আলেমদের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে হিজড়াদের কোরআন শিক্ষা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ০২ ২০২০, ০০:১৫

।। এহসান সিরাজ ।।

‘ক্বুল হুওয়াআল্লাহু আহাদ’ [বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়]
সিঁড়ি বেয়ে যখন সাত তলার করিডোরে দাঁড়াই, ভেতর থেকে সম্মিলিত কণ্ঠে কুরআন মশকের আওয়াজ ভেসে আসছিল! কলিং বেল টিপতেই মাথায় ঘোমটা দিতে দিতে সালাম দিয়ে একজন এসে দরজা খুলে দিল।
ভেতরে ঢুকে দেখলাম অবাক করা বিষয়, হোওয়াইড বোর্ডে লিখে একজন পড়াচ্ছেন বাকিরা সমস্বরে পড়ছেন। এমন দৃশ্য কখনো কল্পনা করা যায়? যারা পড়ছেন তারা সবাই হিজরা!
ঢুকতেই বসার জন্য জায়গা করে দিলেন। বসতে বসতে দেখলাম, কাপড়ের ফাঁকে একজনের পেট দেখা যাচ্ছে, আরেকজন তা ঢাকতে কাপড় টেনে নিচে নামিয়ে দিলো। যার কাপড়টা নিচে নামানো হলো সেও একটু লজ্জা পেল!
দৃশ্যটা আসলে সামনে থেকে না দেখলে কল্পনাও করা যায় না, অবাক বিস্ময়! যারা মানুষের সামনে নিচের কাপড় পর্যন্ত খুলতে কার্পণ্য করে না, সেই তারাই পেট ঢাকতে কাপড় ঝুলিয়ে দেয়!
তাদের সঙ্গে কথা বলে যা জানলাম-

এক.
খুব কষ্ট নিয়ে তাদের একজন অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন, ‘আমার বাবার মৃত্যুর পর দোয়া করানোর জন্য কোনো আলেম/মাওলানা খুঁজে পাইনি। কয়েকজনের কাছে গেলাম, হিজড়া বলে তাদের কেউ এলেন না! নিজের পরিচয় গোপন করে পরিচিত একজনকে দিয়ে, বাসায় কয়েকজন মাদ্রাসা ছাত্র এনে কোরআন তেলাওয়াত এবং দোয়া করিয়েছি। আর আমরা দূর থেকে সে দোয়ায় অংশ নিয়েছি। সামনে যাইনি, যদি তারাও চলে যায়!

দুই.
তাদের দলের কেউ মারা গেলে তার গোসল বা জানাযায় কোনো হুজুর বা আলেম আসেন না। দলের দু’তিনজন হাজি আছেন, তারাই হিজড়াদের গোসল, জানাযা থেকে করব পর্যন্ত নিয়ে যায়!

তিন.
আলেমদের অযত্ন-অবহেলার কারণে তাদেরই একজন বাপ মারা যাওয়া এক ছেলেকে নিজ খরচে হাফেজি মাদরাসায় পড়াচ্ছেন!
উদ্দেশ্য, এ ছেলে যদি তাদে দ্বীনি কাজের দায়িত্ব নেয় তাহলেই তারা ধন্য।

কারগুজারী:
গত ২৭-২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি সমাজ থেকে অবহেলিত ও বিচ্ছিন্ন, তৃতীয় লিঙ্গ বলে পরিচিত হিজড়া ভাই-বোনদের মাঝে কিছু ভাইদের সহযোগিতায় দ্বীনি কাজ করার সুযোগ হয়েছে। [আমি শেষদিন অংশ নিয়েছি]
তাদের মধ্যে যেটা পাওয়া গেল, অধিকাংশই পড়ালেখার সুযোগ পায়নি। কালেমা,নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত জানে এমন সংখ্যা একেবারেই কম!
আলহামদুলিল্লাহ, তাদের উৎসাহ ও আগ্রহ ছিল ব্যাপক। তিনদিনে অনেকেই কালিমা দু’তিনটি সুরা এবং জরুরী মাসআলা রপ্ত করেছে। প্রশিক্ষণ শেষে একটা পরীক্ষা নিয়ে তাদের মাঝে কিছু পুরস্কারও দেয়া হয়েছে। কোরআনে শরিফ, আহকামে জিন্দেগী, আত্মার পরিচর্যা, কেমন ছিল নবীজির আচরণ, নূরানী কুরআন শিক্ষা, মিসওয়াক ইত্যাদি।
তারা দল বেঁধে থাকে এবং দলীয় প্রধানকে খুব মানে।

তাদের অনূভুতি হলো, আমাদের মাঝে এতো ওলামায়ে কেরাম স্বেচ্ছায় এসেছেন। আমরা ইনশাআল্লাহ, আপনাদের নিয়ামত হিসেবে মূল্যায়ন করবো এবং আমাদের সমস্ত জায়গায় আপনাদের নিয়ে যাবো।