আমি রত্না! একজন থ্যালাসেমিয়া!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ১৪ ২০২০, ০৯:৫৯

আমি রত্না! আমি একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী। আমার ছোট বোন, সেও এ রোগে আক্রান্ত। আমার বাড়ি ভালুকা, ময়মনসিংহ।

আমি যখন একা অসুস্থ ছিলাম তখন ব্লাড ম্যানেজ করার মতো আমার পরিবারে কেউ ছিলো না। অনেক সময় দালালের কবলে পড়তে হতো এক ব্যাগ রক্তের জন্য। এমনও সময় গেছে ১০-১২ দিন হসপিটালে পড়ে থাকতে হয়েছে। কখনো ব্লাড না পেয়ে এমনি ফিরে আসতে হয়েছে।

যখন আমি একটু বড় হই তখন নিজের রক্ত যোগাড় করতে বিভিন্ন জনের সাহায্য চেয়েছি। যখন নিজের রক্তই যোগাড় করতে পারি না ঠিকমতো তখন আবার ছোট বোনের এ রোগ ধরা পড়ে। নিজের কথা না ভেবে বোনের রক্তটাই আমাকে আগে ম্যানেজ করতে হয়েছে।

এমনি করে কয়েক বছর গেলো। হঠাৎ আমি খুব অসুস্থ হয়ে যাই। তখন চারদিন অজ্ঞান মূমুর্ষ অবস্থায় ছিলাম। চারদিন পর জ্ঞান ফিরে পেলেও দাঁড়াতে পারিনি। অনেক চিকিৎসা করেও পা ভালো হয়নি। পঙ্গু হয়ে পাঁচ বছর বিছানায় পড়ে থাকি।

সময় কাটেনা বলে ভাইকে দিয়ে একটা ফেসবুক আইডি খুলাই। তখন আমি ফেসবুকের কিছুই বুঝি না। এক বন্ধু আমার সব জেনে একজন স্বেচ্ছাসেবী আপুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর নিজেও তাদের সাথে কাজ করার চেষ্টা করি। নিজের জন্য ও অন্য রোগীর জন্য রক্ত খুঁজে বেড়াই। নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তখন বুঝতে পারি রক্তের প্রয়োজনটা রোগীর কাছে কেমন হয়।

পায়ের চিকিৎসা বন্ধ ছিলো। বিছানায় শুয়ে শিয়েই মোবাইল চালাতাম। এমনকি হসপিটালে শুয়ে রক্ত চলাকালীন সময়েও মানুষের জন্য রক্ত খুঁজে বেড়াতাম। হঠাৎ এক ভাইয়ের সাথে পরিচয়। তিনি কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীকে সাথে নিয়ে আমাকে দেখতে আসেন এবং আমাকে ঢাকায় নিয়ে আবার চিকিৎসা চালু করেন। অনেকগুলো পরীক্ষা করার পর ডাক্তার জানায় আমার শরীরে আয়রণ বেড়ে গিয়ে হাড় নরম হয়ে গেছে। শরীরের জয়েন্টগুলো ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে।

ফেসবুকের কয়েকজন ভাই, বোন, বন্ধু আমার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেন। ডাক্তার বলেছেন নিয়মিত ঔষধ খেয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমার পরিবারে দু’জন রোগীর চিকিৎসা খরচ চালানো অসাধ্য। এমনি করেই কিছু দিন চিকিৎসার পর আমি আবার হাঁটতে পারি, কিন্তু ঔষধ না খেলেই আবার বেশি অসুস্থ্য হয়ে যাই। তবুও আমি চেষ্টা করছি মানুষের পাশে থাকার। যখনই একটু সুস্থতা অনুভব করি তখনই ফেসবুকে চেষ্টা করি মানুষের রক্ত খোঁজার।