অনির্দিষ্টকালের জন্য শাবি বন্ধ ঘোষণা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ১৭ ২০২২, ০০:১৬

অনির্দিষ্টকালের জন্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ১২টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ নিয়েছেন উপাচার্য।

রবিবার (১৬ জানুয়ারি) সংঘর্ষের পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দেশে এমন ঘটনা বিরল। শিক্ষার্থীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এমন আচরণ করবে- এটা আমি আশা করতে পারিনি। তারা শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ করবে এটা চিন্তাই করিনি। ইতোমধ্যে আমরা এটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম। এরই মাঝে কেউ একজন গুলি করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতেই সংঘর্ষ তৈরি হয়।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় দুপুরে সিন্ডিকেট সদস্যদের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। এমনকি সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। কারণ ইতোমধ্যে দেশে করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের ওপর চলে গেছে। তবে অফিসিয়াল কাজ কিছুটা চলমান থাকবে।’

এর আগে, রাত ৮টার দিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে মূল ফটক তালাবদ্ধ করে রাখতে দেখা যায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে কোনও শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেয়নি প্রশাসন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাত পৌনে ৯টায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মূল ফটকের বাইরে জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ

সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনের ভেতরে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ রেখে বাইরে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিলে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করে বাসভবনে নিয়ে যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, পুলিশ ও শিক্ষার্থীসহ অর্ধশত আহত হন।

আহতদের উদ্ধার করে সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও সিলেটের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কোনও কারণ ছাড়াই পুলিশ অতর্কিতভাবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়। তবে পুলিশের দাবি, উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চড়াও হলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।

শিক্ষার্থীদের দাবি, ‘উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ওয়াজেদ আলী ভবনের ভেতর ঢোকেন। তখন নিরাপত্তাকর্মীরা সব গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাই বাইরে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে গেলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।’

পুলিশের দাবি, উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীরা চড়াও হন। তাই তাদের ছত্রভঙ্গ করতে চাইলে সংঘর্ষ তৈরি হয়।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, তিনিসহ পুলিশের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

অধ্যাপক জহিরের বিষয়ে উপকমিশনার জানান, পুলিশের গুলিতে তিনি গুলিবিদ্ধ হননি। ওই গুলি কারা ছুড়েছে তা তিনি জানেন না। অধ্যাপককে মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক নারী কনস্টেবলও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানান তিনি।