আধুনিক আরবীর মত দেশে ক্যালিগ্রাফির পথিকৃৎও শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী রহ.

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ২৩ ২০২১, ১৯:৪৫

সাদিকুল বারি

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের আধুনিক আরবী ভাষা শিক্ষার পথিকৃৎ উস্তাদ শহিদুল্লাহ্ ফজলুল বারী রহ.। তার আরেকটি নেশা ছিলো খোদার মহান বানীকে লেখার মাধ্যমে শৈল্পিক রূপদান, যাকে বলা হয় ক্যালিগ্রাফি।

এক সময়ে আমাদের দেশে কর্পোরেট অফিস ও এলিটদের (ধনাঢ্যদের) বাসা-বাড়ির দেয়ালে নগ্ন আবক্ষ নারী মূর্তি-পোট্রেট অথবা জীব জন্তুর চিত্রাঙ্কনের ছবি থাকতো, যেটাকে তারা বলে আর্ট বা শিল্প। আমাদের দেশে এই কথিত শিল্প নগ্ন-আবক্ষ নারী দেহ, জীব জন্তু অঙ্কন শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে অনেক সরকারী-বেসরকারী ইনস্টিটিউট, রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “চারুকলা ইনস্টিটিউট” নামক স্বতন্ত্র অনুষদ। শুধু পহেলা বৈশাখে একটি কথিত মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হওয়া ছাড়া জাতি তেমন উপকৃত হয়নি এসব পাশ্চাত্য ধ্যান ধারণার আদলে তৈরী ইনস্টিটিউট দিয়ে। অথচ চারুকলার বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে ক্যালিগ্রাফি, সেই আদিকাল হতে! এই চারুকলায় ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে হতে পারতো একটি উৎপাদনমুখী শিক্ষা।

ইরান, তুরস্ক, উজবেকিস্তান ও পাকিস্তানসহ এমনকি ভারতেও রয়েছে সরকারী-বেসরকারী ক্যালিগ্রাফির একাডেমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখান থেকে ছাত্র-ছাত্রী বের হয়ে তাদের দেশে শিল্পে অবদান রাখছে, এই শিল্পের বিশাল বাজারও রয়েছে পৃথিবী জুড়ে। তাদের কাজের ক্ষেত্রও বিশাল। যেমন টাইলস, কার্পেট/তৈজস পত্র ও বিভিন্ন ইমারতে ইন্টেরিয়র ও আউটডোরে নান্দনিক স্থাপত্যে এই শিল্পের ব্যবহার।

সময় বদলেছে এখন অভিজাত/ধনাঢ্য/এলিট শ্রেণীর অনেকের অফিসে-বাড়ীতে ড্রয়িং রুমে শোভা পায় আল-কোরআনের আয়াত সম্বলিত ক্যালিগ্রাফি অথবা ক্যালেন্ডার, যেটা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিপরীতে শহীদুল্লাহ্ ফজলুল বারী রহ. -সহ অনেক ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের রক্ত ঘামে গড়ে উঠা পরিশ্রমের ফসল।
এর পেছনে রয়েছে অনেক ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর মহান অবদান, অক্লান্ত শ্রম, সাধনা। আমাদের হাজী কাকা রহ. এদের অন্যতম, কারো উস্তাদ বা সহকর্মী। তাই এখন আমরা দেখি হাজারো ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর তুলিতে আঁকা আল-কোরআন/ হাদিসের বানীতে ক্যালেন্ডার ঘরে ঘরে, গ্রামে কিংবা শহরে। রাজপথে রাস্তার মোড়ে বিশাল তোড়নে অথবা ফোয়ারায় বা ভাস্কর্যে।

শহীদুল্লাহ্ ফজলুল বারী. কে আমরা হাজী কাকা বলতাম। বাংলাদেশে হাজী কাকা রহ. ছিলেন বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যালিগ্রাফির উপর একাডেমিক সার্টিফিকেট অর্জন করা একমাত্র ব্যক্তি।

প্রাচীন শৈল্পিক এই মহান কর্মকে হাজী কাকা রহ. বাংলাদেশেও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন।

এই শিল্পে হাজী কাকা রহ. এর নিজস্ব স্বতন্ত্র একটি স্বত্ত্বা ছিলো। দেশে-বিদেশে হাজী কাকা রহ. এর অনেক ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী হয়েছিলো।

তাঁর ক্যালিগ্রাফির বিষয় যখন সামনে আসে, তখন স্মৃতিতে আসে কাকা তার রুমে অফিস ফেরত পরবর্তী সময়ে ক্যালিগ্রাফি তৈরী করছেন অথবা ফজরের নামাজের পরে একাগ্র চিত্তে তার কলমে খোদার মহান বানী অঙ্কন করছেন।

আজ হাজী কাকা রহ. নেই। কিন্তু তার এই শিল্প কর্মের-ছাত্রদের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে মহান রবের বানী দিগ-দিগন্তে।