অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে একটি সুপারিশমালা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ২৯ ২০১৯, ১৮:০৯

আবীর আহাদ 

মায়ানমার সামরিক বাহিনীর তাড়া খেয়ে  বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী বারো লক্ষ রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে । বিশ্বসম্প্রদায় তথা জাতিসংঘ বোধ হয় বিষয়টি সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে । অপরদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের মানবিক আশ্রয়ের কথা ভুলে গিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা অকৃতজ্ঞের সীমা ছাড়িয়ে এখন আমাদের দেশের দেশী-বিদেশি এনজিও ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সাথে হাত মিলিয়ে আমাদের মাটিতে জঙ্গি মহাসমাবেশ করে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছে যে, তারা কোনো অবস্থাতেই মায়ানমারে ফিরে যাবে না ! তারা জোর করে বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার কথা বলছে !

উপরন্তু তারা নানান মারণাস্ত্রে সজ্জিত হচ্ছে ! বাংলাদেশের স্থানীয় অধিবাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হত্যা ও হামলা চালাচ্ছে ! বাংলাদেশের মাটিতে মাদকসহ নানান অসামাজিক কর্মে লিপ্ত হচ্ছে ! তারা ছলেকলেকৌশলে এদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানান অপরাধকর্মের সাথে জড়িত হয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে । বাংলাদেশ সরকারসহ এদেশের মানুষের পক্ষে মানবিক ও ভব্যতার খাতিরে আর এতো বড়ো একটা অশিক্ষিত অসভ্য বর্বর ও বেয়াড়া সম্প্রদায়কে প্রতিপালন ও নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে । কিন্তু আমাদের নিজেদের দেশের নিরাপত্তা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে এর একটি তড়িৎ সমাধানে আসতেই হবে । এবং সেই সমাধানটি যেকোনো মূল্যে আমাদেরকেই করতে হবে ।

একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সচেতন নাগরিক হিশেবে আমি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে একটি সুপারিশমালা পেশ করছি । যথা :

(এক) আসন্ন জাতিসংঘের অধিবেশনে সব দেশের প্রতিনিধিদের কাছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের অবস্থান ও আমাদের দেশের রাজনৈতিক আর্থসামাজিক নিরাপত্তা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়টি তুলে ধরে, মায়ানমারকে তাদের নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত নেয়ার লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়ার সর্বদেশ সমন্বিত আল্টিমেটাম আদায় করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে;

 

(দুই) জাতিসংঘ রাষ্ট্রসমূহের আল্টিমেটাম আদায় করা সম্ভব না হলে বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের সাথে আলাপ-আলোচনা করে বাংলাদেশ সরকার মায়ানমারকেই একটি আল্টিমেটাম দিয়ে বলতে পারে যে, এতোদিনের মধ্যে তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে;

(তিন) মায়ানমার সরকার বাংলাদেশ সরকারের আল্টিমেটাম গ্রহণ না করলে, তখন এখানে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের সাত/দশ দিন সময় দিয়ে সরাসরি বলে দিতে হবে : যেপথে এসেছিলে সে-পথে পাড়ি জমাও ;

(চার) এতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে আমাদের দেশের নিরাপত্তা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে তিন দিক থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ধাওয়া দিয়ে এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে—-তাতে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেনো এবং

(পাঁচ) মায়ানমার যদি এ-স্তরে এসে বাংলাদেশের ওপর সামরিক অভিযান চালায়, তাহলে পূর্ব-থেকে প্রস্তুত রাখা আমাদের সামরিক বাহিনীকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলতে হবে ।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি । আমাদের সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণ রয়েছে । ফলে আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই । কারণ আমাদের ‘জয়বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ জাতীয় চেতনার কাছে মায়ানমার একটি শিশু । তবে আমরা কোনো অবস্থাতেই আগে মায়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাবো না । যেমন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করার পরই আমরা তাদেরকে প্রতিহত করেছিলাম । এ-কারণেই আমরা আমাদের সেই দুর্দিনে কতিপয় বন্ধু রাষ্ট্রসহ বিশ্বজনমত পেয়েছিলাম । এখানেও একই নীতি অবলম্বন করতে হবে ।

উপরোক্ত সুপারিশমালা আমার একান্তই ব্যক্তিগত চিন্তার ফসল । আমার থেকেও হয়তো আরো সমৃদ্ধ সুপারিশ বেরিয়ে আসতে পারে । হোক চুলচেরা বিশ্লেষণ—–

 

মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, গবেষক।