অমানবিকতাই করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতাকে আরো তীব্র করে তুলবে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ১৮ ২০২০, ০৭:৫১

।। মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া ।।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখন বিশ্বব্যাপী। এটি একটি বৈশ্বিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রায় ২২০টি দেশ করোনায় আক্রান্ত। পরাশক্তিধর কিংবা দুর্বল কোনো দেশই এ থেকে মুক্ত নয়।

কিন্তু আমাদের দেশে এ কারণে এমন কিছু ঘটনা ঘটে চলেছে যা কেবল অমানবিকই নয়; শুনতেই গা শিহরিয়ে উঠে।

কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যে আচরণ করা হয় তা সত্যিই দুঃখজনক। এমনকি আক্রান্তহীন সদস্যদেরও একধরনের সামাজিক বয়কট করা হয়। যে বাসায় বা মহল্লায় তার বসবাস সেখান থেকে বিতাড়িত করা হয়। কেউ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তো কোনো কথাই নেই। কাফন-দাফন,জানাযা জটিল ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কোথাও কোথাও ভয়ে লাশ সড়কে, জঙ্গলে ফেলে দেয়ার কথাও শুনা যায়। কোথাও লাশ সামনে নিয়ে বিলাপ করতে দেখা যায়। থানা, পুলিশ, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থায় যোগাযোগ করেও কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যায় না। সরকার করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করতে কতই তৎপরতা দেখায়। কিন্তু আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যায় তাদের কাফন-দাফনের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে শুনা যায় না।

এক্ষেত্রে কিছু স্বেচ্ছাসেবি কওমী উলামায়ে কেরাম এগিয়ে না আসলে কি যে অবস্থা হতো তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন? মিরপুরে পাইপাড়ায় করোনায় আক্রান্ত এক ব্যক্তি তার মায়ের লাশ নিয়ে ১৪ঘন্টা অপেক্ষা করেছেন। থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে কোনো সহযোগিতা পাননি। তিনি নিজেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তার আত্মীয়-স্বজনরাও এগিয়ে আসেননি। অবশেষে কওমীদের মারকাজুল ইসলামীই এসে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

আমাদের দেশে বহু এনজিও রয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেবায় তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। তাদের কাজ কী? মানুষের জীবন বাঁচার লড়াইয়ের সময় তারা তৎপরতাহীন কেন?

বিপদাপদে সহানুভূতিশীল হওয়া অন্যতম মানবীয় বৈশিষ্ট্য। যত বেশি অমানবিকতার প্রকাশ ঘটবে ততো বেশি করোনা তীব্রতর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই আমরা মতো বেশি মানবিক হবো, ততো দ্রুত আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়াবান হবেন।


লেখক: পরিচালক, জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ, মিরপুর, ঢাকা; সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) ও আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ।