আমার এ একলা ঘরে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ০৪ ২০১৯, ২২:২১

শাহীন বিন শফিক

শৈশব কৈশোরে অপর্যাপ্ত সুখ বিনির্মাণে ছোট একটি বোনের প্রয়োজনীয়তা সব’ছে বেশি। স্রষ্টা প্রদত্ত এক শ্রেষ্ঠ উপহার হল বোন। যাদের বোন আছে তারাই বুঝে; ভাই বোনের অমলিন ভালবাসা কতটা মধুর, আনন্দের।

আমার একটা ছোট বোন ছিল। আদরের, ভালবাসার। যে ভালবাসার স্মৃতিস্তম্ভে দোল খেয়েছিল আমার অতিত। স্মৃতির ক্যানভাসে এখনো দৃশ্যমান শৈশবের দিনগুলো। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরতাম। ছোট্ট বোনটা কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ত। টিপিনের টাকায় কেক, চকলেট নিয়ে আসা ছিল সেসময়কার নিত্য রুটিন। ফ্যামিলিতে তখন বাবা-মা আর আমরা দু-ভাইবোনই ছিলাম। এজন্য আমাদের ভালবাসায় কোন ভাগ ছিলনা। শরিকহীন ভালবাসার এক মহারাজ্য গড়েছিলাম আমরা। যে রাজ্যের বিলবোর্ডে সাঁটানো আমাদের স্নেহ ভালবাসা আর শৈশবের দুরন্তপনা।

কিছুদিন আগে বোনটাকে বিয়ে দিলাম। মাত্র ইন্টার মিডিয়েটে উঠছে। সে অষ্টম থেকে বিভিন্ন কলা-কৌশল এপ্লাই করে ঘটক ফিরিয়ে দিতাম। ‘আমার এ ঘর, এ বাড়ি শূন্য করে একদিন বোন চলে যাবে’ এটা আমার ভাবনায় আনতে পারতাম না। বোনের বিদায়ের কথা শুনলে বিষাক্ত তীর যেন কলিজায় এসে বিঁধত। মনে হত বিশাল পৃথিবী ভালবাসাহীনতা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষমাণ। অপেক্ষার প্রহর গুনছে মহাশূন্যতা। তাই আমার চাওয়া-বোন আমার ঘরেই থাকুক। আরো কিছুদিন আমার ঘরে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটুক। আমার বোনের হাসির ছটায় প্রানবন্ত থাকুক আমারালয়।

ধরার নিয়ম বড় কঠিন। সে কঠিন বাস্তবতায় ভালবাসার রশ্মি গুলো ছিঁড়ে কৃত্রিম হাসি টেনে বিয়ের আয়োজনে নামলাম। একটি বারও বোনকে বুঝতে দেইনি বিষাদের নীল’চে রঙে কলিজা কতটা নীলাক্ত। কষ্টের দহনে কতটা পুড়ছে আমার হৃদপট। কষ্টের ঢেউ’রা সিমা অতিক্রম করলে আড়ালে আবডালে অশ্রু গুলা মুছতাম। বুক হালকা হত। মা’ও পছন্ড কাঁদত। আমায় দেখলে কান্না লুকিয়ে প্রবোধ দিত- ‘কাঁদিস না! এটাই দুনিয়ার নিয়ম।’

মাস তিনেক হল। দুনিয়ার নির্দয় নিয়মে ছোট বোনটাকে বিদায় দিলাম। আমিও আমার পথে ব্যস্ত হই। ক্লাস, জব, সংগঠন, পড়াশোনা, নিজ স্বপ্নের অনুশীলন। অতঃপর বিশ্রাম। ঘুম। ভালবাসাহীন এ নগরে গদবাধা জিবন যখন বিস্বাদ হয়; স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে বাড়ি মুখো হই। প্রফুল্লতায় মন ততটা হাসেনা। কাটেনা আর তেমনটা ক্লান্তি অবসাদ। সবই আছে; বোন নেই। বোনের শূন্যতা আজ বড়বেশি অপূর্ণতা। এই বাড়ি, এই ঘর। এর সর্বত্র জুড়ে হাহাকার। যেন চৈত্রের প্রখর তাপে চৌচির কোন মাঠ।

প্রত্যেক বছর ঈদে ফ্যামিলি মার্কেট আমার হাতেই হয়। এ সময়টায় হাতে প্রচুর টাকা আসে। ফ্যামিলির জন্য কিছু করার মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দ পাওয়া যায়। সে আনন্দ উপভোগের জন্য ক্ষুদ্র এ প্রচেষ্টা। সবার জন্যে এক দেখায় মার্কেট করলেও ছোট বোনটার ক্ষেত্রে ছিল ব্যতিক্রম। খুটে খুটে সর্বোচ্চ যাচাই বাচাই করে সুন্দর ও মানসম্মত পোষাকটা নেওয়ার চেষ্টা করতাম। আমার উপর কনফিডেন্স এতটাই ছিল-ডিজাইন কালারটাও কভু বলত না। জিজ্ঞেস করলে বলত- যেটা আপনার পছন্দ।

অইদিন মার্কেটে গিয়ে মাকে কল দিলাম। সবার লিষ্ট আসল; বোনটা ছাড়া। হঠাৎ এক ভাবাবেগে ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠছে। আহ! কোথায় আমার বোন? কই গেল কলিজার বোনটা? আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে এমন কোন ঈদ যায়নি যে ঈদে ছোট বোনটার জন্য মার্কেট করিনি। চাঁদরাতে বসে থাকত আমার অপেক্ষায়। হাতে মেহেদির আল্পনা এঁকে দিতাম। এ ঈদে কেউ নেই আমার অপেক্ষায়। আছে শুধু হাহাকার আর শুন্যতা। আছে বোনের স্মৃতি, আমার এ একলা ঘরে।

অধ্যয়নরত, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ