ছাত্র আন্দোলনে শহিদ আয়াতুল্লাহর পরিবারের পাশে নাগরিক আলেমসমাজ
একুশে জার্নাল ডটকম
সেপ্টেম্বর ০১ ২০২৪, ১৯:০৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে শহিদ হওয়া মাদরাসা ছাত্র আয়াতুল্লাহর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে নাগরিক আলেমসমাজ।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সুনামগঞ্জে শহিদ আয়াতুল্লাহর পিতার সঙ্গে দেখা করে সহর্মিতা ও সমবেদনা জানান সংগঠনের সমন্বয়করা।
শহিদ পরিবারকে সমবেদনা জানাতে যান নাগরিক আলেমসমাজের প্রধান সমন্বয়ক লেখক ও সাংবাদিক নোমান বিন আরমান, মিশন ওয়ান মিলিয়নের প্রধান নির্বাহী ফায়যুর রাহমান, লেখক নাওয়াজ মারজান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী সিরাজ খান, মাওলানা মাহবুব খান ও শহিদ আয়াতুল্লাহর ফুফাতো ভাই মাওলানা ইলিয়াস বিন কাসেম। এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে পিতার হাতে নগদ অর্থ সহায়তার খাম তুলে দেওয়া হয়।
শহিদ আয়াতুল্লাহর পিতা সিরাজুল ইসলাম জানান, ৫ আগস্ট গাজীপুরের শফিপুরে অবস্থিত আনসার ভিডিপি একাডেমির সামনে গুলিবিদ্ধ হন তার ছোট ছেলে আয়াতুল্লাহ। বড় ভাই সোহাগ হুসাইনের সঙ্গে ওইদিন তিনি স্বৈরাচার হাসিনার পতনে বিজয় মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। মিছিলটি বিকেল পাঁচটার দিকে কালিয়াকৈরের মৌচাক পয়েন্ট থেকে আনসার একাডেমির কাছে পৌঁছলে এলোপাতাড়ি গুলি আসতে থাকে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন ছাত্রজনতা। দুই ভাই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সাড়ে ৫টার দিকে আয়াতুল্লাহর সঙ্গে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ কথা হয় সোহাগের। এরপর থেকে ফোন রিসিভ হচ্ছিলো না। কোথাও খোঁজ মিলছিলো না আয়াতুল্লাহর।
ছেলের সন্ধানে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর থেকে গাজীপুর ছুটে যান পিতা সিরাজুল ইসলাম। ধর্না দেন আনসার একাডেমিতে। সন্ধান চান ছেলের, জীবিত না হলে লাশটি অন্তত ফেরত চান। কোনো সহযোগিতা পাননি সেখান থেকে। ছুটে যান একের পর এক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। লাশের স্তুপে খুঁজতে থাকেন নিজের সন্তানকে। এমন দৃশ্য বর্ণনা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এরপর শূন্যহাতে বাড়িতে ফিরে আসেন।
দুই ছেলে, দুই মেয়ের জনক সিরাজুল ইসলাম জানান, আয়তুল্লাহর তার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। ছেলেকে বড় আলেম বানানোর ইচ্ছে ছিলো তাঁর। এরই মধ্যে লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি নূরানী মাদরাসায় কিছুদিন শিক্ষতা করেছেন। সময় লাগিয়েছেন তাবলীগেও। দরিদ্র পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে জুনে পার্টটাইম জব জুটিয়েছিলেন গাজীপুরের এক ইন্ডাস্ট্রিতে। ১ জুলাই যোগ দিয়েছিলেন সেখানে। পতিত ও পলাতক স্বৈরাচারকে রক্ষায় মারমুখী বাহিনীর গুলি তার সব স্বপ্ন রক্তে ভাসিয়ে দিয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত খবরের সূত্রে ১১ দিন পর (১৬ আগস্ট) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আয়াতুল্লাহর লাশের সন্ধান পান। সেখান থেকে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সহায়তায় লাশটি গ্রহণ করে গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার চামারদানী ইউনিয়নের জলুষায় দাফন করা হয়। ছেলের এমন নির্মম খুনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়েছেন সিরাজুল ইসলাম।