ষণ: এটা করতে গিয়ে একাধিক গলতি হয়েছে। (১) আকীদা গ্রহণের ওপরের মূলনীতি (সালাফে সালেহীন) বাকি থাকেনি, ফলে আমরা দেখতে পাই তিনি চতুর্থ, পঞ্চম শতাব্দীর লোকদের আকীদার গ্রন্থও তালিকায় রেখেছেন। (২) এটা করেছেন মূলত ঘরানার কারণে। অর্থা‌ৎ লেখক এক্ষেত্রে উম্মাহর তুরাস নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করতে সক্ষম হননি; বরং কেবল একটা নির্দিষ্ট মাসলাকের বইগুলোর সঙ্গেই পাঠককে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ফলে তিনি পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীর লোকদের বইয়ের কথা উল্লেখ করলেও এড়িয়ে গিয়েছেন তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীর অনেক ইমামের বইয়ের কথাও! ইমাম মাতুরীদী, রাযী, বাযদাবীর কোনো অস্তিত্বই নেই তাঁর গ্রন্থে। তিনি কি এসব ইমামকে গোমরাহ মনে করতেন? যদি না মনে করেন, তাহলে তাদের কিতাবের নামগুলো অন্তত উল্লেখ করলে কী হতো? (৩) এই মাসলাকী মুহাব্বতের কারণে আরও একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে। তা হলো তিনি সেখানে এমন কিছু গ্রন্থের নাম এনেছেন যা অত্যন্ত বিতর্কিত এবং ক্ষেত্রবিশেষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। অথচ তিনি কোনোরূপ সতর্কীকরণ ছাড়াই সেসব গ্রন্থ ‘বিশুদ্ধ’ হিসেবে সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন।

তিন. ইলমুল কালামের সমালোচনা শর্তহীন সমালোচনা। কালামের সমালোচনায় ইমামদের নেতিবাচক মন্তব্যগুলোর মাঝে ক্ষান্ত থাকা (৫) (৬)।
পর্যবেক্ষণ: তিনি ঢালাওভাবে ইলমে কালামের সমালোচনা করেছেন। এক্ষেত্রে ইমাম আবু ইউসুফ ও শাফেয়ী র. এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন, কালামের ঘোর বিরোধী ইবনে আবিল ইযয এর সূত্রে। যদিও তাকে তিনি বরাবরের মতো হানাফী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। অথচ তিনি এটা স্পষ্ট করেননি যে ইমামগণ কোন্ কালামের বিরোধিতা করেছেন, পাশাপাশি এসব বর্ণনার সূত্রও যাচাই করেননি, অথচ এগুলোর সবগুলো বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত নয়। পাশাপাশি ঢালাওভাবে কালামের সমালোচনাও গ্রহণযোগ্য নয়। ইলমুল কালাম একটি ইলম। এটাকে তাওহীদের সুরক্ষায় ব্যবহার করলে ভালো, তাহরীফের কাজে ব্যবহার করলে মন্দ। ফলে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিতে না দেখে এক ঝটকায় ছুড়ে ফেলার সুযোগ নেই। কিন্তু আলোচিত বইটি পড়লে একজন সাধারণ মানুষ মুহূর্তেই ইলমুল কালামকে ঘৃণা করা শুরু করবে, যারা কালাম চর্চা করেছেন তাদেরকে ঈমান ও আকীদার শত্রু বলে মনে করবে। বিশেষত ইমাম গাযালী যার নামও তিনি এখানে উল্লেখ করেছেন, সেটা করেছেন অনেকটা অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে। এটা ইলমী আমানতের খিলাফ হয়েছে।

চার. তাওহীদের বিভাজন তিন প্রকার। কাফেররা রবূবিয়্যাহ তাওহীদে বিশ্বাসী। নবীগণ কেবল উলূহিয়্যাহর দাওয়াত দিয়েছেন (৭) (৮) (৯)।
পর্যালোচনা: এই কিতাবের প্রধানতম বিচ্যুতির একটি হলো তাওহীদের প্রকারভেদ নিয়ে গলদ বক্তব্য। বিশেষত ফলাফল বিবেচনায়। লেখক দাবি করেছেন, মক্কার কাফেররা সহ পৃথিবীর বহু কাফের তাওহীদুর রবূবিয়্যাহতে বিশ্বাসী। এটাকে তিনি ‘হানাফী আকীদা’ প্রমাণের জন্য ইবনে আবিল ইযয এর রেফারেন্স এনে তাকে ‘ ‘হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। অথচ ইবনে আবিল ইযয আকীদার ক্ষেত্রে হানাফী নন। তিনি জেনেশুনে পুরো বইয়ে তাকে হানাফী পরিচয় দিয়েছেন। যাইহোক কাফিরদেরকে রবূবিয়্যাহতে বিশ্বাসী বলা অত্যন্ত খতরনাক বক্তব্য। তারা তাওহীদের সঙ্গে সদৃশ কিছু বিশ্বাস রাখে, তাই বলে তাদেরকে তাওহীদবাদী বলা যায়? এমন করলে দুনিয়ার কেউ তাওহীদের বাইরে থাকে না।
এখানে কয়েকটি বিচ্যুতি এসেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কেবল স্রষ্টা আছেন মনে করাকে রবূবিয়্যাহ আখ্যা দেয়া। কেবল স্রষ্টা আছেন বিশ্বাস করা তাওহীদুর রবূবিয়্যাত নয়। এটা রবূবিয়্যাতের অর্থের বিকৃতি। রবূবিয়্যাত আল্লাহর বিশাল সংখ্যক সিফাতের সমষ্টি। ফলে কাফের-মুশরিকদের কেউ আল্লাহর রবূবিয়্যাত সদৃশ দুয়েকটা গুণের স্বীকৃতি দিলেই মুওয়াহহিদ হয়ে যাবে না। প্রশ্ন হতে পারে, এটা তো আহামরি কিছু না। এটাকে এত বড় করে দেখানোর কী আছে?
এমন ধারণা আকীদা সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে উ‌ৎসারিত। এই বক্তব্যের সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো, মুসলমানদেরকে তাকফীর করা। সামান্য গোনাহের কারণে মুসলিমদেরকে মক্কার মুশরিকদের সঙ্গে তুলনা করা।
একইভাবে উক্ত বিভাজন উলূহিয়্যাহর অর্থকে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। নবীদের মিশনকে কেবল নামাজ-রোজা ইত্যাদির মতো কিছু ইবাদতের মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। অথচ আল্লাহর ইবাদত করা বলতে কেবল তাঁর জন্য নামাজ=রোজা উদ্দেশ্য নয়। বরং জগতের সবকিছুতে তাকে একমাত্র প্রতিপালক, একমাত্র উপাস্য, লা শরীক সত্তা, একমাত্র বিধানদাতা ইত্যাদি রূপে বিশ্বাস করা। অনেক নবীর কওম আল্লাহ ছাড়া মূর্তিরা তাদের উপকার করতো বিশ্বাস করতো, অনেকে পরকাল অস্বীকার করতো, অন্যান্য অশ্লীলতা ও অন্যায় করতো। তাদেরকে কি নবীগণ কেবল নামাজ-রোজার দাওয়াত দিয়েছেন, নাকি সব অন্যায় ত্যাগের দাওয়াত দিয়েছেন? এবং এ সবগুলোই আল্লাহর ইবাদত। (যাতে উলূহিয়্যাহ ও রবূবিয়্যাহসহ সামগ্রিক ও পূর্ণাঙ্গ দাসত্ব অন্তর্ভুক্ত)। সুতরাং ইবাদতকে কিছু দৈহিক ইবাদতের মাঝে সীমাবদ্ধ করে এটাকেই নবীগণের দাওয়াত বলে রবূবিয়্যাতকে গুরুত্বহীন মনে করা সঠিক নয়।

পাঁচ. তাবীজ, তাবাররুক, তাওয়াসসুল, যিয়ারত ইত্যাদি (১০)।
পর্যালোচনা: শিরক ও বিদআহর মাসআলাগুলো বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত সংক্ষেপণ নীতি অবলম্বন করেছেন। যে কারণে একাধিক বিচ্যুতি তৈরি হয়েছে। অর্থা‌ৎ এসব বিষয় সংক্ষেপে বলতে গিয়ে তিনি কেবল এক পাক্ষিক কথা তুলে ধরেছেন। বিপরীত মতগুলো একেবারেই ছেড়ে দিয়েছেন। যেখানে উল্লেখ করেছেন সেখানেও দলীলবিহীন, নামবিহীন ‘কেউ কেউ’ হিসেবে এবং নিতান্তই দায়সাড়াভাবে। তাছাড়া তিনি যেসব বিষয়কে শিরক হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেগুলোতে বৈধ অনেক বিষয় রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর দিকে তিনি ইঙ্গিতও দেননি। ফলে উক্ত বই পড়ে একজন সাধারণ মুসলিম যে কাউকে ‘তাবীজ’ বাধতে দেখলেই শিরক ও মুশরিক ফাতাওয়া দিতে পারে। কাউকে কোনো ওলীর কবর যিয়ারত করতে দেখলেই ‘বিদআতী’/কবরপূজারী ফাতাওয়া দিতে পারে।
তাওয়াসসুসল তথা ওসীলা দিয়ে দুআ করার মাসআলায় তিনি দুয়েকজনের তাকলীদ করে গোটা উম্মাহর অন্যান্য আলিমদেরকে ছুড়ে ফেলেছেন। ফলে তিনি নবী এবং ওলীদের উসিলা দিয়ে দুআ করাকে অবৈধ সাব্যস্ত করেছেন। বরং এক্ষেত্রে তিনি হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। উসমান ইবনু হানীফের প্রসিদ্ধ হাদীস যেখানে তিনি রাসূলুল্লাহর উসিলা দিয়ে দুআ করেছেন, সেটাকে তিনি (রাসূলুল্লাহর দুআর উসিলা) হিসেবে পেশ করেছেন। এটা ঠিক হয়নি। একইভাবে হানাফী ইমামদের বক্তব্যও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইমামগণ লিখেছেন, অধিকারের (بحق فلان) দোহাই দিয়ে দুআ বৈধ নয়। কিন্তু তিনি সেটাকে বলেছেন, কারও মর্যাদার দোহাই দিয়ে দুআ বৈধ নয়। কেউ কেউ বলতে পারে, শিরকের দরজা বন্ধ করার জন্য তিনি এগুলো সংক্ষেপে শিরক বলে দিয়েছেন। আমরা বলবো, এতে মুসলমানদেরকে তাকফীর করার পথ উন্মুক্ত হবে। কারণ এখানে তাঁর আলোচনাগুলো অতি সংক্ষিপ্ত, অপূর্ণ।

ছয়. আল্লাহর সিফাত সংক্রান্ত আলোচনায় তিনি সিফাতগুলোকে ‘সরল’, ‘স্বাভাবিক’, ‘প্রকৃত’ ইত্যাদি অর্থে গ্রহণ করতে বলেছেন। তাবীলকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন (১১)।

পর্যালোচনা: বইয়ের শুরুতে তিনি মূলনীতি শিখিয়েছেন, সিফাতকে চার ইমাম ও সালাফে সালেহীন থেকে গ্রহণ করতে হবে। তাহলে প্রশ্ন হয়, ‘সরল অর্থ’, ‘স্বাভাবিক অর্থ’, ‘প্রকৃত অর্থ’ এটা কোন্ সালাফের মাসলাক? সালাফে সালেহীন আল্লাহর সিফাত গ্রহণের ক্ষেত্রে এসব শব্দ প্রয়োগ করেননি। বরং তারা যেভাবে এসেছে সেভাবে রেখে দিতে বলেছেন (أمروها كما جاءت)।
তাছাড়া তিনি সব ধরনের তাবীলকে সামগ্রিকভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। এবং তাবীলকে মুতাযিলী, জাহমী, কাদারী ও অন্যান্য বিভ্রান্ত ফিরকার মতাদর্শ বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ বাস্তব কথা হলো, সালাফে সালেহীন তাবীল সামগ্রিকভাবে নাকচ করেননি। যেখানে তাবীলের সুযোগ আছে (সায়েগ) তারা করেছেন, যেখানে সুযোগ নেই করেননি। কিন্তু সামগ্রিক তাবীল নাকচ করে দিলে এই বই পড়ে কোনো পাঠক অন্যান্য মুসলমানদেরকে জাহমিয়্যাহ গালি দেয়া শুরু করবে না সেটার গ্যারান্টি দেয়া যায় না।

শেষ কথা: ‘ইসলামী আকীদা’ গ্রন্থটিতে দ্রুত নজর দেয়ার সময় এসব বিষয় সামনে এসেছে তাই এগুলোর ওপর অধমের সংক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হলো। এর দ্বারা আবার এটা বোঝার সুযোগ নেই যে উক্ত গ্রন্থে কোনো ইতিবাচক দিক নেই, সব শুধু ভুল আর ভুল কিংবা এই পর্যালোচনা শুধু ভুল ধরার জন্য। না বিষয়টা তেমন নয়। বরং আলোচ্য গ্রন্থটি অত্যন্ত উপকারী গ্রন্থ যা আমি আগেও বিভিন্ন সময়ে বলেছি। ফলে এর ইতিবাচক দিক অনেক। যার মধ্যে অন্যতম হলো, এই বইটি পড়ে কেউ শিরক বা বিদআতে লিপ্ত হবে না এটা নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ। বইটিতে মাজারপন্থীদেরকে শক্তভাবে রদ্দ করা হয়েছে। রেযাখানীদের মৌলিক আকীদাগুলো, যেগুলোর ওপর তাদের মাযহাব দাঁড়ানো, ধরে ধরে সংক্ষিপ্ত হলেও কুরআন-সুন্নাহর আলোকে খণ্ডন করা হয়েছে। শিয়া ও শিয়া-ঘেঁষা ভ্রান্ত সুফীপন্থীদের মূলনীতিগুলোও কুরআন-সুন্নাহর আলোকে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আহলে বাইতের প্রতি তাদের তথাকথিত মুহাব্বতের দাবির স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়া বইয়ের অধিকাংশ বক্তব্য ইমাম আবু হানীফা, ত্বহাবী, মোল্লা আলী কারী প্রমুখ থেকে নেয়া হয়েছে। ফলে এদিক থেকে এটা আহলুস সুন্নাহর গুরুত্বপূর্ণ দলীল।

তবে মানব রচিত কোনো গ্রন্থই ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। ফলে বইটির জটিলতাগুলো সামনে আনা জরুরি। যাতে সাধারণ কোনো মানুষ আকীদার কোনো ক্ষেত্রেই বিচ্যুতির শিকার না হয়। ইসলামে বাড়াবাড়ি কিংবা ছাড়াছাড়ি কোনোটার সুযোগ নেই। শিরক ও বিদআহর প্রতিবাদ করতে গিয়ে বৈধ বিষয়কেও শিরক-বিদআত বানিয়ে ফেলার অবকাশ নেই। ফলে গ্রন্থটি নিরপেক্ষতার মানে কতটা উত্তীর্ণ সেটা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ; যদি বলা হয় যে এটা বিশেষ দৃষ্টিকোণ্ থেকে লেখা হয়েছে তাহলে ভুল হওয়ার কথা নয়। যদিও সরাসরি কোনো মতাদর্শের দিকে দাওয়াত দেয়া হয়নি, কিন্তু পাঠক বইটি পড়ার পরে যে একটি বিশেষ মতাদর্শের আকীদা ধারণ করবেন এবং তাদের বিপরীত মাসলাকগুলোকে প্রতিপক্ষ মনে করবেন এটা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়। যেটা স্বয়ং লেখকের ক্ষেত্রেও হয়েছে তাঁর আকীদা বিষয়ক দ্বিতীয় বইয়ে (আল ফিকহুল আকবার)। অথচ এটা হওয়া উচিত হবে না। এলক্ষ্যেই বইটিতে বিদ্যমান কিছু ভুল-ত্রুটির ব্যাপারে সামান্য কথা লেখা জরুরি মনে হলো। যাতে সাধারণ মানুষ বইটি পড়ার সময় এসব বিষয় মাথায় রাখেন।

আমার ভুল হলে আল্লাহ ক্ষমা করে দিন। বইটির লেখক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (র.) -কে আল্লাহ জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দিন। আমার ও আমাদের সকলের পক্ষ থেকে আল্লাহ তাঁকে উত্তম বিনিময় দান করুন।