আসুন বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াই। আপনার বিপদে আল্লাহ সাহায্য করবেন

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ১১ ২০১৯, ১৬:৫৪

সুফিয়ান ফারাবী:: বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা উন্নত নয়। ঢাকা জুড়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যাই বেশি। গাড়িগুলোর ইঞ্জিনেও নানান সমস্যা থাকে সবসময় । আবার কখনো কখনো অনভিজ্ঞ ড্রাইভারের হাতে তুলে দেওয়া হয় মানুষের জীবন।

গুলিস্তান থেকে ফরিদাবাদ যেতে হয় লেগুনায় চড়ে। আমি ফরিদাবাদের ছাত্র, সে হিসেবে এই লেগুনাগুলোতে আমাকে প্রায়ই চড়তে হয়। পাঁচজনের সিটে ছয়জন বসিয়ে জুলুম করে লেগুনা সমিতির নেতৃবৃন্দ। যার ফলে যাত্রীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।

বিষয়টা শুধুই কষ্টকর হলে, সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেওয়া যেত। তবে, আসল সমস্যা হলো এই লেগুনাগুলোর ড্রাইভাররা অধিকাংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক। যারা এ পথের নিয়মিত যাত্রী, তাঁরা নিশ্চয়ই বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন।

চৌদ্দজন মানুষের জীবন আধঘণ্টার জন্য ১৪-১৫ বছরের ছেলের হাতে থাকে। মাঝে মাঝে এরা নিজেদের পারদর্শিতা প্রমাণ করতে কাটাকাটি খেলে। রিকশার পাশ ঘেঁষে পথ অতিক্রম করে। পেছনের যাত্রীরা বিষয়টি সেরকম বুঝতে পারেন না। যে দুজন সামনে থাকেন, তারা পাঁচ মিনিট পরপর আজরাইলের সাক্ষাৎ পান।

এসব কারণে বাস, ট্রাক, লেগুনা, ইত্যাদির চালকদের প্রতি আমার ভিন্ন বিদ্বেষ কাজ করে। যদিও আজ পর্যন্ত প্রকাশ করিনি।

কিছুদিন আগে জাবিতে পাখি মেলার আয়োজন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দেখতে গিয়েছিলাম আমি ও আমার এক বন্ধু। ফেরার সময় ওয়েলকাম বাসে চড়লাম। গন্তব্য সাভার। প্রচণ্ড জ্যামের কারণে আধা কিলো পথ পার হতে সময় লেগেছে প্রায় আধঘণ্টা। হঠাৎ কাকতালীয়ভাবে রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। ড্রাইভার সাহেব দ্রুত চালাতে লাগলেন।

গাড়ি আরও এক কিলোমিটার চলার পর আচমকা রাস্তার মাঝখানে বন্ধ হয়ে গেল। পেছনে ছিলো হানিফ পরিবহনের বিশাল গাড়ি। অল্পের জন্য রক্ষা পেলাম। গাড়ির যাত্রীরা হৈচৈ শুরু করে দিলো। ড্রাইভার কয়েকবার চেষ্টা করেও পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে পারলেন না। গাড়ি কোনভাবেই স্টার্ট নিচ্ছে না।

এরমধ্যে একজন ভদ্রলোক অত্যন্ত শুদ্ধ উচ্চারণে কয়েকটি গালি দিয়ে বসলেন। এতো শুদ্ধ উচ্চারণে কেউ গালাগালি করতে পারে, বিষয়টি ভেবে দেখিনি। সাথে সাথে সবাই তাল মিলিয়ে গ্রাম্যভাষায় বকাবকি শুরু করলেন।

গাড়ির কন্টাক্টটর অবস্থার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে বললেন, আমার সাথে পাঁচজন লোকে নিচে নেমে আসুন। গাড়ি না ঠেললে স্ট্রার্ট হবে না।

এ’কথা শুনে সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। তারপর একে একে সবাই নামলেন। কিন্তু গাড়ি ঠেলার জন্য না, অন্য গাড়িতে চড়ার জন্য। আমিও নামলাম, তবে হেল্পারকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যেই।

নেমে দেখলাম সবাই অন্য গাড়িতে উঠার জন্য হুড়োহুড়ি করছে। আমি কন্ট্রাক্টরকে বললাম, চলুন, আপনাকে সাহায্য করি। তিনি মন খারাপ করে বললেন, আপনি একা ঠেললে আর কী হবে? এতো বড় গাড়ি দুজনে ঠেলতে পারবো না।

মানুষ মানুষের জন্য। সমাজে চলতে হলে সুখ, দুঃখ ভাগ করে নিতে হবে। তা না হলে সামাজিক হওয়া যাবে না। অবশ্য “সামাজিক” শব্দটিও এখন অপব্যবহার থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।

আসুন বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াই। আপনার বিপদে আল্লাহ সাহায্য করবেন।