নবীপ্রেমের রক্তাক্ত নজরানা, শহীদগণের একটি অসম্পূর্ণ তালিকা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ০৫ ২০২০, ০৭:২৪

ইলিয়াস সারোয়ার ও মাহবুবুর রহমান: ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতে সারা দেশ তথা বিশ্বব্যাপী হেফাজতের জয়জয়কার অবস্থা বিরাজ করছিল। দলমত নির্বিশেষে আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলের মুখে মুখে হেফাজত হেফাজত রব উঠেছিল। লংমার্চের দিন সকল ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় একযোগে লাইভে ছিল হেফাজত। বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ছিল শাপলার দিকে নিবদ্ধ।

সেই রব থেমে গেল যখন‌ই হেফাজতের উপর রাজনীতি নামক শকুনের কুদৃষ্টি পড়ল। এপ্রিল গড়িয়ে মে মাসের ৫ তারিখ বেলা যতই বাড়তে লাগলো ততই পাল্টে যেতে লাগল রূপরেখা। বদলে গেল মুখের ভাষা, জ্বলতে লাগলো অগ্নিশিখা। এ হিংসার আগুনে আজ‌ও চোখের আড়ালে জলছে শত পরিবার।

কিন্তু ইতিহাস মুছে যাবে না। ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। চেপে রাখা ইতিহাস জেগে ওঠে আপন শক্তিতে। আজ না হয় কাল, কাল না হয় কোন একদিন কেউ না কেউ এটি সংরক্ষণ করবেই। হয়তোবা কেউ সত্যটা মুছে দিয়ে অসত্য ইতিহাস রটিয়ে দিবে। সেটাকেও ছেপে প্রকাশ পাবে ইতিহাসের অন্তরালের ইতিহাস। এমনটিই চলে আসছে পৃথিবীর ইতিহাসে। তাই পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস রেখে যাওয়ার তাগিদে আজকের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

১.
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে শহীদের তালিকায় যেমন হাজার থেকে লাখে উঠেছে, তেমনি হয়তো নবীপ্রেমীদের সংখ্যা শ’ থেকে হাজারে গেছে। এ আমাদের জাতীয় চরিত্র। যেখানে মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটা বিষয়‌ই রাজনৈতিক বিবেচনায় ফলোআপ করা হয়, সেখানে ইতিহাস তো ‘বহত দূর কি বাত’।

আমরা কথা বলছি স্বপক্ষ বা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নয়, কিংবা কাউকে ফাঁসানোর জন্য‌ও নয়। আমরা কথা বলছি সত্যকে জানতে ও জানাতে। আসুন! সত্য জানতে ও জানাতে প্রত্যয়ী হই।

বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রকাশিত মানবাধিকার সংগঠন অধিকার প্রণীত ৫-৬ মে ২০১৩ ইং-এ শহীদ হওয়া ৬১ জনের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে স্রেফ হুবহু উল্লেখ করায় আমরা ক্ষান্ত থাকিনি। বরং তাতে নিষ্ঠার সাথে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সংযোজন করার চেষ্টা করেছি। শেষে অধিকারের এই তালিকার বাইরে যে নামগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া গিয়েছে তাও সুত্রসহ উল্লেখ করার প্রয়াস পেয়েছি।

প্রথমে কালের কণ্ঠের রিপোর্ট হুবহু (তালিকার সাতটি জায়গায় আমাদের করা সংশোধনসহ) তুলে ধরছি।

“অধিকারের সেই ৬১ নিহতের তালিকা

কালের কণ্ঠ: হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গিয়ে ৬১ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল মানবাধিকার সংস্থা অধিকার। নিহত ৬১ জনের তালিকা অধিকারের কাছে রয়েছে বলে দাবি করা হলেও তালিকাটি তারা প্রকাশ করেনি। তথ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে ওই তালিকা চাইলেও অধিকার তা দেয়নি। তবে অধিকার জানায়, দেশি-বিদেশি কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনকে তারা তালিকাটি দিয়েছে। কিন্তু ওই সব সংগঠনও তালিকা প্রকাশ করেনি। অবশেষে অধিকার কার্যালয় থেকে জব্দ করা আলামত ঘেঁটে গোয়েন্দা পুলিশ ৬১ জনের তালিকা উদঘাটন করেছে। বহুল আলোচিত সেই তালিকার কপি পেয়েছে কালের কণ্ঠ। এখন তালিকাটির যথার্থতা যাচাই করছেন তদন্তকারীরা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, নিজস্ব কোনো অনুসন্ধানে নয়, হেফাজতসহ বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তালিকাটি তৈরি করে অধিকার।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে কালের কণ্ঠের হাতে আসা চার পাতার এই তালিকার শিরোনামে লেখা আছে ‘হেফাজতের সমাবেশে গিয়ে মারা গেছেন যারা’। তালিকার ক্রমানুসারে নাম ও ঠিকানা উপস্থাপন করা হলো।

১. সিদ্দিকুর রহমান (৩০), লাশ গ্রহণকারী কাজী সেলিম সরওয়ার, চট্টগ্রাম,
শ্রমিক সম্পাদক, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড;
২. এ কে এম রেহান আহসান (২৮), লাশ গ্রহণকারী ডা. শাহরিয়ার মাহমুদ, ৩৫৩/১-বি দক্ষিণ পাইকপাড়, ঢাকা;
৩. কাজী রকিবুল হক (৪০), লাশ গ্রহণকারী কাজী শহীদুল হক, ২০৮/৩ শেখপাড়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা;
৪. মো. ইউনুস (৩৫), লাশ গ্রহণকারী মাওলানা নাজিম উদ্দিন, বাঙ্গাল হাওলা, কালীগঞ্জ, গাজীপুর;
৫. দ্বীন ইসলাম (৩৬), লাশ গ্রহণকারী আলাউদ্দিন, বালুচর, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ;
৬. নাহিদ (২১), লাশ গ্রহণকারী শাহজাহান, লালগঞ্জ ৭ নম্বর বিল্ডিং, ৭ নম্বর গলি, ঢাকা;
৭. মো. আল-আমিন (৩০), লাশ গ্রহণকারী শফিক, কাচারীচেকেরহাট, কোতোয়ালি, ফরিদপুর;
৮. মাওলানা আবদুল ওয়াহাব মোল্লা (৪৫), লাশ গ্রহণকারী আবদুল হান্নান, তালাব, ভালুকা, ময়মনসিংহ;
৯. হাফেজ আল-আমিন (১৮), পিতা-আবদুল জব্বার, দুর্গাপুর চরমাদবদিয়া, ফরিদপুর;
(১০ নম্বর নেই);
১১. হাফেজ সাদ্দাম (২৭), পিতা-রফিকুল ইসলাম, গ্রাম-মহিপুর, পোস্ট-পাজমা, থানা-মধুখালী, ফরিদপুর;
১২. মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ (২২), পিতা-মাওলানা ওয়াজী উল্লাহ, ইমাম কটনমিল জামে মসজিদ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ;
১৩. লুৎফর রহমান (২৫), পিতা-সিদ্দিকুর রহমান, গ্রাম-সুতিয়াপাড়া, ইউনিয়ন-বাওলা, থানা-ফুলপুর, ময়মনসিংহ;
১৪. মাওঃ নজরুল ইসলাম আব্দুল্লাহ (২৫), পেশা: সাংবাদিক ও শিক্ষক, পিতা-মমতাজ উদ্দিন, গ্রাম-দাইরেরপার, খেবুতলা, মনোহরদী, নরসিংদী;(সংশোধিত)
১৫. হাফেজ মোয়াজ্জেমুল হক নান্নু (৩৫), গ্রাম-রায়পাড়া, খড়কি, যশোর;
১৬. হাফেজ আতাউর রহমান (৩৫), পিতা-সিদ্দিকুর রহমান, গ্রাম-সুতিয়াপাড়া ভৌলা, থানা-ফুলপুর, ময়মনসিংহ;
১৭. মুহাম্মদ আকবর ইবনে নজরুল ইসলাম, দৌলতখান, ভোলা;
১৮. মাওলানা সিহাব উদ্দিন (৩৫), প্রভাষক, গানিয়াতুল মাদ্রাসা, থানা-সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম;
১৯. মো. শামসুল আলম (২০), গ্রাম-তেলিগাংদিয়া, থানা-দৌলতপুর, জেলা-কুষ্টিয়া;
২০. মাওলানা শিহাব উদ্দিন (৩২), শিক্ষক, বগাচতর ফাজিল মাদ্রাসা, গ্রাম-ডোমখালী, ইউনিয়ন সাহেরখালী, থানা-মিরসরাই, জেলা-চট্টগ্রাম;
২১. মো. নাহিদ শিকদার (২২), পিতা-দেলোয়ার শিকদার, গ্রাম-পাতারহাট, থানা মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল, বাসা ২৭৪, জয়কালী মন্দির;
২২. মো. ইউনুস মোল্লা (২৮), ২৫ নম্বর ওয়ার্ড, বরিশাল শহর, বরিশাল (পুলিশ বলছে এ ঘটনাটি সঠিক);
২৩. মো. সাইদুল বারী (১৭), মোহাম্মদপুর বায়তুল ফজল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র, গ্রাম ইউসুফদিয়া, থানা-সালথা, জেলা-ফরিদপুর;
২৪. মো. মোক্তার হোসেন (১৫), পিতা-মহর আলী, গ্রাম ও পোস্ট-উত্তর বাঘরনগর, থানা-রায়পুরা, নরসিংদী;
২৫. মাওলানা শামসুল আলম, হরিণাহাট, শফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর;
২৬. মাওলানা মোহাম্মদ হাসান, শিক্ষক, দাগারপার ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ;
২৭. হাফেজ মো. মাহমুদুল হাসান জুবায়ের, পিতা-মো. আব্দুল বাসেদ, গ্রাম-বকুলতলা, সাটিরপাড়া, নরসিংদী;(সংশোধিত)
২৮. মাওলানা মাহমুদুল হাসান, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা;
২৯. হাফেজ লোকমান হোসেন, বাবুরাইল, নারায়ণগঞ্জ;
৩০. মো. আল-আমিন, রামারবাগ, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ;
৩১. মাওলানা জুবায়ের, পিতা-কারি নেয়ামতুল্লা, সাপেরচর, বালুচর, মুন্সীগঞ্জ;
৩২. মো. শফিউল্লাহ বাদল, দুরবাটি, কালীগঞ্জ, গাজীপুর;
৩৩. হাবিবুল্লাহ মুন্সী(৩৪), পিতা-আনু মুন্সী/আবুল মুন্সি, পেশা: রিকশা চালক, গ্রাম-দায়চর, সেনবাড়ী, কচুয়া, চাঁদপুর;(সংশোধিত)
৩৪. মো. সিরাজুল ইসলাম, পিতা-আমির উদ্দিন, গ্রাম-খলিফারপাড়, মাশকান্দা পলিটেকনিক মোড়, ময়মনসিংহ;
৩৫. বাবু গাজী(৩৬) পেশা: তুরাগ বাসের ড্রাইভার, থানা-নড়িয়া, শরীয়তপুর;(সংশোধিত)
৩৬. মোঃ মারজানুল ইসলাম সৌরভ(১৭), পিতা: এনামুল ইসলাম,নিমাইকাশারী, বাঘমারা, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। স্থায়ী: বি-বাড়ীয়া;(সংশোধিত)
৩৭. মাওলানা আনোয়ার জাহিদ, সিলেট, ছাত্র: হাটহাজারী মাদ্রাসা; (সংশোধিত)
৩৮. শাহাদাত, মেখল মাদ্রাসার ছাত্র, চট্টগ্রাম;
৩৯. মো. সোহেল, দাউদকান্দি, কুমিল্লা;
৪০. ফকির ইবনে মাইজুদ্দিন ফকির, কাতলা, শিববাদী, আদমদীঘি, বগুড়া;
৪১. মাহফুজ খান, পিতা-বাবুল খান, গ্রাম-শেখদী, চাঁদপুর;
৪২. হাফেজ সাইদুর রহমান, পিতা-মৃত সিরাজুল ইসলাম, গ্রাম-ইউসুফদিয়া, থানা-সালথা, জেলা ফরিদপুর;
৪৩. হাফেজ মাওঃ আনোয়ার শাহ মওদুদ, পিতা-মো. আবুল হাসানাত, শ্রীনগর, আহমেদ নগর, চাটখিল, নোয়াখালী, শিক্ষার্থী: মালিবাগ মাদ্রাসা;(সংশোধিত)
৪৪. মো. হারুনুর রশিদ, গ্রাম-তায়েফা, থানা-মুলাদী, জেলা-বরিশাল;
৪৫. সুলতান, কোনাবাড়ী, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা;
৪৬. রাজীব, কাজলা ভাঙ্গা, ডেমরা, ঢাকা;
৪৭. মো. আব্দুল হান্নান, পিতা-আব্দুল বাতেন, গ্রাম-আদিয়াবাদ, মধ্যপাড়া, রায়পুরা, নরসিংদী;
৪৮. সোহেল, ছাত্র, চাঁদপুর উজানী মাদ্রাসা;
৪৯. মাওলানা মুতীয়র রহমান, কুমিল্লা;
৫০. মোঃ আবু বকর সিদ্দিক,পলাশ (২৫) পিতা: মৃত আনোয়ার হোসেন পেশা: ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী, মাদানীনগর, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। স্থায়ী: মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা; (সংশোধিত)
৫১. সাদেক হোসেন (৩২), পিতা-রইস মিয়া, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা। স্থায়ী: গ্রাম-বড়াইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া;
৫২. রুবেল, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা;
৫৩. সাব্বির, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা;
৫৪. তাহের, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা;
৫৫. আবু সাইদ, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা;
৫৬. জসিম উদ্দিন (৩০), পেশা: বাসের হেল্পার,ধনুহাজী রোড,মিজমিজি, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ,স্থায়ী: কুমিল্লা;(সংশোধিত)
৫৭. কামাল উদ্দিন খান, ম্যানেজার, জেনারেল ইনস্যুরেন্স কম্পানি, মতিঝিল, ঢাকা;
৫৮. মাওলানা আতাউল্লাহ, শিক্ষক, মুদাফা মাদ্রাসা, টঙ্গী;
৫৯. ইব্রাহিম খলিল, পটুয়াখালী;
৬০. জালাল আহমেদ, শরীয়তপুর;
৬১. সিরাজুল ইসলাম, কুমিল্লা।

উপরোক্ত তালিকাটি ‘অধিকার’ প্রণীত ও দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত। এই তালিকার ২৭, ৩৩, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৪৩, ৫০ ও ৫৬ নম্বরের নামগুলোর তথ্যে এই রিপোর্টারদ্বয়ের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সংশোধনী আনা হয়েছে। তবে আমরা জানি এই তালিকা নিয়ে আরো অনেক কাজ করতে হবে। তাই এ বিষয়ে কারো কাছে কোন সঠিক তথ্য থাকলে অনুগ্রহপূর্বক প্রমাণসহ জানানোর অনুরোধ করছি।

অধিকারের এই ৬১ জনের তালিকায় তথ্য আছে আসলে ৬০ জনের। কেননা ১০ নম্বরে কারো নাম-ঠিকানা কিছুই নেই। হতে পারে সেই শহীদের নাম-ঠিকানা না পেয়ে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। তবু যেহেতু কোন তথ্য নেই, তাই আমরা হিসেবে ৬০ জনই ধরবো।

২.
উপরিউক্ত ৬০ জনের তালিকার বাইরে আরো কিছু নাম আমরা হাতে পেয়েছি। আলেম লেখক হাবীবুল্লাহ সিরাজ লিখিত “শহীদনামা” বইয়ে শহীদগণের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। যাদের নাম অধিকারের তালিকায় নেই, বাছাই করে তাদের নাম পূর্বের ক্রমিক অনুযায়ী নিচে উল্লেখ করা হলো:
৬১৷ শুকুর মাহমুদ, সদর, ময়মনসিংহ;
৬২৷ নাজির, মতলব, চাঁদপুর;
৬৩৷ ওসমান গণী, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ;
৬৪৷ হাফেজ যায়েদ, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট;

৩.
০৬-০৫-২০১৩ তারিখে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তালিকা মতে যাদের নাম অধিকার ও শহীদনামার তালিকায় নেই তাদের নাম নিম্নে দেয়া হলো:
৬৫। সাইফুল ইসলাম, পিতা: মৃত হাশেম কন্ট্রাক্টর, হীরাঝিল, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ; পেশা: সেলসম্যান।
৬৬। পথচারী মাসুম (৩০) শিমরাইলে নিহত;
৬৭। মিজানুল হক, পেশা: ট্রাকের হেল্পার

সেইসাথে একই প্রতিবেদনে স্থানীয় লোকজনের বরাতে পরিপূর্ণ নিশ্চিত নয় এমন তিন জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে দুজন একই ব্যক্তি, যা নিম্নে দেয়া হলো:
৬৮। বাঁধন/বাদল(১৭), রাণীমহল, ডেমরা, ঢাকা;
দনিয়া কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র;
৬৯। খালেদ (২৮) ডগাইর, ডেমরা, ঢাকা;

পরবর্তীতে ০৬-০৫-২০১৬ তারিখে জাগো নিউজে “আজ সেই রক্তাক্ত ৬ মে” শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে উপরোল্লেখিত অনিশ্চিত তিন জন ব্যতিত একই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

৪.
উপরোক্ত তালিকাটি প্রকাশ করার পর কয়েকজন শহীদ পরিবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করে আমরা আপাতত একজনের নাম ঠিকানা তালিকাভুক্ত করছি।

৭০. মাওলানা আবু নোমান, পিতা: আব্দুল করিম, গ্রাম: মেসনিরপাড়, থানা: নাগেশ্বরী, জেলা: কুড়িগ্রাম।

৬ মে চট্টগ্রামে প্রতিবাদী মিছিলে থাকাবস্থায় মাথায় গুলি লেগে মারা যান। শহীদের স্ত্রী আমাদের এ তথ্য দেন। তিনি জানান, বিয়ের ৯ মাসের মাথায় মারা যান তার স্বামী মাওলানা আবু নোমান।

এভাবে নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। যারা প্রমাণসহ গ্রহণযোগ্য তথ্য দিতে পারবেন তাদের নাম-ঠিকানাই কেবল আমরা এখানে যোগ করব।

৫.
প্রথম আলোর এক রিপোর্টে বলা হয়- “রাজধানীর শাপলা চত্বরে গত ৫ মে মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ‘অসংখ্য ব্যক্তি নিহত’ হওয়ার দাবি করে আসছে হেফাজতে ইসলাম। তবে এখন পর্যন্ত ‘নিহত বা নিখোঁজ’ কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি সংগঠনটি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে যোগাযোগ করলে হেফাজতে ইসলামের নেতারা প্রথম আলোকে জানান, ‘নিহতদের’ একটি তালিকা প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। তবে তাঁদের তৈরি করা তালিকার একটি খসড়া বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির দুজন নেতা।… জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাঈনদ্দীন রুহি অধিকারকে তাঁদের খসড়া তালিকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধিকার একটি নিরপেক্ষ মানবাধিকার সংস্থা। তারা আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে, আমরা সহযোগিতা করেছি। তবে, তারা তাদের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য প্রকাশ করেছে।’…গত ৪ জুন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছিলেন, তাঁরা ৭৩ জন নিহত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। কিন্তু গতকাল এক নেতা এই সংখ্যা শতাধিক বলে দাবি করেন।”

তবে আমাদের কাছে (এই রিপোর্টারদ্বয়) এখনও পর্যন্ত উক্ত তিন মাধ্যমে ৭০ জনের তথ্য এসে পৌঁছেছে। প্রথম আলো কর্তৃক হেফাজত নেতাদের সাক্ষাৎকার অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছে আমাদের তালিকাটি চূড়ান্ত কিছু নয়। তদুপরি এর মধ্যেও কিছু ভুল থেকে যেতে পারে। কারো চোখে যদি এমন কোন ভুল ধরা পড়ে অবশ্যই আমাদের জানাবেন। আমরা সংশোধন করে নেব।

৬.
আপনার কাছে একটি আরজ। হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি। আপনার কাছে কি উপরোক্ত তালিকার বাইরে কারো নাম ঠিকানা আছে, যারা শাহাদত বরণ করেছেন হেফাজতের অবরোধ সংশ্লিষ্ট কোন ঘটনায়? থাকলে অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না। কেননা আমরা এই নামগুলো স্মরণ রাখতে চাই। বছরে অন্তত একবার হলেও এই নামগুলো পড়তে চাই। অন্তত তাদের নাম ধরে ধরে প্রত্যেকের উপর ঈসালে সওয়াব করতে চাই।

আসুন! আমরা সেই সময়ের সকল শহীদানের উপর স‌ওয়াব প্রেরণ করি। দয়াময় আমাদের তৌফিক দিন। আমীন!


লেখক পরিচিতি

ইলিয়াস সারোয়ার, দাওরায়ে হাদিস: দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম; পরিচালক: মারকাযুল খিদমাহ আল-ইসলামিয়্যাহ; নির্বাহী সম্পাদক: একুশে জার্নাল ডটকম।

মাহবুবুর রহমান, দাওরায়ে হাদীস: জামিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ, ঢাকা; অনার্স ও মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ): এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ; স্টাফ রিপোর্টার: একুশে জার্নাল‌‌‌ ডটকম।