ইসলামি আইন বুঝুন, দেখুন ইনসাফ কিসের পথ ধরে আসে!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ৩১ ২০১৯, ২৩:৫১

আরজু আহমাদ

ইসলামি ফৌজদারি দণ্ডবিধির দৃষ্টিতে দেখলে ক্বতল বা নরহত্যা (Homicide) পাঁচ প্রকার।

১। ক্বতল-ই-আমদ (Intentional murder) অর্থাৎ যেকোনও মারণাস্ত্রের (Lethal weapon) ব্যবহার করে স্বজ্ঞানে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

২। ক্বতল-ই-সিবহি-আমদ (Quasi-intentional murder) কেউ আক্রমণের শিকার হলো কিন্তু যদি তা

i. হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত না হয়।

ii. ভোঁতা অস্ত্র যা সাধারণত হত্যায় ব্যবহৃত হয় না- এমন অস্ত্রের আঘাত হয়। এবং

iii. আঘাতের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র জখম করা হয়ে থাকে।

তবুও সেই আঘাতজনিত কারণে কেউ মারা যায় তবে তা এই ধরনের খুনের অন্তর্ভুক্ত হবে।

৩। ক্বতল-ই-খাতা- (Mistake or Accidental murder) এই পর্যায়ভুক্ত হচ্ছে সেই ধরনের হত্যা যাতে ব্যক্তিকে হত্যা কিম্বা জখম করার কোনও ইচ্ছে ছিল না। ভুলক্রমে কিম্বা দূর্ঘটনাবশত কোনও মৃত্যু ঘটেছে।

মালিকি, হাম্বলি, শাফেয়ী মাজহাবে প্রথমোক্ত দুই প্রকারের হত্যাকাণ্ড ব্যাতিত সকল হত্যাই এই তৃতীয় প্রকারভূক্ত। হানাফি জুরিসডিকশনে আরও দুটি প্রকার আছে।

৪। ক্বতল-ই-জারি মাজরা আল খাতা- (Parallel to mistake or accidental murder) এই ধরনের হত্যাকাণ্ড হচ্ছে অবচেতনে কাউকে হত্যা করা। অথচ উদ্দেশ্য ছিল ভালো কিছু। যেমন আপনার বন্ধুটি শীতে কষ্ট পাচ্ছে দেখে লেপ মুড়িয়ে দিলেন মাথায় অথচ সে দম আটকা পড়ে মারা গেল। (If any case)

ইমাম মালিক, শাফেয়ী ও আহমাদ রহ. এই হত্যাকাণ্ডকেও ক্বিতাল-ই-খাতার মধ্যে গণ্য করেছেন।

৫। ক্বতল-ই-বিত-তাসাব্বুর (Murder by intermediary cause) এই ধরনের হত্যাকাণ্ড হলো তা যাতে ব্যক্তি নিজে প্রত্যক্ষভাবে কিছুই করেন নি। হত্যা কিম্বা আহত করবার উদ্দেশ্যও ছিল না।

যেমন পথের পাশের আপনার বাড়ির ভগ্ন সীমানাপ্রচীর না ভেঙে সেভাবেই রাখলেন। লোকে চলতে গিয়ে চাপা পড়ে মারা গেল, এই হত্যাকাণ্ড মূলত এই পর্যায়ভূক্ত।

ইমাম মালিক, শাফেয়ী ও আহমাদ রহ. এই হত্যাকাণ্ডকেও ক্বতল-ই-খাতার মধ্যে গণ্য করেছেন।

ক্বতল বা হত্যাকাণ্ড (Homicide) সংগঠনের শাস্তি:

↪ইসলামের দৃষ্টিতে ১ম প্রকারের হত্যাকাণ্ডে শাস্তি হচ্ছে –

i. কিসাস তথা মৃত্যুদণ্ড। অথবা

ii. দিয়াত তথা রক্তপণ

iii. (রক্তপণ গৃহীত হলে সেই সঙ্গে) কোনও গোলামকে আজাদ করা অথবা দুই মাস রোজা রাখা অথবা কোনও মিসকিনকে দুই মাস আহার করানো। ধর্মীয় দিক থেকে এই দণ্ড আসে।

↪উপরোক্ত পাঁচ প্রকারের মধ্যে ২য় প্রকারের হত্যাকাণ্ডে শাস্তি হচ্ছে

i. দিয়াত তথা রক্তপণ।

ii. তাযির, আদালত উপযুক্ত মনে করলে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বিবেচনায়।

iii. কোনও গোলামকে আজাদ করা অথবা দুই মাস রোজা রাখা অথবা মিসকিনকে দুই মাস আহার করানো।

↪বাকি ৩ প্রকারের হত্যাকাণ্ডের শাস্তি হচ্ছে-

i. দিয়াত তথা রক্তপণ।

ii. কোনও গোলামকে আজাদ করা অথবা দুই মাস রোজা রাখা অথবা মিসকিনকে দুই মাস আহার করানো।

ইসলামি ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে হত্যাকাণ্ডের শাস্তি দাবি করার হক্বদার হচ্ছে নিহতের স্বজনেরা। ইসলামি দণ্ডবিধিতে নিহতের স্বজন চাইলে হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে পারে। কিন্তু তা কেবল বিনাপ্ররোচনায় ও বিনা চাপে হতে পারে।

তবে এই ধরনের ক্ষমা ঘোষিত হলে আসামীর উপর আদালত রাষ্ট্রীয় শৃঙখলা বিবেচনায় আরও একধরনের দণ্ড প্রয়োগ করতে পারে তা হলো তা’যির।

ফলত হত্যার ঘটনায় আরও যে শাস্তি প্রয়োগের সুযোগ থাকে তা হলো

iv. তাযির, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বিবেচনায়।

তা’যির হচ্ছে বিস্তৃত প্রণালীর দণ্ডবিধি, যেখানে কারান্তরীণ থেকে শুরু করে বেত্রাঘাত এমনকি প্রয়োজনে ক্ষেত্রবিশেষে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট প্র‍্যাক্টিসের সুযোগ রয়েছে।

আর দিয়াত তথা রক্তপণের পরিমাণ হচ্ছে ১০০ উটের বিদ্যমান বাজার দর কিম্বা ৪.২৫ অর্থাৎ সোয়া চার কেজি স্বর্ণের মূল্য।

ইসলামি আইনে ইচ্ছেকৃত কিম্বা অনিচ্ছাকৃত সকল হত্যাতেই দণ্ডের ব্যবস্থা আছে। তা শৃঙখলারক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা ‘ভুল করে’, ‘সরল বিশ্বাসে’ হলেও।

ভিন্নদিকে আমরা যে সেক্যুলার আইনের মধ্যে আছি, তাতে

↪সরল বিশ্বাসে কৃত হত্যার দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

↪দূর্ঘটনাজনিত হত্যাকাণ্ডে যৎসামান্য দণ্ডারোপের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

↪রাষ্ট্রপ্রধানকে খুনীকেও বিনাপ্রশ্নে দণ্ড থেকে অব্যাহতির সুযোগ দিয়েছে। যেখানে ইসলাম রাষ্ট্রপ্রধানকে বাধ্য করে দণ্ড কার্যকরে।

আদতে সেক্যুলার আইনের চেয়ে ইসলামি আইন এত বেশি মানবিক যে, এই দুই আইনের ফারাক আসমান ও জমিনের মত।

আফসোস! ইসলামি আইন বুঝুন, দেখুন ইনসাফ কিসের পথ ধরে আসে!