অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ০৯ ২০২০, ২৩:০৯

অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কে কোন দলের সেটি বড় কথা নয়। দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের আমরা ধরেই যাচ্ছি। ১৯৭৫ এর পরে যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারাই দেশে দুর্নীতির জন্ম দিয়েছে। তা এখন মহিরুহ হয়ে গেছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো অনিয়ম নিশ্চয়ই মানবে না। যে যতো বড়োই হোক তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, নেবো এবং এটা অব্যাহত থাকবে।

এসময় প্রধানমন্ত্রী মহামারি করোনা জয় করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলোকে সময়োপযোগী করা, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ, বন্যার পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তের কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ৮ম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সংসদ নেতা।

করোনায় ভীত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা শুনলেই মানুষের মৃত্যু ভয় পেয়ে বসে, ভয়কে জয় করতে হবে, ভয়কে জয় করতে হবে। হ্যাঁ মৃত্যু তো আছেই, মৃত্যু অবধারিত। তাই বলে মরার আগে মরব না। মরণকে জয় করতে হবে। করোনা জয় করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ওসানার বাংলা গড়ে তুলব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দুঃসময়টা থাকবে না। এখান থেকে সারা বিশ্ব মুক্তি পাবে, আমরাও মুক্তি পাব। দেশের জনগণকে বলব সবাই স্বাস্থ্যবিধি যেন একটু মেনে চলেন। নিজের সুরক্ষার জন্য যা কিছু করণীয় সেটা করতে হবে। মনে সাহস রাখতে হবে।

তিনি বলেন, যারা করোনা আক্রান্ত তাদেরও মনে সাহস রাখতে হবে। আমি যতদূর পারি সবার সঙ্গে একটু কথা বলি সাহস জোগাই। খোঁজ নেই চিকিৎসা ঠিকমত পাচ্ছে কি না? যারা করোনা রোগে আক্রান্ত আমরা চাই সবাই সুস্থ হয়ে আসুন। আমাদের সুস্থতার হার অনেক বেশি। অবশ্য যাদের অন্যান্য শারীরিক অসুবিধা আছে তারা বেশি মৃত্যুবরণ করছেন, কারো মৃত্যুই আমাদের কাম্য নয়। আমরা চাই সবাই সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা করোনা মোকাবিলায় একটি নীতিমালাও গ্রহণ করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকারি ব্যয় এক্ষেত্রে যদি বৃদ্ধি পায়, তা পাবে। এক্ষেত্রে যাতে বেশি কর্মসৃজন হয়। মানুষকে ঘরে বসে থাকতে না হয়। তারা যাতে কাজ পায় সেই ব্যবস্থা করবো। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আর্থিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করবো।

দুর্নীতি মহীরুহ হয়ে গেছে

করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র নষ্ট করে দিয়ে গেছে ১৯৭৫ এর পরে যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারাই। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য এরা মানুষকে দুর্নীতি শিখিয়েছে, কালো টাকা ধরে রাখতে শিখিয়েছে, ঋণখেলাপি শিখিয়েছে। তারা এই সমাজটাকে কলুষিত করে গেছে। মানুষ আগে যে আদর্শ নিয়ে চলতো, নীতি নিয়ে চলতো, দীর্ঘদিন এদেশে এই মিলিটারি ডিকটেটরশিপ মানুষের চরিত্র হরণ করেছে। কারণ তাদের অবৈধ ক্ষমতাটাকে নিষ্কণ্টক করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। তারা বছরের পর বছর দুর্নীতির বীজ বপন করেছে। তা মহীরুহ হয়ে গেছে।

যতই কাটেন, কোথা থেকে যেন আবার গজিয়ে ওঠে। তারপরও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কে কোন দলের সেটা বড় কথা নয়, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, অনিয়মে জড়িত যাকে যেখানে পাচ্ছি আমরা ধরে যাচ্ছি। ধরছি বলেই যেন আমরা চোর হয়ে যাচ্ছি। আমরা ধরার পর আমাদেরই দোষারোপ করা হয়। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। এর আগে তো দুর্নীতিটাই নীতি ছিল, অনিয়মটাই নিয়ম ছিল। সেভাবেই রাষ্ট্র চলেছে। কিন্তু আমরা আসার পর সেগুলো মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। যতটুকু পারি সেগুলো আমরা শুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি

পরিবেশগত কারণে বাংলাদেশে বন্যা নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনা তো আছেই। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় গেলো। এখন এলো বন্যা। ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলে কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এই বন্যার পানি নেমে এলে দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হবে। ইতোমধ্যে মধ্য অঞ্চলে বন্যা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। কাজেই আমার জানা আছে কখন কোন এলাকায় বন্যা হয়। এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোনও দুর্যোগ আসার পর যাতে ত্রাণের অপেক্ষা করতে না হয় তার জন্য আগাম ব্যবস্থা রেখে দিয়েছি। আমরা জেলায় জেলায় বরাদ্দ দিয়ে রেখেছি। দেশের প্রকৃত অবস্থা জেনেই ব্যবস্থা নেই মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে। মানুষের কষ্ট যাতে কমাতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রেখে পদক্ষেপগুলো নিয়ে থাকি। তিনি বলেন, জিনিসের দাম যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সেই ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছি। যেভাবেই হোক দেশের অর্থনীতি যেন গতিশীল থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

ডাক্তার ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ

সরকারপ্রধান বলেন, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য দুই হাজার ডাক্তার ও পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরও দুই হাজার ডাক্তারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। হেলথ টেকনোলজিস্ট ও অ্যাটেনডেন্ট পদে তিন হাজার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। টেস্ট করার জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন। তা পাওয়া খুবই কঠিন। অনেক প্রতিবন্ধকতা সহ্য করে মানুষের বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাদের। প্রথমে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরে আস্তে আস্তে মানুষকে সচেতন করা হলে তারা এগিয়ে এসেছেন। যেসব টেকনিশিয়ান কাজ করেছে আমি নির্দেশ দিয়েছি। নীতিমালার কিছু সমস্যা আছে। বলেছি নীতিমালা বড় বিষয় নয়। যারা দুঃসময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে, তাদের সবাইকে আমাদের দেখতে হবে।

পাটকল সময়োপযোগী করা হবে

অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী পাটকলগুলো বন্ধ করার কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, পাটকলের শ্রমিকদের আমরা মোবাইলের মাধ্যমে বেতন দিয়ে দিলাম। ২৫ হাজার শ্রমিকের সঙ্গে আরও আছে অনিয়মিত শ্রমিক। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বছরের পর বছর বেতন দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এভাবে একটি শিল্প চলতে পারে না। এই কারখানাগুলো সব থেকে পুরনো। সেই পঞ্চাশ-ষাটের দশকে তৈরি। এই শিল্পগুলো দিয়ে আসলে লাভ করা সম্ভব নয়। পাটের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। সেজন্য আমরা চাচ্ছি এটাকে নতুনভাবে তৈরি করতে। তিনি বলেন, পাট আমাদের অর্থকরী ফসল। আবার কৃষিপণ্য। আমরা পাটের জন্ম রহস্য আবিষ্কার করেছি। গবেষণা করে বিভিন্ন পাটজাত পণ্য আবিষ্কার করছি। পরিবেশগত কারণে সবাই সিনথেটিক পণ্য থেকে মুক্তি চায়। সেখানে পাট হচ্ছে বিকল্প। ফলে বিশ্বব্যাপী এ খাতে আমাদের বিশাল সম্ভাবনা রয়ে গেছে। কিন্তু এজন্য আমাদের কারখানাগুলোকে সময়োপযোগী করতে হবে। আধুনিক করতে হবে। নতুন করতে হবে। সেজন্য আমরা পাটের শ্রমিকদের মজুরির টাকাসহ সব পাওনা একবারে শোধ করে দেবো। এজন্য প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। তবে সব ক্যাশ টাকা দেবো না। ক্যাশ টাকা দিলে মেয়ের জামাই, ভাতিজা-আত্মীয় স্বজন সকলে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। ভাগ চাইবে। এজন্য আমরা অর্ধেকটা সঞ্চয়পত্র করে দেবো। যাতে তারা এখন মাসে যে বেতন পাচ্ছেন তার থেকে বেশি পাবেন। আর আমরা এই কারখানাগুলো নতুনভাবে করবো। আধুনিক প্রযুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের তৈরি করবো। পাটকল চালু হলে তারা নতুনভাবে চাকরি পাবে। পাট ও পাটজাত পণ্যের বিশ্ব বাজার ধরতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছি।