সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল: বিড়ম্বনা’র শিকার শিশু রিফাত
একুশে জার্নাল ডটকম
জুন ০৫ ২০২৩, ০৯:৫৯
পাঁচ বছর বয়সী শিশু রিফাত। জামালগঞ্জ উপজেলার লম্বাবাঁক পশ্চিমপাড়া’র আব্দুস ছোবহান তালুকদার ও লালমিয়া তালুকদার নূরানীয়া মাদ্রাসার শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী। ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা সে। সাবলীল উত্তর, দৃষ্টিভঙ্গি, কথোপকথন নজর কেড়েছে সবার। শিক্ষকের সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, এমনকি ভুল উত্তর হলেও করা, বাচনভঙ্গি ইত্যাদি অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা করেছে খুদে শিক্ষার্থী রিফাতকে। তবে রিফাতের এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট রীতিমত কাল হয়ে দাড়িয়েছে এখন।
সম্প্রতি রিফাতকে পাঠদানের সময় করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে ইংরেজি সাত দিনের নাম, জাতীয় ফল, মাছ, ফুলের নাম জানতে চান শিক্ষক। সেগুলোরই চমৎকার উত্তর দেয় রিফাত। কিছু উত্তর ভুল হলেও বলার সময় আত্মবিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগ মধ্যামের দর্শকের মুগ্ধ করেছে। এর পরেই শুরু হয়েছে বিড়ম্বনা।
নামে- বেনামে ফেসবুক ইউটিউব চ্যানেল তাকে নিয়ে রীতিমতো টানাহেড়ছা শুরু করেছে। মাদ্রাসার পাঠদান ও পরে সারাদিনই রিফাতকে নিয়ে ভিডিও রেকর্ড করছেন এসব চ্যানেলের মালিকরা। এদিকে থেকে পিছিয়ে নেই তার মাদ্রাসার পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক ক্বারী আব্দুল কদ্দুস। মূলত তার ফেসবুক থেকেই রিফাতকে ভাইরাল করা হয়। তিনিও এখন সারাদিন রিফাতকে নিয়ে ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করছেন। শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলছেন, ফেসবুক ও ইউটিউবাররা রিফাতকে বিভিন্ন বিতর্কিত প্রশ্ন করে তাকে মানসিক নির্যাতন করছে। এতে তার শিশু মনে প্রভাব পড়ছে।
সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা স্বপ্নডানা সংগঠনের প্রধান নির্বাহী জাহাঙ্গীর আলম বললেন, শিশুমনে ভুল কিছু শেখানো উচিৎ নয়। ভিডিও দেখেই বুঝা যায় রিফাত মেধাবী। এজন্য তাকে এমন কিছু শেখানো উচিৎ যা তার শিশু মনে কোনো চাপ পড়বে না।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে দর্শক ও ভিউ বাড়ানো জন্য হুমরি খেয়ে পড়েছে। সারাদিন বিভিন্ন বিতর্কিত প্রশ্ন করে তা ভিডিও রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এসব প্রশ্নে মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুটি।
এবিষয়ে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক ক্বারী আব্দুল কদ্দুস বলেন, সে ভাইরাল হবার পর থেকে বিভিন্ন ফেসবুক ইউটিউব চ্যানেলের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা মাদ্রাসায় আসতেছেন। রিফাতের ভিডিও করছেন। এতে তার মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। তিনি জানান, শনিবারও ২ জন ইউটিউবার ও ৩ জন সাংবাদিক পরিচয়ে রিফাতের ভিডিও করে নিয়েছে।
সুনামগঞ্জ শিশু ও মানবপাচার আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. হাসান মাহবুব সাদী বলেন, শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য প্রতিটি থানায় একজন অফিসার রয়েছে। এছাড়াও সমাজ সেবা অফিসও শিশুদের নিয়ে কাজ করে। এবিষয়টি নিয়ে তারা খোঁজ নিবে আশা করি।
জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র বর্মন বলেন, সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি শিশু রিফাতের ভিডিও দেখেছি। স্বাভাবিকভাবেই সে মেধাবী হওয়ায় সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়। কিন্তু এখন তাকে নিয়ে অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে রিফাত।
জামালগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনুকা ভৌমিক বলেন, একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। এটি যে আমার উপজেলায় জানতাম না। এবিষয়ে আগামীকাল খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।