আমরা থানাকে গণমুখী ও জনবান্ধব করতে চাই ; ডিএমপি কমিশনার

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ১৫ ২০১৯, ১৪:১৫

অসহায় ও বিপদগ্রস্থ মানুষ খুব স্বাভাবিকভাবে থানায় গিয়ে যাতে কথা বলতে পারে, কোন রকম হয়রানি ছাড়া মামলা ও জিডি করতে পারে এবং থানা থেকে বের হয়ে যেন এই বোধটি হয় পুলিশ আন্তরিকভাবে আমাকে আইনী সেবা দিবে ও ন্যায় বিচার পাবো। প্রতিটি মানুষ যাতে এই বিশ্বাস নিয়ে থানা থেকে ফিরতে পারে, সেলক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাবো। আমরা থানাকে গণমুখী ও জনবান্ধব করতে চাই।

আজ (১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯) সকাল ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে একথা বলেন ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার)।

উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে কমিশনার বলেন, বর্তমান সরকার মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বিগত দশ বছরে দেশের আইন পরিস্থিতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এসময় পুলিশ সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে অনেক দূরে এগিয়ে গেছে। এর ফলে বিদেশী বিনোয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপি বা প্রবৃদ্ধি একটি কাঙ্খিত পর্যায়ে প্রায় পৌঁছে গেছে। আমাদের জিডিপি ক্রমাগত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সবকিছুরই রূপকার আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে বাংলাদেশ পুলিশের যে আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, সেটি এখন প্রায় পরিপূর্ণতা লাভের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আমরা মনে করি আমরা মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের সেবা দেয়ার কাছাকাছি একটি পর্যায়ে পৌঁছেছি।

তিনি বলেন, সেবার কথা বললে আমাদের সামনে আসে থানার কথা। আমরা সবচেয়ে বেশি নজর দিতে চাই থানা পুলিশের দিকে। ইতোমধ্যে ডিএমপি’র সকল থানার অফিসার ইনচার্জ ও সংশ্লিষ্ট ডিসিগণকে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মনিটরিং ও সাধারণ মানুষের সাথে আচারণের বিষয়টি কাঙ্খিত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সবসময় মনিটরিং করবো। সাধারণ মানুষ যেন পুলিশ ভীতি থেকে বের হয়ে আসতে পারে সেলক্ষ্যে আমরা কাজ করবো। পাশাপাশি কোন নিরাপরাধ মানুষ যাতে পুলিশের হয়রানি, চাঁদাবাজির শিকার না হয় অথবা পুলিশের সেবা পেতে কোন আর্থিক লেনদেন না হয় সে বিষয়ে আমি কঠোর থাকবো। মোটকথা আমরা থানাকে গণমুখী ও জনবান্ধব করতে চাই। এই বিষয়ে আমাদের বিগত কমিশনার স্যার অনেক কাজ করেছেন। বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিং আরো গতিশীল করা হবে। কোন থানায় কোন ভিকটিম ও অপরাধের শিকার কোন ব্যক্তি যাওয়ার পরে যদি দুর্ব্যবহারের শিকার হন এবং বিষয়টি আমাদের নজরে আনা হলে, তদন্তে সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নিব। নিজেদের অন্যায় আচরণের জন্য আমাদের অফিসারদের রক্ষা করার চেষ্ঠা করবো না।

কমিশনার আরো বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থার উপর বিশেষ নজর দিবো। ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নে ইতোমধ্যে ট্রাফিক বিভাগের অফিসারদের সাথে কথা বলে নির্দেশনা জারি করেছি। ট্রাফিকের সিনিয়র অফিসারদের মাঠে থেকে কাজ করতে হবে। সকালে অফিস আওয়ারে ও বিকালে অফিস শেষের সময়ে এই ব্যস্ত সময়ে ট্রাফিক অফিসার অফিসে থাকতে পারবে না। তারা এই সময়টা রাস্তায় থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। এই নির্দেশনা সঠিকভাবে পালনে আমি কঠোর থাকবো। ট্রাফিক পুলিশ এককভাবে কাজ করে কতটা উন্নত করতে পারবো তা জানি না। তবে ট্রাফিককে সহনীয় পর্যায়ে আনতে চেষ্টা করে যাবো। পরিস্থিতি যেমনই হোক আমরা দায়িত্ব পালন সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক কাজ করবো।

জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ দমনে আপনার ভূমিকা কেমন হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার বলেন, জঙ্গিবাদ এমন একটি মতবাদ। যারা এই মতবাদে একবার বিশ্বাসী হয়, সেখানে থেকে তাদের ফিরিয়ে আনাটা দুরুহ। আমরা পুলিশের পক্ষথেকে মানুষকে বুঝানোর জন্য বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসায় যেয়ে কথা বলা হচ্ছে। আমাদের ধর্মীয় গুরুদের সাথে কথা বলছি, তাদের দিয়ে এই ভ্রান্ত মতবাদ থেকে মানুষকে বেরিয়ে আনার প্রচেষ্টা আমাদের আছে। পাশাপাশি নতুন করে জঙ্গি তৈরি না হয় সেদিকে আমাদের নজরদারি রয়েছে। যারা ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা। আর যারা গ্রেফতার হয়ে জেলখানায় আছে তারা যখন জেল খানা থেকে বের হবে, তারা যাতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে সেই কাউন্সিলিং করার প্রক্রিয়া আমাদের চলমান আছে।

সম্প্রতি পুলিশকে টার্গেট করে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, এই বিষয়ে আপনার কি দিকনির্দেশনা রয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার বলেন, আমরা এসব ঘটনার প্রতিরোধ ও সতর্কতামূলক কিছু ব্যবস্থা রেখেছি। পাশাপাশি যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

মাদকের বিরুদ্ধে আপনি কেমন ব্যবস্থা নিবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার বলেন, আমরা মাদকের সাপ্লাই রুখতে চেষ্টা করি। আসলে শুধু সাপ্লাই রুখে পৃথিবীর কোন দেশে মাদক নির্মূল করা কঠিন হয়। যারা মাদক খাচ্ছে তারা কারও না কারও সন্তান। আপনার সন্তানকে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, পাশাপাশি আমরা মাদকের সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মাদক নির্মূল সম্ভব হবে। মাদক যে সেবন করছে তাকে মাদক সেবনের রাস্তা থেকে ফেরত না আনতে পারলে শুধু পুলিশ দিয়ে এটা সম্ভব না। আমি অভিভাবকদের অনুরোধ করবো, আপনার সন্তান যদি মাদকাসক্ত হয় তাহলে আমাদের সহযোগিতা নিন। মাদকের ব্যাপারে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকবো। পুলিশের কোন সদস্য মাদকের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে মাদক ব্যবসায়ীর মত তার বিচার চলবে।

থানার সেবার মানের ক্ষেত্রে নতুন কোন পরিকল্পনা আছে কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার বলেন, আমার চিন্তাভাবনা আছে, থানায় যারা কাজ করছে তাদের আচরণের পরিবর্তন যদি কাঙ্খিত পর্যায়ে না হয়, তাহলে আমাদের সিনিয়র অফিসারদের থানায় বসাবো। প্রয়োজনে আমি নিজে থানার ওসি হবো ও আমার ডিসিদের থানায় ওসি হিসেবে বসাবো। সপ্তাহে অন্তত একদিন সিনিয়র অফিসাররা থানায় উপস্থিত থেকে মানুষের কথা শুনবেন।

সবাই মিলে একে অপরকে সহযোগিতা করে ঢাকা মহানগরীর আইন শৃংখলা রক্ষা করবো। এ ব্যাপারে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। যেকোন প্রয়োজন আমরা আপনাদের পাশে থাকবো।