আবু ইউসুফের নতুন ফোনালাপ ফাঁস: সব চক্রান্তকারীদের নাম প্রকাশ্যে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ১৩ ২০২০, ২৩:৪১

বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ‘র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু ইউসুফ ও সিনিয়র পরিদর্শক মুফতি তোহার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। ইতিপূর্বে আরো পাঁচটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর এটি প্রকাশিত হ‌ওয়া ষষ্ঠ ফোনালাপ।

𝑼𝒔𝒂𝒎𝒂 𝑴𝒖𝒉𝒂𝒎𝒎𝒂𝒅 পেইজে ফোনালাপের অডিও রেকর্ডটি ফাঁস করা হয়েছে। পাঠকদের জন্য অডিওটির শ্রুতিলিখন করেছেন একুশে জার্নাল ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক ইলিয়াস সারোয়ার। ফোনালাপটি নিচে তুলে ধরা হলো-


কুশলাদি বিনিময়ের পর…
মাওলানা আবু ইউসুফ: কি অবস্থা?
মুফতি তোহা: কাল তো হাটহাজারী মিটিং। চৌধুরী সাব যাবে নাকি?
আবু ইউসুফ: না না, চৌধুরীর তো এখানে দাওয়াত‌ নাই।
তোহা: বাদ?
আবু ইউসুফ: হ্যাঁ, হ্যাঁ।
তোহা: উনি তাইলে কিয়ের মধ্যে আছে!
আবু ইউসুফ: তার কোনো পদ নাই।
তোহা: বেশি বুঝছে?
আবু ইউসুফ: হ্যাঁ বেশি বুঝছে। আচ্ছা, কাল তো রাজুও গেল না। রাজু গেল না কেন?
তোহা: রাজু তো হাটহাজারীর বিরুদ্ধে। কাল রায় হবে তাদের বিপক্ষে। সে যাবে কিভাবে! গেলে শরম পাবে না!

আবু ইউসুফ: মহাসচিবরে একটু জানাইয়ো। হেতে শহরে আছিল।
তোহা: হ্যাঁ কথা হ‌ইছে। সে তো দরজা বন্ধ করে ঘুমাইছে। বেফাক অফিসেই ছিল, তার বাসায়। আইসা আবার চৌধুরীর সাথে মিটিং করছে, কি হইছে না হইছে।
আবু ইউসুফ: হারামজাদাগল! আমরারে বহুত কষ্ট দিতেছে।
তোহা: অবস্থা কি বুঝা যাইতেছে?
আবু ইউসুফ: না না, রাজুর‌ও ইয়া হবে না। আর চৌধুরীর‌ও রেহাই নাই।
তোহা: ঠান্ডা হইছে নি (মহাপরিচালক)?
আবু ইউসুফ: ঠান্ডাই তো, সে এখন কাঁপতে-কাঁপতে মরতেছে। হ্যাঁ, চৌধুরীও কাঁপতেছে। চৌধুরী কালকে হুজুরকে (আল্লামা আহমদ শফী) বলতেছে- হুজুর আমার মাথাটা ঝেড়ে দেন। তখন আনাস ভাই বলতেছে, বাজি তার মাথাটা ঝেড়ে দেন, মাঝে মাঝে পাগলামি করে। পাগলামি যেন বন্ধ হয়। তখন চৌধুরী আমারে দেখায়া বলতেছে, আমার নাজেম সাহেবের (আবু ইউসুফ) মাথাটাও ঝেড়ে দেন। তখন আনাস ভাই বলতেছে, না না – আপনার মাথা ঠিক থাকলেই হবে। আপনার পাগলামি বন্ধ হলেই সবার মাথা ঠিক হবে। তাদের মাথা ঠিক আছে।

এই আর কি, আমি (আবু ইউসুফ) সামনে ছিলাম আমার সামনে বলছে এইসব।
তোহা: পরে কি কয়?
আবু ইউসুফ: আর কি ক‌ইবো? একেবারে জাগায় বেইজ্জত।
তোহা: পরে একেবারে ঠান্ডা হ‌‌ই গেছে, ক্যান্?
আবু ইউসুফ: হ্যাঁ পরে হুজুরের পা ধরে ইয়া করের, টিপে দের, এমন করের, তেমন করের। পরে আমারে আনাস বলে, দেখছেননি কত বড় বদমাইশ! বাবার বিরুদ্ধে কয়, আবার এখানে এসে ঠ্যাং টিপে। কত বড় মুনাফেক, আস্তা জারগা (গালি)।
তোহা: আনাস ভাই এই খবর সম্পূর্ণ ধরায়া দিছে। আনাস ভাইয়ের কাছে ফাস্ট টু লাস্ট সম্পূর্ণ রেকর্ড আছে। মাওলানা আনাস সাব এই কাজ করল কেমনে!

তোহা: আমি রাজু রে কইলাম, আহমদ শফী সাহেব চেয়ারম্যান, আর আপনারা হলেন সদস্য। রাজু কয়, চেয়ারম্যান কি নিয়মের বাইরে নাকি? আমি কইলাম, চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের বাইরে। চেয়ারম্যানের জন্য গঠনতন্ত্র করা হয় নাই। চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্র বানায়, আর আপনারা গঠনতন্ত্র মাইনা চলেন। রাজু কয়, চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের বাইরে না। পরে আমি কইলাম, আচ্ছা ঠিক আছে, তাইলে আপনারা চালান।
আবু ইউসুফ: এখন হাইয়াতুল উলয়া থেকে তাকে (মুসলেহ উদ্দিন রাজু) বাদ দিতে হবে। বেফাকের সহ-সভাপতি থেকেও বাদ দিতে হবে।
তোহা: হাইআত থেকে বাদ দিলে বেফাক থেকে বাদ দেওয়া কঠিন হবে। হাইআত থেকে বাদ দেওয়া সহজ। হাইআত থেকে বাদ দিলে পরে বেফাকে আর শরমে আসবে না।

আবু ইউসুফ: কালকে চৌধুরী আরেক ধরা খাইছে, বুঝছেননি? ওই যে জায়গা ওইটা কিনা নিয়া। সেদিন তো চৌধুরীকে কোন সদস্য রাখে নাই। কালকে হেতে ফয়জুল্লাহরে ধরছে তাকে সদস্য বানানোর জন্য। তাই ফয়জুল্লাহ বলতেছে, যোগাযোগ করার জন্য চৌধুরী সাহেবের নামটা থাকলে ভালো হয়। ওয়াক্কাসেও কয়, চৌধুরী সাহেবের নাম থাকাটাও জরুরি। শেষে মহাসচিবে কয়, না মনিরুজ্জামানের নাম দেন। এইভাবে চৌধুরীর নাম আর রাখে নাই।
তোহা: মেরাজকে রাখছে নাকি?
আবু ইউসুফ: না, মেরাজকেও কমিটিতে রাখে নাই।
তোহা: তাইলে তো হ‌ইছেই। আজকে মোটামুটি ঠান্ডা নি?
আবু ইউসুফ: ঠান্ডা বলতে, যোহরের পরে গেছে আর আসে নাই। আমি অফিসেই আছি।
তোহা: আসে নাই, দেখবেন আরো ঠান্ডা হয়ে যাবে।
আবু ইউসুফ: কি জানি, সে তো শয়তান, বদমাইশ। এখন খেয়াল রাখো, কোন দিক দিয়ে আমাদেরকে ঘায়েল করে, আমরা তো চিন্তায় আছি
তোহা: কে?
আবু ইউসুফ: যোবায়েরগা (মহাপরিচালক)। কোন দিক দিয়া তদন্ত মদন্ত কি করে!
তোহা: তদন্ত করতেছে তো অমুকের (নাম অস্পষ্ট) জন্য।
আবু ইউসুফ: আমি মহাসচিবের কাছে গিয়েছি। মহাসচিব কয়, এটাতে আপনি উদ্দেশ্য না, আপনার বিভাগ উদ্দেশ্য না, উদ্দেশ্য সে (অস্পষ্ট)। আপনি অত চিন্তা করবেন না।

আবু ইউসুফ: আমি কইলাম, হেতে (মহাপরিচালক) আমারে কয়- নাজেম সাব! কোন সময় কি হয়, মান সম্মান থাকতে থাকতে ইস্তফা দিয়া চলে যান। নুরুল আমিন সাহেব‌ও আছিল সামনে। তখন মহাসচিব কয়, দেখছেন নি তার চক্রান্ত! নাজেম সাবেরে বের করার জন্য বুদ্ধি দিতেছে ইস্তফা দেওয়ার। এইটাও লিখে রাখবা… কথা বুঝছেন নি? বহুত হারামজাদা। তারে বের করা একেবারে ফরজ বা-জি।
তোহা: লোক ঠিক করতে হবে।
আবু ইউসুফ: হ্যাঁ… আচ্ছা বাবা।
তোহা: আসসালামু আলাইকুম।


এই ফোনালাপটি 𝑼𝒔𝒂𝒎𝒂 𝑴𝒖𝒉𝒂𝒎𝒎𝒂𝒅 পেইজে আপলোড করার পর ভিডিও লিংকটি তার আইডিতে শেয়ার করে নিচের কথাগুলো ক্যাপশন হিসেবে লিখেছেন উসামা মোহাম্মদ-

“বেফাকের ভিতরে হাটহাজারী হুজুরের নামে বিশাল এক সিন্ডেকেট চক্র কাজ করছে সেটার প্রমাণই এই রেকর্ডে ক্লিয়ার ফাঁস হলো।”

আরেকটু জেনে নিন ফোনের অপর প্রান্তে কে এই মুফতী ত্বহা?
মরহুম আশরাফ আলী সাহেবের ভাগিনা সে, আবূ ইউসুফ ও আব্দুর কুদ্দুস সাবের বিশ্বস্ত দাবার গুটি।
আশরাফ আলী সাহেবকে যেভাবে মনে চায় বুঝিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারে উনার ক্ষেত্রে আনাসের ভূমিকা পালন করতো।

এই ত্বহার তৎপরতায় ই মহাসচিবের প্রতিষ্ঠান স্বল্পপেন্নাই গৌরিপুর এর প্রশ্নফাঁসের ঘটনা আশরাফ আলী সাহেবের মাধ্যমে ধামাচাঁপা দেয়া হয়।
এমনকি গতবছরের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় রাঘব বোয়ালদের রক্ষায় আশরাফ আলী সাহেবকে দিয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করায় সে। এটার রেকর্ডও আমার কাছে আছে। ইনশাআল্লাহ্ প্রকাশ করবো।

আর এই ত্বহা বেফাকের পরিদর্শক, সেখানে দুই স্তরে বেতন চলে, আগে জুনিয়রের বেতন পেত, বছরখানেক আগ সে এই সব আকাম কুকাম করে দুর্নীতিবাজদের আশির্বাদে সিনিয়রদের বেতনভুক্ত অন্যতম কর্মকর্তা।