অনৈতিক প্রস্তাব, অতঃপর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে অপসারণ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ১৩ ২০২০, ১১:৩৯

মোঃইয়াসিন, সাভার(ঢাকা): সাভারে অবস্থিত গনস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ডে পরিচালিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শনিবার(১২সেপ্টেম্বর) ঢাকার ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল ভবনের মেজর এটিএম হায়দার বীরউত্তম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের এক জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা শনিবার প্রেস বিজ্ঞপ্তি’র মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে ট্রাস্টি বোর্ডের সকল সদস্যের সম্মতিক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক হোসনে আরা শাহেদ, অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভীন বানু উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জুমের মাধ্যমে জরুরী সভায় যোগ দেন ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ, ড. সালেহ্ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদ্দাচ্ছের আলী, ওয়ালিউল ইসলাম এবং শিরীন পারভীন হক।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ভুয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট দিয়ে ২০০২ সালের ৩ আগস্ট গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন, বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড তার আচার-আচরণ দেখে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় ট্রাস্টি বোর্ড গোপনে মোঃ দেলোয়ার হোসেনের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে তদন্ত করেন এবং জানতে পারেন তিনি মাস্টার ডিগিধারী বা গ্রাজুয়েটও নন। তিনি এইচএসসি পাস মাত্র। বায়োডাটায় ভুয়া মাস্টার ডিগ্রি দেখিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়কে ধোকা দিয়ে আসছেন। বিষয়টি টের পেয়ে রেজিস্ট্রার মোঃ দেলোয়ার হোসেন তার অফিসে রক্ষিত ব্যক্তিগত ফাইল গায়েব করে দিয়েছেন। এক পর্যায়ে দেলোয়ার হোসেনকে ভাউসারসহ যে কোন অনুমোদন, ব্যাংক চেকে স্বাক্ষরসহ সকল অফিসিয়াল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে। নূতন চেক সিগনেটরী নির্ধারণ করা হয় উপাচার্য্য ডা. লায়লা বানু ও একাউন্স এন্ড ফিন্যান্সের ডেপুটি ডিরেক্টর মো: আব্দুল কাদেরকে।

জানা যায়, মোঃ দেলোয়ার হোসেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রায় ২০ বছর কর্মরত রয়েছেন। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে যোগদান করে অন্যের জমি দখল, জমির ভুয়া দলিল তৈরী, মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে হয়রানী করা ও মারামারিতে পারদর্শিতা দেখিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজের স্থান পাকা পোক্ত করে নেন। তিনি নিজেকে এম এ ইন পলিটিক্যাল সাইন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পরিচয় দিয়ে অবস্থান উর্ধ্বে নিতে থাকেন। এভাবে গণস্বাস্থ্যে ২০ বছর চাকুরী করেন। যার মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উচ্চতর প্রশাসনিক পদেও বিশেষ করে পরিচালক প্রশাসন/নির্বাহী পরিচালকের পদেও দায়িত্ব পালন করেন।
মোঃ দেলোয়ার হোসেন একদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে প্রতারনা করে নিরাপত্তাপ্রহরী ইনচার্য থেকে উচ্চতর পদে থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারনা করেছেন।

এছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকাকালীন সময়ও নারী কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার নিয়ন্ত্রণে কর্মরত অনেক নারী যৌন নিপিড়নের শিকার হয়েছেন। তারা অনেকেই চাকুরী হারানো ও সামাজিকতার ভয়ে এসব প্রকাশ করতেন না।

আবার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের যৌন হয়রানীর বিষয়ও ইতিপূর্বে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ২৬ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছে যাতে রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন এক মহিলাকে প্রলোভন দেখানোমূলক রেকর্ডকৃত টেপ পাওয়া গেছে। রেজিস্ট্রারের এসব আচরণের কারণে অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েকে গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তার কুরুচিপূর্ন আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের ভর্তি অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।