আলোচনাতেই থেমে আছে খালেদার প্যারোলে মুক্তি

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ১৭ ২০২০, ২০:১১

দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দিন দিন শারীরিক সুস্থতার অবনতি হচ্ছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর।

মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় তার সাজা হয়েছে বলে দাবি করলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনি লড়াই ও আন্দোলনেও ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। এখন কোন পথে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে, তা নিয়ে নানা সমীকরণ মেলাতে চেষ্টা করছেন দলীয় নীতি-নির্ধারকরা।

এদিকে খালেদা জিয়াকে যে করেই হোক মুক্ত করার কথা বলছে তার পরিবার। স্বজনদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্যের বরাবর আবেদনও করা হয়েছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে, খালেদার মুক্তির বিষয়টি মানবিক দিক থেকে বিবেচনার জন্য।

১১ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার বোন সেলামা ইসলাম বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা খুবই প্রয়োজন। ওনার শরীর এতই খারাপ যে, এই মুহূর্তে যদি ওনাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া না হয়, তাহলে উনার কী হবে সেটা বলতে পারছি না। আমাদের একটা আবেদন তাকে মুক্তি দেওয়া হোক। তার চিকিৎসাটুকু যেন আমরা করতে পারি এটাই আমাদের আবেদন। মানবিক দিকটা চিন্তা করে ওনার মুক্তি দাবি করছি আমরা।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে মূলত- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোন দেওয়ার পর থেকে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল আমাকে অনুরোধ করেছেন, আমি যেন প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়টি বলি। আমি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি।

প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারও কিছুটা নমনীয় হচ্ছে। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে শর্ত জুড়ে দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়া নিজের অপরাধ স্বীকার করলেই কেবল প্যারোলে মুক্তির আবেদন করতে পারবেন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে সরকার। যেহেতু বেগম জিয়া একটি দলের প্রধান এবং তিনি এক সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাই সংবিধানের আলোকে তার মুক্তির জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।

খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি পদ্ধতিগতভাবে করতে গেলে আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আইনে বলা আছে কোথায় কীভাবে আবেদন করতে হবে। প্যারোলে মুক্তির দরখাস্ত এবং সব নিয়ম-কানুন মানার পরই সরকার এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত দরখাস্ত বা এ রকম কিছু পাওয়া না যাবে, ততক্ষণ হাওয়ার উপরে কথা বলার প্রয়োজন নেই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে পরিবার কিংবা বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো আবেদন করা হয়নি। তারা চিকিৎসকদের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে চিকিৎসকরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। তারা যদি প্যারোলে চান, তাহলে আদালতে আবেদন করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আবেদন করতে পারেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার টেবিলে এমন কোনো আবেদন নেই।

প্যারোলে মুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন উঠেছে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসা করাতে লন্ডন যাবেন বেগম খালেদা জিয়া। তবে এখনো এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি বিএনপি। তবে দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সরকার নমনীয় হলে প্যারোলে আবেদন করবে বিএনপি।

প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চান তারা দালাল। সমঝোতা করে প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তি চান, এমন দালাল আমাদের দলে আছে। খালেদা জিয়া কেন প্যারোলে মুক্তি পাবেন- এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি।

১৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র আইনজীবীদের এক বৈঠক শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আগামী সপ্তাহে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আবার আবেদন করা হবে।